Advertisement
E-Paper

পায়রাটুঙ্গি বারেন্দ্রপাড়া কলেজ স্ট্রিট

এক ভিক্ষুককে মানতেন প্রথম শিক্ষাগুরু! কেমন ছিল ধনঞ্জয় ভট্টাচার্যর শৈশব-কৈশোরের সেই সব দিন?মা অন্নপূর্ণার কোলে সদ্যোজাত ধনঞ্জয়কে দেখে দাদামশাই বলেছিলেন, ‘‘জাতকের মুখাবয়বে অনেক সুলক্ষণ দেখতে পাচ্ছি। যদি বাঁচে, একদিন স্বনামধন্য কৃতী পুরুষ হবে।’’ ১৯২২ সালের ১০ সেপ্টেম্বর, রবিবার। হাওড়ার বারেন্দ্রপাড়ায় জন্ম ধনঞ্জয় ভট্টাচার্যের। ভট্টাচার্য পরিবারের আদিবাস ছিল হাওড়ায়। ওঁরা ছিলেন পায়রাটুঙ্গির জমিদার। পূর্বপুরুষের প্রচুর সম্পত্তি বংশানুক্রমে পান ধনঞ্জয়ের বাবা সুরেন্দ্রনাথ। সম্পত্তি নিয়ে শুরু হয় জ্ঞাতি-কুটুম্বদের সঙ্গে অশান্তি।

শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০০:০৩
ঠাকুর ঘরে

ঠাকুর ঘরে

মা অন্নপূর্ণার কোলে সদ্যোজাত ধনঞ্জয়কে দেখে দাদামশাই বলেছিলেন, ‘‘জাতকের মুখাবয়বে অনেক সুলক্ষণ দেখতে পাচ্ছি। যদি বাঁচে, একদিন স্বনামধন্য কৃতী পুরুষ হবে।’’
১৯২২ সালের ১০ সেপ্টেম্বর, রবিবার। হাওড়ার বারেন্দ্রপাড়ায় জন্ম ধনঞ্জয় ভট্টাচার্যের।
ভট্টাচার্য পরিবারের আদিবাস ছিল হাওড়ায়। ওঁরা ছিলেন পায়রাটুঙ্গির জমিদার। পূর্বপুরুষের প্রচুর সম্পত্তি বংশানুক্রমে পান ধনঞ্জয়ের বাবা সুরেন্দ্রনাথ। সম্পত্তি নিয়ে শুরু হয় জ্ঞাতি-কুটুম্বদের সঙ্গে অশান্তি। তাতে সুরেন্দ্রনাথ ওখানকার পাট গুটিয়ে চলে যান হাওড়ার আমতায়। ওঠেন ভাড়াবাড়িতে। বালির বাগানতলার বারেন্দ্রপাড়ায় জমি কেনেন।
সুরেন্দ্রনাথ চাকরি করতেন বিএনআর-এ। বড় ছেলে লক্ষ্মীকান্তও তাই। দু’জনেই এস্রাজ বাজাতেন। তাঁদের চোখ এড়িয়ে দুপুরবেলা এস্রাজে হাত পাকাতে গিয়ে ধরা পড়ে যান ধনঞ্জয়। তখন বয়স কতই’বা, সবে পাঁচ। এস্রাজ গেল। কিন্তু গলা থাকতে গান নেবে কে? মাঝিমাল্লার গান, বাউল-বোষ্টমের গান, কীর্তন, পালার গান, তরজা, পাঁচালি যখন যা পেয়েছেন গলায় ধরেছেন। আর ছিল মা অন্নপূর্ণার মিঠে গলার ঘুমপাড়ানি, ছেলেভুলানো যত গান।
মাত্র চার মাসের তফাতে সুরেন্দ্রনাথ-লক্ষীকান্ত দু’জনেরই অকালমৃত্যু হয়।
অন্নপূর্ণার তখন জেরবার দশা। এগারোটি সন্তান। সম্বল বলতে বালির জমি। ধনঞ্জয় তখন সাত বছর। পান্নালাল সাত মাসের মাতৃগর্ভে। এক-এক দিন এমনও গেছে, ঘরে খাবার-আনাজপাতি বলতে কিছু নেই। মাঠঘাট থেকে গাছগাছালি কুড়িয়ে অন্নপূর্ণা ফুটিয়ে খেতে দিয়েছেন ছেলেমেয়েদের। নিজে সেই ফোটানো জলটুকু মুখে দিয়েছেন।
ধনঞ্জয় ছিলেন মা বলতে অজ্ঞান। মা একাদশী করবেন, উপোসি থাকবেন, তা’ও তার সয় না। ওই সাত বছর থেকে মায়ের সঙ্গে ছেলেরও একাদশী শুরু হল।
পড়াশুনো করতেন রিভার্স টমসন স্কুলে। পরে যার নাম হয় শান্তিরাম স্কুল।
মেধাবী। পরীক্ষায় বরাবর ফার্স্ট, না হয় সেকেন্ড। কিন্তু টাকাপয়সার তখন এমন টানাটানি, পড়া বন্ধ হয়ে যায় আরকী! মাস্টারমশাইদের মধ্যে খুব ভালবাসতেন সুধাংশু স্যার। তাঁর চেষ্টায় স্কুলের মাইনে মকুব হল। ম্যাট্রিক পরীক্ষা। তখন আবার ফি দেওয়ার পয়সা নেই। শিক্ষকরাই চাঁদা তুলে ধনঞ্জয়ের ফি দিয়ে দিলেন।

সুধাংশু স্যারেরই উদ্যোগে প্রথম গান শিখতে যাওয়া। স্যার সাইকেলে চাপিয়ে ছাত্রকে নিয়ে গান শেখাতে যেতেন উত্তরপাড়ায়।

এর পর একে একে ধনঞ্জয়ের গানজীবনে শিক্ষক হয়ে আসেন অনেকে।

কিন্তু গানের প্রথম গুরু কে, বললেই বলতেন, ‘‘বাড়ির সামনে গান গেয়ে ভিক্ষা করছিল এক ভিক্ষুক। ‘একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি’। ওই আমার প্রথম শিক্ষাগুরু। অনেক পরে ‘ক্ষুদিরাম’ ছবিতে গেয়েছিলাম ওই গান। অনেক প্রশংসা পেয়েছি। অর্থ পেয়েছি। কিন্তু গুরুকে আমার কিছুই দেওয়া হয়নি।’’

’৪৫ সালে ধনঞ্জয় বিয়ে করেন রেখাদেবীকে। শ্বশুরমশাইয়ের হোটেলের ব্যবসা। কলেজ স্ট্রিটের কাছে সেই হোটেল। এক সময় তারই দেখাশোনা করতে রেখাদেবীকে চলে আসতে হয় কলকাতা। সঙ্গে ধনঞ্জয়কেও।

’৪৮ থেকেই শুরু হয় ধনঞ্জয় ভট্টাচার্যর কলকাতা-জীবন।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy