Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বেবো বলল তৈমুর যেন ক্রিকেট খেলে

বহু দিন বাদে মুখ খুললেন রণধীর কপূর। শুনলেন সায়ন আচার্য দক্ষিণ মুম্বইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হসপিটালের করিডরে দাঁড়িয়ে তখন ক্ষোভে ফুঁসছে সেফ।সেফ আলি খান।ওর পাশে দাঁড়ানো মেয়েটির চোখও মোবাইলে। বারবার টুইটারে চোখ রাখছে, আর বিরক্তি ফুটে উঠছে প্রতি মুহূর্তে। করিশ্মা কপূর।

রণধীর কপূর

রণধীর কপূর

শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:০১
Share: Save:

দক্ষিণ মুম্বইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হসপিটালের করিডরে দাঁড়িয়ে তখন ক্ষোভে ফুঁসছে সেফ।

সেফ আলি খান।

ওর পাশে দাঁড়ানো মেয়েটির চোখও মোবাইলে। বারবার টুইটারে চোখ রাখছে, আর বিরক্তি ফুটে উঠছে প্রতি মুহূর্তে। করিশ্মা কপূর।

প্রথম জন আমার জামাই। আর দ্বিতীয় জন বড় মেয়ে।

২০ ডিসেম্বরের সকাল সেটা। মিনিট পনেরো আগেই ড. রুস্তম পুনাওয়ালা, আমাদের খবরটা জানিয়েছেন। একটি ফুটফুটে ছেলের জন্ম দিয়েছে আমার ছোট মেয়ে বেবো। করিনা কপূর খান!

অথচ হাসপাতালের করিডরে দাঁড়িয়ে মনে হয়েছিল অসম্ভব চাপা একটা পরিবেশে রয়েছি যেন। এটা তো আমাদের উৎসবের সময়। পরিবারের নতুন সদস্যকে নিয়ে আনন্দে মাতার সময়। অথচ....!

একটু আগেই টিভি আর সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে রটে গেছে যে, সদ্যোজাত শিশুর নাম রাখা হয়েছে তৈমুর। এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই সমালোচনার ঝ়ড়। এক দল উগ্র ভক্তিবাদী সদ্যোজাত শিশুর মৃত্যুকামনাও করে ফেললেন!

ভাবা যায়!

মাঝে মাঝে মনে হয়, সত্যিই কোন সময়ে বাস করছি আমরা? যখন সেফ আমাদের জানাল যে, ও ছেলের নাম রাখতে চায় তৈমুর, আমরা সবাই একবাক্যে সায় দিয়েছিলাম। কেনই বা বারণ করব?

একজন বাবা যদি নিজের ছেলের কোনও নাম রাখতে চায়, সেটুকু স্বাধীনতা তো তার আছে। নাকি এই উত্তপ্ত সময়ে, সেটুকুও আর নেই আমাদের হাতে?

বিশ্বাস করুন, সেদিন আমি আর ভাই চিন্টু (ঋষি কপূর) বেশ কিছুক্ষণ ভাবছিলাম যে, এই পরিস্থিতিতে কী ভাবে করিনাকে সামলানো যায়!

চিন্টু ছাড়া আমরা কেউই ফেসবুক বা টুইটারে নেই। তবু, খবর তো পৌঁছেই যায়। কিছুক্ষণের মধ্যে একটা কড়া টুইট করল চিন্টু। কিন্তু তাতে সমালোচনা আর আক্রমণ বাড়ল আরও।

এখন মনে হয়, ভাগ্যিস, সেফ আর ভাইপো রণবীর (কপূর) ছিল। ওরাই তো বেবো-র পাশে থেকে ওকে আনন্দে রেখেছিল। ওকে বুঝতেও দেয়নি, বাড়িতে কী গেছে! পাশে ছিলেন ড. পুনাওয়ালাও। ঘটনাচক্রে ওঁর হাতেই জন্ম করিশ্মা ও করিনার।

ইতিমধ্যেই দু’ সপ্তাহ পার। এখনও মানতে পারছি না স্রেফ নাম পছন্দ হয়নি বলে কিছু লোক এক সদ্যোজাত সন্তানের মৃত্যু কামনা করছে! এবং, আমি নিশ্চিত, এই লোকগুলো জানে না যে আরবি ভাষায় তৈমুর শব্দের অর্থ হল ইস্পাত।

কিন্তু ওই যে, অপছন্দের নাম!

ব্যস, নেমে পড়ো যুদ্ধে...!

তৈমুরকে কোলে নিয়ে বাবা-মা

এত কিছুর পরেও ছেলেকে বেশ ভাল ভাবেই সামলাচ্ছে বেবো। এখনও শ্যুটিং শুরু করেনি, এবং নিজেই সব কাজ করছে যাতে ছোট্ট তৈমুরের কোনও অসুবিধা না হয়।

ছুটি নিয়ে সেফও এখন বাড়িতে। ছেলের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছে।

আর, আমরা বুড়ো দাদু-দিদারা রোজ সন্ধেয় নতুন নতুন খেলনা নিয়ে পৌঁছে যাচ্ছি নাতির সঙ্গে সময় কাটাতে। পৌঁছে যায় সেফের মা শর্মিলা (ঠাকুর) ও বোন সোহাও।

আমাদের সঙ্গে প্রায় রোজই তাদের ‘টিমু’কে দেখতে যাচ্ছে
আমার বড় মেয়ে করিশ্মার মেয়ে শামাইরা ও ছেলে কিয়ান। আজকাল ওদেরও যে একজন নতুন বন্ধু হয়েছে!

দিন দুয়েক আগে তৈমুরের সঙ্গে খেলতে খেলতে তো বেবোকে বলেই ফেললাম— ‘‘ও তাড়াতাড়ি বড় হয়ে গেলে, তিন নাতি-নাতনির সঙ্গে খেলতে বেরোব।’’

শুনে বেবো বলল, ‘‘দেখো যেন ক্রিকেট-টিকেট খেলে।’’

উত্তরটা শুনে আমি আর পাশে বসা শর্মিলা না হেসে পারলাম না। আসলে এটাই তো সত্যি। ওর দাদু যখন দেশের অন্যতম সফল টেস্ট অধিনায়ক মনসুর আলি খান পটৌডি, তখন সে যে খেলা ভালবাসবে এটা তো স্বাভাবিক।

তবে যাকে নিয়ে এত আলোচনা তার বয়স এখন আঠেরো দিন। কিন্তু ওই যে, দাদু-দিদিমাদের আর তর সয় না! সে দিন করিনার বাড়িতে যাওয়ার পথে ভাবছিলাম, কী করে পারলাম ঝড়টা সামলাতে?

আসলে, এর পুরো কৃতিত্বটাই পরিবারের। আমরা সবাই যে ওয়ান বিগ ফ্যামিলি। না হলে দেখুন না, যে ভাবে আমাদের আক্রমণ করা হয়েছিল, সেটা এড়ানো তো খুব একটা সহজ ছিল না। তবু, আমরা সবাই মিলে ঝড়টা সামলে দিয়েছি।

কারণ যে শিশুর দাদু মনসুর আলি খান পটৌডি, আর আরেক বড় দাদু রাজ কপূর, তার তো এই সমালোচনা প্রাপ্য নয়।

সেদিন দেখলাম, আমাদের সঙ্গে খেলতে খেলতেই হঠাৎ ঘুমিয়ে পড়েছে তৈমুর। ওই ছোট্ট ছেলেটা জানেও না, এই ক’দিন আগে তাকে নিয়েই কী সমালোচনার ঝড় বয়ে গেছে দেশ জুড়ে! ঘুমের মধ্যে ওর মুখে তখন এক অদ্ভুত প্রশান্তি।

তাড়াতাড়ি বড়় হও তৈমুর।

ক্রিকেটার বা অভিনেতা, যাই হও না কেন বড় মানুষ হোয়ো।

ভাল থাকো বেটা...

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Randhir Kapoor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE