Advertisement
E-Paper

বন্দি নয়, মুক্তি

ঠিকানা মানসিক হাসপাতাল। রোগীর সংখ্যা দশ। তাঁদের মধ্যে কেউ অধ্যাপক, কেউ বা আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলেন প্রেমে বিফল হয়ে। তবে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অবশ্যই দশ নম্বর। যিনি নাট্যকর্মী, নাটকই যার প্রাণ। প্রতিবন্ধকতায় নিজের প্রতিভা সঠিকভাবে প্রকাশ করতে পারেননি। সেই যন্ত্রণায় কখনও হলে আগুন লাগিয়ে দিয়েছেন, কখনও বা দর্শকদের কামড়ে দিয়েছেন। তাই সমাজের চোখে তিনি পাগল।

শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৫ ০০:০৩
কৌশিক করের ‘নাটক ফাটক’-এ। লিখছেন পিয়ালী দাস

কৌশিক করের ‘নাটক ফাটক’-এ। লিখছেন পিয়ালী দাস

ঠিকানা মানসিক হাসপাতাল। রোগীর সংখ্যা দশ। তাঁদের মধ্যে কেউ অধ্যাপক, কেউ বা আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলেন প্রেমে বিফল হয়ে। তবে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অবশ্যই দশ নম্বর। যিনি নাট্যকর্মী, নাটকই যার প্রাণ। প্রতিবন্ধকতায় নিজের প্রতিভা সঠিকভাবে প্রকাশ করতে পারেননি। সেই যন্ত্রণায় কখনও হলে আগুন লাগিয়ে দিয়েছেন, কখনও বা দর্শকদের কামড়ে দিয়েছেন। তাই সমাজের চোখে তিনি পাগল।
‘কলকাতা রঙ্গিলা’ প্রযোজিত ‘নাটক ফাটক’ নাটকের পরিচালক ও নির্দেশক কৌশিক কর চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছেন সমাজের সেই ব্যাধি। যেখানে উচ্চাশার পারদ যেমন চড়ছে তেমনই রাষ্ট্রব্যবস্থার নানা অনিয়ম, দুর্নীতি-অবিচারের নানা প্রসঙ্গ তুলে এক কঠিন প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন দর্শকদের। বুদ্ধিদীপ্ত বিষয়ভাবনা এবং নির্দেশনায় এই নাটক তাই সহজেই দর্শকদের কাছে ভূয়সী প্রশংসা পায়।
একাধিক ভূমিকায় এ নাটকে দেখতে পাওয়া যায় কৌশিককে। কখনও তিনি গাইছেন, সালসা নাচছেন লৌকিক আঙ্গিকে, মাউথ অরগান বাজাচ্ছেন, গিটার বাজাচ্ছেন। সংলাপের মাধ্যমে এবং শরীরী অভিনয়ে দর্শকদের ভাবাচ্ছেন, কখনও বা মেঘনাদবদধ কাব্যের নির্বাচিত অংশের উপস্থাপনা করছেন। মূল নাটক কেন কেস-এর বিখ্যাত উপন্যাস ‘ওয়ান ফ্লু ওভার দ্য কাক্কু’স নেস্ট’ অবলম্বনে হলেও তিনি শুধু হাসপাতালের চলনটাই নিয়েছেন। নাটকের সংলাপ এবং বিষয়বস্তুর মধ্যে কৌশিকের নিজস্বতার পরিচয় পাওয়া যায়। যা নাটকে নতুনত্ব বয়ে আনে। কখনও তিনি শেক্সপিয়র এবং রবীন্দ্রনাথের চিন্তা-ভাবনার মূল সুরকে এক বিন্দুতে মিলিয়ে দেন। কখনও মিলে মিশে একাকার হয়ে যায় পাগল এবং বিশু পাগল। হাসপাতালের রুদ্ধ কপাট ভাঙার অনুষঙ্গে এসে পড়ে ‘অচলায়তন’এর প্রসঙ্গ। সমস্ত নাটকের চলন যেন কবিতার মতো। কী আছে এই নাটকে?

এখানে একটি কেবিনে মানসিক রোগী বা জনগণকে ওষুধ গেলানো হয়। আর ডাক্তারের কেবিন হয়ে যায় বিচারকক্ষ। রোগীদের চিকিৎসা চলতে থাকে, পরক্ষণেই সেখানে বিচার চলে। যেখানে সর্বদা কড়া প্রহরায় রত পুলিশ বা বয়রা। রয়েছেন ম্যাডাম নামে একজন সর্বনিয়ন্ত্রকও। যার আদেশ অমান্য করার সাহস কারও নেই।

ব্যতিক্রম দশ নম্বর। যিনি বিদ্রোহ ঘোষণা করেন এই তথাকথিত সিস্টেমের বিরুদ্ধে। সে বাকি রোগীদেরও এই কারাগার ভেঙে পালিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখান। একদিন তাদের আচরণও হয়ে ওঠে সুস্থ মানুষের মতো। আর তখনই বিপত্তি। বিরুদ্ধাচরণের কারণে দশ নম্বরকে শক দেওয়া হয়, তার মস্তিস্ককে মেরে ফেলা হয়। যদিও সে বুঝেছিল এ লড়াই বহু দিনের, কয়েক প্রজন্মের। তাই তার মেয়াদ ফুরিয়ে আসার আগেই অন্য ম্যানিকুইনদের চেতনাকে জাগাতে চেষ্টা করেন। সফলও হন। এখানেই কৌশিক হিরোইজমকে অস্বীকার করেন। এত দিন দশ নম্বরই ছিল এই অচলায়তনের নানা পরিবর্তনের কান্ডারি।

সমস্ত মঞ্চটাকেই কৌশিক ব্যবহার করেছেন নাটকে। বন্দি মানুষগুলোর অস্বস্তি, যন্ত্রণা ছড়িয়ে পড়ে দর্শকদের মধ্যেও। কিছু দৃশ্য বিশেষভাবে নজর কাড়ে।

৩১ ডিসেম্বর রাতে নাটক দেখতে যাবে বন্দিরা। হাসপাতালের মূল ফটকের তালা খোলার দৃশ্যরচনা মনে রাখার মতো। শিকল ভাঙার সময় বন্দিদের মানসিক অভিব্যক্তি ও উল্লাসের দৃশ্য নাড়িয়ে দেয় দর্শকমনকে। তারাও যেন এই বন্দি মানুষগুলোর মতো মুক্তির স্বাদ পায়।

ম্যাডামের চরিত্রটিও (অঙ্কিতা মাঝি) মনে থাকার মতো। একজন নারী হয়েও যার আচরণ লৌহকঠিন পুরুষের মতো। দু’নম্বর, (প্রিয়ঙ্ক) আধা ভিতু আধা সাহসী এক মানুষ। যে স্বপ্ন দেখলেও ভয়ে গুটিয়ে থাকে নিজের মধ্যে। এবং পাঁচ নম্বরের (রাহুল সেনগুপ্ত) নীরব অভিনয় এবং এক সময় জেগে ওঠা আলাদাভাবে উল্লেখ্য।

এছাড়াও অভিনয়ে ছিলেন—পায়েল (কুয়াশা বিশ্বাস), ডাক্তার (অরিজিৎ), চার নম্বর (পলাশ কর্মকার), এক নম্বর (সমীরণ সরকার) প্রমুখ।

নারী-রূপে বাঘিন

পিনাকী চৌধুরী

সৃজনী প্রযোজিত নাটক ‘বাঘিন’ অরণ্য সংরক্ষণ নিয়ে নির্মিত হলেও, সৃষ্টি-স্থিতি-লয়, মূলত নারী শক্তির ওপরই নির্ভরশীল। সেটাই নাটকের মূল বক্তব্য। তিলক (তিলু) তার ভাই হারিয়ার বিয়েতে আমন্ত্রণ জানায় কিছু শহুরে আদবকায়দায় শিক্ষিত মানুষকে। কিন্তু গ্রাম্য জীবনযাপনে অভ্যস্ত তিলুকে সেই শহুরে মানুষজন যখন প্রস্তাব দেয় যে, অরণ্যের গাছ-গাছালি তাদের কেটে দিতে এবং তার বিনিময়ে তারা তিলুকে মোটা টাকা দেবে, যা দিয়ে সে গাড়ি-বাড়ি কিনতে পারবে। কিন্তু তিলু এই প্রস্তাব মানতে নারাজ। তার পরিবারের লোকজনের সঙ্গে শহুরে মানুষদের সংঘাত বাধে। তারপর আবর্তিত হতে থাকে নাটকের বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহ। মেরে ফেলা হয় হাড়িয়াকে, কিন্তু দোষ চাপানো হয় একটি বাঘিনির ওপর। শেষে দেখা যায়, বাঘিনির কামড়ে হারিয়ার মৃত্যু হয়নি। শহুরে আগন্তুকরাই তাকে খুন করেছে।

তিলুর ভূমিকায় লিটন দে প্রাণবন্ত। যথাযথ হারিয়া অরুণ দত্ত এবং ম্যাডামের ভূমিকায় সোনালী বন্দ্যোপাধ্যায়, ভোলার ভূমিকায় প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। নির্দেশনায় অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়।

মায়ের মন

‘অবিচ্ছেদ্য’ নাটকে

ইছাপুর আলেয়া-র নাটক ‘অবিচ্ছেদ্য’ বেশ নতুনত্বের দাবি রাখে। রচনা সঙ্গীতা চৌধুরী ও নির্দেশনায় শুভেন্দু মজুমদার। নাটকের বিষয়বস্তু মন ছুঁয়ে যায়। সন্তানকে নিয়ে দুই মায়ের অর্ন্তবেদনা। অধ্যাপক স্বামী-র স্ত্রী মৌ বার বারই সন্তান ধারণে ব্যর্থ হয়। শেষে চিকিৎসকের পরামর্শে সারোগেট মাদারের সাহায্য নেওয়া হয়। দরিদ্র চাষি পরিবারের লক্ষ্মীর গর্ভেই প্রতিপালিত হতে থাকে ওই পরিবারের ভ্রূণ। শেষমেশ সুস্থ সন্তানও প্রসব করে লক্ষ্মী। শর্ত অনুসারে সেই সন্তানের উপর আর কোনও অধিকার নেই লক্ষ্মীর। এই নিয়েই টানাপড়েন। অভিনয়ে প্রত্যেকেই যথাযথ।

চারটি ট্র্যাজেডি

গোপা বন্দ্যোপাধ্যায়

বাংলা থিয়েটার কৃষ্ণনগর-এর নাটক (শেক্সপিয়র)-এর চারটি ট্র্যাজেডির কয়েকটি দৃশ্য মঞ্চস্থ হল। পরিবেশনায় পরিচালক স্বপনবরণ আচার্যের প্রয়াস সফল। মঞ্চে অভিনীত চরিত্র সৃষ্টির জন্য ঠিক যতটুকু স্থানের প্রয়োজন, সেই স্বাচ্ছন্দ্যেই বিশ্বাসী নাট্যপরিচালক। উন্নেতা বিশ্বাস-এর সাবলীল অভিনয় প্রশংসার দাবি রাখে।

natok fatok drama review abp patrika latest news latest drama review kaushik kar kolkata rangeela piyali das drama on mental patients mental patients psychiatric patients
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy