প্রতীকী ছবি।
মেয়ে রজঃস্বলা? তার মানে তো অপবিত্র। তাকে দূরে সরিয়ে রাখতে হবে সব কিছু থেকে। খাওয়ার জিনিস, পুজোর জিনিস ছুঁয়ে ফেললেই গেল গেল! রজঃস্বলা মেয়েকে তাই ‘ছৌপদী’ (ঋতুস্রাব চলার চারদিন) মেনে নির্বাসিত করা হয়েছিল গোয়ালঘরে। এমনটা তো হয়েই থাকে। নেপালি হিন্দুদের এ তো প্রচলিত প্রথা। পরিবারের নির্দেশ মেনেই ঘোর বর্ষায় গোয়ালঘরে ঠাঁই নিয়েছিল ১৯ বছরের তুলসী শাহি। সেখানেই ওঁত পেতে বসেছিল মৃত্যুও। কুসংস্কারের শিকার হয়ে গোয়ালঘরের অন্ধকারের সাপের কামড়ে প্রাণ দিতে হল তাঁকে।
ঋতুস্রাব অপবিত্র, আজও লজ্জায় পড়ছে ভারতীয় মেয়েরা, কী বলছে সমীক্ষা
নেপালের এই প্রথা ২০০৫ সালে বেআইনি ঘোষণা করা হলেও এখনও পশ্চিম নেপালে যথেষ্ট প্রকাশ্যেই মেনে চলা হয় এই প্রথা। স্থানীয় মেয়র সূর্য বাহাদুর শাহির বক্তব্য অনুযায়ী, মাথা ও পায়ে সাপ ছোবল দেওয়ার পরও কুসংস্কারাচ্ছন্ন পরিবার রজঃস্বলা মেয়েকে হাসপাতালে না নিয়ে গিয়ে বাড়িতেই টোটকা চালিয়ে যায়। অবস্থা খারাপ হতে থাকায় স্থানীয় একটি ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হলেও সেখানে অ্যান্টিভেনিন চিকিত্সার সুযোগ ছিল না। সাত ঘণ্টা পর অবশেষে মারা যান তুলসি।
তুলসিই প্রথম নয়। এই ভাবে অন্ধবিশ্বাসের বলি হতে হয়েছে বহু মেয়েকেই। ডিসেম্বর মাসেই চৌপথীর গোয়ালঘরের রাতে ঠান্ডা সহ্য না করে আগুন জ্বালিয়ে ধোঁয়ায় দমবন্ধ হয়ে প্রাণ গিয়েছিল ১৫ বছরের কিশোরীর রোশনি তিরুয়ার। জুন মাসেই ২১ বছরের এক তরুণীর এ ভাবেই চৌপথীর সময় মৃত্যু হওয়ার খবর সামনে আসতেই চৌপথী প্রথা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী পুষ্পা কামাল দাহাল। সেই সব নিষেধাজ্ঞাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই পালিত হয়ে চলেছে চৌপথী
২০১৫ সালে নেপালের মানবাধিকার মন্ত্রকের রিপোর্ট বলছে, এখনও নেপালের মধ্য-পশ্চিম অঞ্চলে ১৫-৪৯ বছর বয়সী মহিলাদের ৫০ শতাংশই চৌপথী প্রথা মেনে চলেন। ঋতমতী মেয়ে অপবিত্র। কোনও রকম খাবার, পরিবারের সদস্যদের ছুঁলে তারাও অপবিত্র হয়ে যাবে। এমনকী, বাড়ির পোষ্য গরু, ছাগলদের ছুঁলে তাদের দুধও হয়ে যাবে অপবিত্র।
ঋতুমতী বলে ঠাঁই হল গোয়ালঘরে! দমবন্ধ হয়ে মৃত্যু কিশোরীর
একবিংশ শতাব্দীতে এসেও আজও ঋতুস্রাবের সময় এ ভাবেই মেয়েদের অচ্ছুত্ করে রাখার প্রক্রিয়া পালন করে চলেছে কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজ। কোথাও শিক্ষার আলো না পৌঁছনো, কোথাও সমাজের চোখরাঙানির ভয়ে মেয়েরাও নীরবেই মেনে চলতে বাধ্য চলছে কুসংস্কার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy