পার্ক স্ট্রিটে সময় কাটাতে চাইলে অনেক রকম মজার মজার অভিজ্ঞতা হতে পারে আপনারও।
সাধারণ কলকাতাবাসীর কাছে কলকাতার পার্ক স্ট্রিট অঞ্চলটি এখনও, এই একুশ শতকেও সাহেবপাড়া হিসেবে পরিচিত। ইউরোপীয় ধাঁচের জীবনচর্যা, খাওয়াদাওয়া, পানীয়, পোশাক-আশাক, গানবাজনা ইত্যাদি যেন শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এই জায়গার সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে রয়েছে। এশিয়াটিক সোসাইটির থেকে শুরু হয়ে ভিতরের রাস্তা ধরে হাঁটতে থাকলে একের পর এক বিখ্যাত রেস্তরাঁ, বইয়ের দোকান, গয়না বা ছবির দোকান চোখে পড়বে। সেই সব কিছুই যেন একটুখানি অন্য রকম। কলকাতা শহরের কেন্দ্রস্থলেই খোঁজ মিলবে অন্য এক কলকাতার। পার্ক স্ট্রিটে সময় কাটাতে চাইলে অনেক রকম মজার মজার অভিজ্ঞতা হতে পারে আপনারও।
পুরনো বই কিনুন
কলেজ স্ট্রিট বা গড়িয়াহাটের পুরনো বইয়ের দোকানের কথা কমবেশি আমাদের সকলের জানা। অথচ বই যে পার্ক স্ট্রিটেও মেলে তা খেয়াল রাখি না আমরা অনেকে। ফ্লুরিজের সামনে থেকে ওই গোটা ফুটপাথ জুড়ে বিভিন্ন বিক্রেতা বইয়ের সম্ভার নিয়ে বসেন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত। এমনকি, অক্সফোর্ড বুক স্টোরের কাছাকাছিও আপনি পাবেন বইয়ের এমন অনেক দোকান যেখান থেকে সস্তায় পেয়ে যেতে পারেন অনেক দুষ্প্রাপ্য বই।
ফ্লুরিজের সামনে থেকে ওই গোটা ফুটপাথ জুড়ে বিভিন্ন বিক্রেতা বইয়ের সম্ভার নিয়ে বসেন
শুনুন বাস্কার
প্রচুর হলিউডের ছবিতে পথের ধারে বাদ্যযন্ত্র নিয়ে গানবাজনা করতে দেখা যায় বিভিন্ন মানুষকে। এই একই দৃশ্য আপনার চোখে পড়বে পার্ক স্ট্রিটের নানা জায়গায়। বিশেষ করে কোনও ছুটির দিন, ঝলমলে আবহাওয়ায় আপনি এই অঞ্চলে হানা দিলে পরিচয় হয়ে যেতে পারে এই সব সঙ্গীতশিল্পীদের সঙ্গে। বাস্কার আসলে ব্যাগপাইপের মতো একটি বাদ্যযন্ত্র যা এঁরা বিক্রিও করেন সমঝদার ক্রেতাদের কাছে।
গিগলস-এ ফিরে দেখুন শৈশব
গিগলস এই কলকাতার একটি বিশেষ প্রতিষ্ঠান যা এক সময় তরুণদের আকৃষ্ট করেছিল। এখানে এখনও নব্বই দশকের নস্ট্যালজিয়া আপনি অনুভব করতে পারবেন। বিভিন্ন ধরনের গ্রিটিং কার্ড, বোর্ড গেম, স্নো গ্লোব এবং ফ্রিজ ম্যাগনেটের মতো নানা জিনিস পাওয়া যায় এখানে। মাঝখানে কিছু দিন এই দোকান বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু গত বছর থেকে ফের চালু হয়েছে।
আপনি যদি ইতিহাসপ্রেমী হন, তবে পার্ক স্ট্রিটের কবরস্থানটি দেখা বিশেষ প্রয়োজনীয়
দ্য ইন্ডিয়া হবি সেন্টার
কলকাতার অনেক মানুষ স্ট্যাম্প বা কয়েন সংগ্রহ করেন। পুরনো মুদ্রা, স্ট্যাম্প এবং পুরনো মডেলের গাড়ি বা উড়োজাহাজ তৈরির কিটগুলির মতো সংগ্রহযোগ্য বেশ কিছু ভাল ভাল ব্যতিক্রমী জিনিস আপনি এখানেই পাবেন। ১৯৫০-এ তৈরি হওয়া এই খেলনার দোকানটি পার্ক স্ট্রিট এবং রাসেল স্ট্রিটের সংযোগস্থলেই আপনি পাবেন৷ দেখতে দেখতে পাশের দোকান থেকে কিনে নিন পছন্দসই আইসক্রিম।
পার্ক স্ট্রিট কবরস্থান
আপনি যদি ইতিহাসপ্রেমী হন, তবে পার্ক স্ট্রিটের কবরস্থানটি দেখা বিশেষ প্রয়োজনীয়। শহুরে কিংবদন্তি অনুযায়ী এটি কলকাতার ভূতুড়ে জায়গাগুলির মধ্যে অন্যতম প্রধান। ১৬০০ টিরও বেশি কবর রয়েছে এখানে। এবং পুরনো দিনের সমাধিগুলির স্থাপত্যশৈলীও আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করবে নিশ্চিত। তবে সন্ধের পর এই অঞ্চলে থাকার জন্য দরকার হবে বিশেষ অনুমতির। চার্লস ডিকেন্সের ছেলের সমাধি থেকে ফিলোলজিস্ট উইলিয়াম জোন্স বা মাইকেল মধুসূদন দত্তের কবর—ঘুরতে ঘুরতে চোখে পড়বে সবই।
ভিক্টর ব্রাদার্স হল কলকাতার প্রাচীনতম নিলাম ঘরগুলির মধ্যে একটি
খাতা-কলম কেনাকাটা করুন
নিউ মার্কেট, গড়িয়াহাট বা হাতিবাগানের বিপুল খ্যাতির তলায় পার্ক স্ট্রিটের পথের ধারের কালি-কলমেপ দোকান তেমন পরিচিত নয়, খোদ কলকাতার মানুষের কাছেই। কিন্তু এই অঞ্চলে গেলেই আপনার চোখে পড়বে পার্ক স্ট্রিট পোস্ট অফিস জুড়ে বিভিন্ন স্টল যা সস্তায় স্টেশনারি বিক্রি করে। মার্কার, ফাইল, ফোল্ডার, ক্লিপ, হোল্ডার— জিনিসপত্রের তালিকা অন্তহীন। দরাদরি করতে জানলে প্রয়োজনীয় অনেক জিনিসপত্র আপনি কিনতে পারেন এখান থেকেই।
ভিক্টর ব্রাদার্স
ভিক্টর ব্রাদার্স হল কলকাতার প্রাচীনতম নিলাম ঘরগুলির মধ্যে একটি যা পার্ক স্ট্রিট পোস্ট অফিসের কাছাকাছি অবস্থিত। খাঁটি জিনিস চেনার চোখ থাকলে আপনি দেখতে পাবেন এখানে রয়েছে আসল মিং ফুলদানি, ভিক্টোরিয়ান টি-সেট, সুন্দর অ্যান্টিক দেওয়াল ঘড়ি, ব্রাউনি ক্যামেরা, ভিনটেজ ধাঁচের ঝাড়বাতি, আরও কত কী! উইন্ডো শপিং করতে করতেই আপনার মনে ধরবে বিভিন্ন জিনিস যা সংগ্রহ না করে থাকা মুশকিল হবে।