'সিনেমা যখন চোখে জ্বালা ধরায়/ বন্ধুর টেলিফোনে মন বসে না...' শ্রাবন্তী মজুমদার আর হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া এই পুরনো বাংলা গানটি মাঝে মাঝেই খুব সত্যি হয়ে দেখা দেয় নাগরিক জীবনে। তখন চুপ করে কোনও গাছের ছায়ায় বসে তাজা অক্সিজেন পেতে আর নিজস্ব নিরালা-যাপনের উদ্দেশ্যে চলে আসতেই পারেন কলকাতা শহরের সেরা কিছু পার্কে। ব্যস্ত যানজট থেকে দূরে একটু গাছগাছালির মধ্যে কিছুক্ষণ থাকলে শরীরের 'সুখ হরমোন সেরোটোনিন'-ও বাড়বে, আর নাগরিক ক্লান্তিও দূর হবে।
কলকাতাতেই রয়েছে দেশের বৃহত্তম ইকো ট্যুরিজম পার্ক। রাজারহাটের নিউ টাউন এলাকার এই পার্কটি প্রায় ১৯০ হেক্টর জমি জুড়ে বিস্তৃত। ৪২ হেক্টর জলাশয়ের মাঝে একটি দ্বীপও রয়েছে পার্কটিতে। নৌকা করে পৌঁছনোও যায় এখানে।
একা নয়, ইকো পার্ক তথা 'প্রকৃতি তীর্থে' সপরিবারেও কিছুটা সময় কাটিয়ে আসতেই পারেন। ইকোলজিক্যাল জোন, থিম গার্ডেন এবং বিনোদনের জন্য উন্মুক্ত প্রাঙ্গণ-- এই তিনটি জায়গা ঘুরে দেখতে দেখতে কখন ক্লান্তি কেটে গিয়েছে, টেরও পাবেন না। জোর্বিং, কায়াকিং, সাইক্লিং, রোয়িং, প্যাডেল বোটিং বা স্পিড বোট রাইডের মতো অনেক আয়োজন এখানে। হয়ে যেতেই পারে ছোটখাটো অ্যাডভেঞ্চার।
অফিস পাড়ার গায়েই স্ট্র্যান্ড রোডে, হুগলি নদীর পাশে মিলেনিয়াম পার্ক। পার্কটি আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ এবং হুগলির পূর্ব তীরে রেলওয়ে ক্লাবের বিপরীতে এবং ফেয়ারলি ঘাটের কাছে অবস্থিত। এই পার্ক থেকে হাওড়া ব্রিজ দেখা যায়। সন্ধের পর আলোকজ্জ্বল এই উদ্যানে এসে দূর করে ফেলতে পারেন রোজকার ১০টা-৫টার ক্লান্তি।
মিলেনিয়াম পার্ক বিভিন্ন ধরনের গাছ এবং সুন্দর আলো দিয়ে সাজানো। পার্ক থেকে হুগলি ওয়াটারফ্রন্ট এবং হাওড়া ব্রিজের দৃশ্য স্মরণীয় হয়ে থাকতে পারে আপনার মুঠোফোন-ক্যামেরাতেই।
মোহর কুঞ্জ বা এক সময়ের সিটিজেনস পার্ক কলকাতার ময়দানের এক কোণে অবস্থিত এক অন্য চরিত্রের বাগান। এতে বিভিন্ন সময় নানান বিচিত্রানুষ্ঠানের আয়োজনও করা হয়। এই উদ্যানটি ক্যাথিড্রাল রোডে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের পাশে এবং নন্দনের বিপরীতে অবস্থিত।
রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী কণিকা বন্দোপাধ্যায়, যাঁর ডাক নাম ছিল 'মোহর', তাঁকে মনে রেখেই পার্কটির নতুন নাম হয় 'মোহর কুঞ্জ'। নিজের মতো একটু সময় কাটাতে আপনি কিছুক্ষণ এই উদ্যানে সময় কাটাতেই পারেন। অথবা কোনও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থাকলে তো কথাই নেই। সময় কখন কেটে যাবে, বুঝতেই পারবেন না।
সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্ক তথা 'বনবিতান' ময়দানের পরে কলকাতার দ্বিতীয় বৃহত্তম খোলা জায়গা। আশপাশের মানুষের জন্য একটি প্রিয় আড্ডার জায়গা 'বনবিতান'। সল্টলেকের করুণাময়ী বাস টার্মিনাস থেকে এখানে সহজেই পৌঁছানো যায়।
'বনবিতান'-এ একটি খুব সুন্দর গোলাপ বাগান রয়েছে। পার্কের প্রজাপতি বাগানে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির প্রজাপতি। পতঙ্গ-প্রেমিক অনেক মানুষই নিয়মিত এই প্রজাপতি বাগানে কাটিয়ে যান অনেকটা সময়।
অ্যালেন পার্ক, কলকাতার পার্ক স্ট্রিটে। বড়দিন এবং ইংরেজি নববর্ষের অবকাশে এই পার্কে চোখে পড়ার মতো ভিড় হয়। এই সময় নতুন সাজে এবং আলোয় পার্কটি যেন একটুকরো ইউরোপ। তা ছাড়াও, সারা বছরই নতুন প্রজন্মের মানুষের আনাগোনায় পার্কটি এক জমাটি আড্ডাস্থল।
অ্যালেন পার্কে সমস্ত বয়সের মানুষই নিয়মিত আসেন। উৎসব অনুষ্ঠান ছাড়াও আশেপাশের স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ বিকেলের দিকে হাঁটতে ভালবাসেন এই উদ্যানে। শহুরে কোলাহলের মধ্যেই এই পার্কে আপনিও কিন্তু খুঁজে নিতে পারেন একটু স্বস্তির সময়।
এলিয়ট পার্ক কলকাতা শহরের একেবারে কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। এখানে দেড় কিলোমিটারের বেশি বিস্তৃত একটি জগার ট্র্যাক রয়েছে। সকাল থেকে জগিং করতে চলে আসেন নানা বয়সের মানুষ।
কয়েক বছর আগে পর্যন্তও কিন্তু ময়দান মেট্রো স্টেশনের কাছে এই জমিটি ময়লা ফেলার জন্য ব্যবহৃত হত। এখন এই জায়গায় একটি ঝরনা আর গাছ-গাছালি। এখানে বসার ব্যবস্থা চমৎকার এবং আশেপাশেই রয়েছে একাধিক খাবারের স্টল। ফলে একলা অথবা কয়েকজনের দৈব পিকনিক এখানে হয়ে যেতে পারে যে কোনও অবকাশেই।