হাউস্টনের প্রবাসী বাঙালিদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত দুর্গাবাড়ির পুজো শুরু থেকেই উত্তর আমেরিকার অন্যতম বড় পুজো। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর বিশ্ব বাংলা শারদ সম্মানের প্রথম সেরা প্রবাসের পুজোর শিরোপাও কিন্তু আছে হাউস্টন দুর্গাবাড়ির ঝুলিতে।
হাউস্টনের পুজো শুরু হয় ১৯৭৫ সালে। এরপর ২০০০ সালে দুর্গাবাড়ি প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে সেখানেই শুরু হয় পুজো। হাউস্টনের দুর্গা পুজোর মাহাত্ম্য এমনই যে হ্যারিকেন হারভের তান্ডবও সেই আনন্দ উৎসবে এতটুকু আঁচ ফেলতে পারেনি।
মহালয়ার শুভক্ষণে আমরা আয়োজন করেছি এক আনন্দোৎসবের। মহালয়ার সময় থেকেই পুজোর পাঁচ দিনের যাবতীয় উৎসবের জন্য প্রস্তুত আমরা।
আরও পড়ুন: ‘টরন্টো উৎসব কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন’-এ নিষ্ঠা এবং নস্ট্যালজিয়ার মিশেল
আমরা দুর্গা পুজোর আয়োজন করি লেকের উপরে অবস্হিত মন্দিরের বিশাল প্রাঙ্গনে। দুর্গাবাড়ির মন্দিরে আছে ভারত থেকে নিয়ে আসা অষ্টধাতুর মূর্তি। পুজোর যাবতীয় রীতি রেওয়াজ পালনের সঙ্গেই পুজোর চার দিন পৌরহিত্য করেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তাকে সাহায্য করে স্বেচ্ছাসেবী সহকারী পুরোহিতের দল। বোধন থেকে বিসর্জনের কথাই হোক বা হোম, চন্ডীপাঠ কিংবা ১০৮ পদ্ম সহযোগে সন্ধি পুজা, পুজোর সমস্ত নিয়ম অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলি আমরা। নৈবেদ্য, দধিকর্মা সহ সব ভোগের দায়িত্বে থাকেন স্বেচ্ছাসেবকেরা। পুজোর সময় হাউস্টন দুর্গাবাড়ির পুজো সংক্রান্ত কাজে সাহায্য করতে টেক্সাস, হাউস্টন ও অন্যান্য রাজ্য থেকে আসেন প্রায় চার হাজার স্বেচ্ছাসেবক।
পুজোর পাঁচ দিন পুরো হাউস্টন দুর্গাবাড়ির পরিবেশে থাকে হইহুল্লোড়ের ছবি। দুর্গাবাড়ি যেন হয়ে ওঠে এক মিলনক্ষেত্র। প্রবেশ পথের সাজ হোক বা লাস ভেগাসের মতো আলোর রোশনাই—পুজোর কয়েক দিনে দুর্গাবাড়ির মন্দির চত্বর হয়ে ওঠে ভেগাস-কলকাতার এক অপূর্ব মিশেল। আট থেকে আশি উচ্ছল হয়ে ওঠে নবজীবনের আনন্দে ও ফূর্তিতে।
পুজোর আমেজে হাউস্টনের মঞ্চেও থাকবে চমক। জনপ্রিয় গায়িকা ইমন চক্রবর্তীর সঙ্গেই থাকছেন সারেগামাপা খ্যাত কুশল পাল, মেখলা দাশগুপ্ত বা সুদয় সরকার এবং সর্বজনবিদিত ব্যান্ড চন্দ্রবিন্দু। এই বছরের বিনোদন হবে পুজোর মতোই প্রাণোচ্ছল।
আরও পড়ুন: সানফ্রানসিস্কোর বে এলাকার দুর্গা পুজো আসলে মাটির গন্ধের অনুভব
পুজোর কয়েক দিন খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্হা হয় পুজো সংলগ্ন স্হানে শামিয়ানার খাঁটিয়ে। পুজোর আয়োজনে কোনও খামতি রাখতে আমরা নারাজ। তাই ষষ্ঠী দেখে দশমী, ভোগ, লাঞ্চ বা রাতের খাবার কোনওটাই নিরাশ করে না পুজোর আমেজকে। বড়দের প্রশিক্ষণে ছোট ছেলে মেয়েরাই এখন হয়ে উঠেছে ঢাক বাজানোয় চোস্ত। আরতি বা বিসর্জনের ঢাকের বাদ্যিতে তাই তারাই হাউস্টন দুর্গাবাড়ির গর্ব। বিসর্জনের সময় কলা বৌ ও মঙ্গলঘট তিন বার মন্দিরে প্রদক্ষিন করিয়ে লেকে বিসর্জন দেওয়াই আমাদের এখানকার রীতি।
অনিন্দ্য চক্রবর্তী ও দীপ্তভাস সরকার দ্বারা পরিচালিত হাউস্টন দুর্গাবাড়ি কমিটি ও স্বপন দাস ও পিয়ালি চ্যাটার্জী দ্বারা পরিচালিত পুজো কমিটি এই বছরের শারদীয়ার জন্য একদম প্রস্তুত। এক কথায়, প্রতি বছর আমরা চেষ্টা করি টেক্সাসের হৃদয়ে এক টুকরো বাংলাকে তুলে ধরতে।
ছবি: পুজো উদ্যোক্তাদের সৌজন্যে।