Durga Puja Outside Kolkata

সানফ্রানসিস্কোর বে এলাকার দুর্গা পুজো আসলে মাটির গন্ধের অনুভব

বাংলার দুর্গোৎসব পাঁচ দিনের হলেও সানফ্রান্সিসকোয় কিন্তু দুই তিনটে উইক এন্ড জুড়ে চলে এই উৎসব।

Advertisement

শ্রদ্ধা বন্দ্যোপাধ্যায়

সান ফ্রানসিস্কো, আমেরিকা শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৮ ০৯:০০
Share:

সানফ্রান্সিসকোর বে এলাকার পুজো।

‘আশ্বিনের শারদ প্রাতে’দেবীপক্ষের সূচনায় বাংলার আকাশ বাতাস মুখরিত। চতুর্দিকে সাজো সাজো রব। শরতের নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা, কাশফুল আর শিউলির সমারোহে প্রকৃতি মাতৃ আরাধনার জন্য তৈরি। সুদূর মার্কিন মুলুকে এ সবের কোন স্পর্শই আলাদা করে অনুভব করা যায় না, তবুও অন্তরে লালিত দেশীয় কৃষ্টি ও সংস্কৃতির টানে প্রবাসী বাঙালির মনেও আগমনী ধ্বনিত হয়-- "আজি শঙ্খে শঙ্খে মঙ্গলে গাও জননী এসেছে দ্বারে। "

Advertisement

সানফ্রান্সিসকোর বে এলাকার দুর্গোৎসবে প্রস্তুতি বিশালই বলা যায়। বাংলার দুর্গোৎসব পাঁচ দিনের হলেও এখানে কিন্তু দুই তিনটে উইক এন্ড জুড়ে চলে এই উৎসব। এবার বে এলাকার দুর্গা পূজার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে এসে দাঁড়িয়েছে প্রায় পনেরোয়।

কয়েকবছর আগেও এই পূজার সংখ্যা ছিল অনেক কম। এই এলাকার পুজোগুলির মধ্যে রয়েছে পশ্চিমী, বেবাসী, প্রবাসী, সিলিকন ভ্যালি সার্বজনীন দুর্গোৎসব, আগমনী, ওমেনস্ নাও, ফগ দুর্গোৎসব, সংস্কৃতি ইত্যাদি। এ ছাড়া আরও কয়েকটি সংস্থা এই উৎসবে অংশগ্রহণ করে। এখানে দুর্গা পুজো শুরু তেরোই অক্টোবর থেকে, চলবে দুই তিন সপ্তাহব্যাপী। বেশির ভাগ পূজা কমিটি চার দিনের পূজাকে দু’দিনে করছেন। তবে ষষ্ঠী থেকে দশমী— বোধন থেকে সিঁদুর খেলা সবই থাকে এই মহোৎসবে। এই এলাকার দুর্গাপুজো এতই জনপ্রিয় যে দূরদূরান্ত থেকে বেশ কয়েক ঘণ্টা গাড়ী চালিয়ে বাঙালিরা এই পূজায় অংশগ্রহণ করতে আসেন।

Advertisement

আরও পড়ুন: ধুনুচি নাচ, ঢাক, আরতি, সবই আছে টিনটিনের দেশে​

আরও পড়ুন: সাইবার সিটির শারদ-সরোদ​

চরম ব্যস্ততার মধ্যেও বাঙালির সংস্কৃতিপ্রিয় মন মেতে ওঠে বিভিন্ন স্বাদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মহড়ায়। ব্যস্ত সপ্তাহে

অফিস ছুটির পর ও সপ্তাহ শেষের ছুটির দিনগুলোতে চলে নাটক, গান, নৃত্যনাট্য,গীতিনাট্যের মহড়া । পালা করে সকলের বাড়িতে চলে এই মঽড়া, সঙ্গে থাকে মুখরোচক জল খাবারেও ব্যবস্থা । প্রবাসে ব্ড় হয়ে ওঠা নতুন প্রজন্মও এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছে। ইংরাজি ভাষায় কথোপকথনে অভ্যস্ত শিশু ও কিশোর কিশোরীদের অনভ্যস্ত বাংলায় বলা কবিতা,গান ও নাটকের পরিবেশন অন্যরকমের অভি়জ্ঞাতা। প্রতি বছর বে এলাকার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বাংলা থেকে বিভিন্ন শিল্পী সমাগম হয়। এবার বাংলা থেকে আসছে বিখ্যাত ব্যান্ড 'চন্দ্রবিন্দু ', বিখ্যাত গায়িকা ইমন চক্রবর্তী, সোমলতা । এ ছাড়া উপস্থিত থাকবেন বাংলার জনপ্রিয় সুরকার ও শিল্পী জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সুদূর প্রবাসে বসে বাংলার শিল্পীদের কাছে পাওয়ায় প্রবাসীর দল আপ্লুত। এ ছাড়া রয়েছে এখানকার সদস্যদের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

শুধুমাত্র সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানই নয়, আর একটা বিষয়ে বাঙালির আগ্রহ চিরকালীন, তা হল খাওয়া দাওয়া। পূজার দিনগুলিতে মণ্ডপে মণ্ডপে খিচুড়ি ভোগ বিতরণ করা হয়। থাকে নানা খাদ্যদ্রব্যের স্টল যেখানে থাকে বিরিয়ানি থেকে মিষ্টি পর্যন্ত সব কিছুই মেলে। অনভ্যস্ত প্রবাসী বাঙালিরা এই কদিন মেতে ওঠে ষোলোআনা বাঙালিয়ানায়। স্টল গুলিতে মন উচাটন করা নিত্যনতুন খাদ্যদ্রব্যের সুগন্ধ ম ম করে। বিরিয়ানি,মাংস,মাছ ভাত,পোলাও-কালিয়া,ফিস ফ্রাই,রোল,চাউমিন,নানারকম মিষ্টির মাধ্যমে নিজেদের বাংলার দুর্গোৎসবের ছোঁয়া টুকু পায়।

স্বদেশ কিংবা বিদেশ যেখানেই হোক, পুজো থেকে বাঙালিকে বিচ্ছিন্ন করা যায় না। তাই বিশ্বের যে প্রান্তেই বাঙালি আছেন সেখানেই পুজোর আয়োজন। সানফ্রানসিস্কোর বে এলাকায় তো বাঙালি বিস্তর। শ্রদ্ধা আর আন্তরিক আয়োজনে শিকড়ের টানটুকু অনুভব করার পরিসরই আসলে দুর্গাপুজো প্রবাসীদের কাছে।

ছবি: পুজো উদ্যোক্তাদের সৌজন্যে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন