প্রতীকী চিত্র
ঢাকের বাদ্যি যেন এখনই কান পাতলে শোনা যাচ্ছে। বাজারে বাজারে জমিয়ে চলছে বিকিকিনি। জোরকদমে চলছে মণ্ডপ সজ্জার কাজ। বৃষ্টি হলেও মাঝে মধ্যেই নীল আকাশে তুলো তুলো মেঘের আনাগোনা। দেবীর আগমনী তো একেই বলে! সেই আমেজ মেখেই আনন্দবাজার ডট কমের সঙ্গে পুজোর পরিকল্পনা ভাগ করে নিলেন দর্শনা বণিক।
এ বারের পুজোর প্ল্যান কী? অভিনেত্রী বলেন, ''কিছু আগে থেকে ঠিক করে রাখা কাজ আছে। দেবী চৌধুরাণীর রিলিজ আছে। তবে, অষ্টমী, নবমী, দশমী কাজ করব না ঠিক করেছি। ওই তিন দিন পরিবারের সঙ্গেই কাটাব, অঞ্জলি দেব, ভোগ খাব। আমি সারা জীবন এ ভাবেই পুজো কাটাতে চাই।''
অভিনেত্রী কথার ফাঁকেই জানান, ইতিমধ্যে তাঁর পুজোর কেনাকাটা সারা। দর্শনার কথায়, ''আমি খুব শাড়ি কিনতে ভালবাসি। তাই পুজোর শপিং হয়ে গিয়েছে।''
৯০ দশকের ছেলেমেয়ে যাঁরা, তাঁদের বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সমাজ যেমন বদলেছে, তেমনই যেন পাল্টে গিয়েছে দুর্গাপুজোর গন্ধ বয়ে আনা জিনিসগুলো। দর্শনার কাছে আজ পুজোর গন্ধ বয়ে আনে কী কী, জিজ্ঞেস করতেই এক গাল হেসে অভিনেত্রী বলেন, ''পুজোর গান, পুজোর আগে কাজ-কর্ম, খাওয়া-দাওয়া, শপিং সব নিয়েই কলকাতার মধ্যে একটা আলাদা উন্মাদনা। একটা আলাদা অনুভূতি কাজ করে। শিউলি ফুল, নীল আকাশে তুলোর মতো মেঘ দেখলেই মনে হয় মা আসছে।''
যে দেবীর ঘরে ফেরার আনন্দে গোটা রাজ্য ভাসছে, তাঁর মতোই যদি দর্শনা নিজে দশভুজা হয়ে পৃথিবী থেকে ১০টি জিনিস মুছে ফেলতে পারতেন, তা হলে সেগুলি কী হতো? প্রশ্ন শুনে বেশ চিন্তায় পড়লেন অভিনেত্রী। বললেন, ''১০টা বলতে হবে? আচ্ছা। সবার প্রথমেই থাকবে দারিদ্র্য। সবাই যাতে অন্তত খেতে পায়, শিক্ষা পায়, সেটা নিশ্চিত করতাম। জন্মগত অধিকার যেগুলি, সেগুলি যেন পায় সকলে। দ্বিতীয় হবে, মেয়েদের অসম্মান। আর তৃতীয় পুরুষদের অসম্মান। কারণ মেয়েদের অসম্মানের পাশাপাশি আজকাল পুরুষদেরও অসম্মান করা হচ্ছে বিভিন্ন আইনকে হাতিয়ার করে। মানসিক চাপ তৈরি করা হচ্ছে তাদের উপরে। এরপর আসছি একটা খুব জরুরি বিষয়ে, ধর্ষণ। এটা বন্ধ করতাম।'' একটু ভেবে নিয়ে তিনি পুনরায় বলেন, ''শিশুশ্রম বন্ধ করতাম। যখন কোথাও দেখি যে বাচ্চারা কাজ করছে, তখনই মনে হয় কেন? এমনটা তো হওয়ার কথা ছিল না। এ ছাড়া, আমাদের চারপাশে বৃহন্নলা যাঁরা আছেন, তাঁদের আরও স্বাভাবিক ভাবে নেওয়া উচিত বলে মনে করি। বিশেষ করে ভারতে। আমি বিদেশে দেখেছি তাঁরা বিভিন্ন পেশার সঙ্গে যুক্ত, স্টোরে কাজ করেন। তাঁরা বাকিদের মতো স্বাভাবিক জীবনযাপন করেন, যেটা ভারতে এখনও কিছু সমস্যা আছে। অনেকেই স্কুল বা কলেজ জীবনে ভীষণ কটাক্ষ, অপমানের শিকার হন, তাঁরা বাকিটা আর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন না। আমি ওঁদের আরও বেশি করে স্কুল, কলেজ, অফিসে দেখতে চাই। অষ্টম জিনিস হল, আমি চাই পরিবেশ আরও পরিষ্কার হোক। গাছ আরও বাঁচাতে হবে। এত বিশ্ব উষ্ণায়ন হচ্ছে, দেখে মনে হচ্ছে এর শেষ কোথায়। ধর্ম নিয়ে যে রেষারেষি সেটা চলে গেলে ভাল। যার যার ধর্ম তার তার কাছে থাক। আর সবশেষে যুদ্ধ বন্ধ হোক।''
দর্শনার মনের ইচ্ছের সঙ্গে হয়তো আরও অনেকেরই ইচ্ছে মিলে যাবে। দেবী দুর্গা সেই ইচ্ছে পূরণ করেন কি না, সেটা অবশ্য সময় বলবে।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।