সংগৃহিত চিত্র
পুজোর আর মাত্র ২০-২২ দিন বাকি। বাঙালিরা গোটা বছর যে সময়টার জন্য অপেক্ষা করে সেটা প্রায় এসেই গিয়েছে। এই বছর ৪টি দিনের জন্য কী কী পরিকল্পনা সাজিয়ে রেখেছেন, কেনাকাটাই বা কতদূর সেটাই আনন্দবাজার ডট কমের সঙ্গে আড্ডায় ভাগ করে নিলেন অভিনেতা রাহুল দেব বসু।
সপ্তমী থেকে দশমী কোন দিন কার সঙ্গে, কী ভাবে কাটাবেন, কী পরিকল্পনা করেছেন জানতে চাইলে রাহুল বলেন, “পুজোর প্ল্যান তো সে রকম কোনও বছরই বিশেষ করে আলাদা করে করা হয় না। কিন্তু এটা নিশ্চিত করি যে আমি কলকাতায় থাকছি, পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছি। যে বন্ধুদের সঙ্গে গোটা বছর দেখা হয় না, এই সময় তাদের সঙ্গে দেখা করে রাগটা একটু কমানোর চেষ্টা করি। বসে গল্প করা, আড্ডা মারা, এ সবই পরিকল্পনায় থাকে। ঠাকুর দেখতে যাওয়ার ইচ্ছে আছে। তবে প্ল্যান করে কিছুই করা হয় না। যে দিন ইচ্ছে হয়, চলে যাই। এ বার দেখা যাক কী হয়।”
পুজো বলতেই ছোটবেলার কোন জিনিস মিস করেন জানতে চাইলে অভিনেতা জানান, তেমন প্রায় কিছুই নেই যা তিনি মিস করেন। তবে একটা জিনিস আছে। কী সেটা? রাহুলের কথায়, “এখন আমাদের সব আত্মীয়রা কলকাতার বাইরে, অনেকে তো দেশের বাইরে থাকেন। ছোটবেলায় আমাদের একটা সমাবেশ হতো আর কী। পুজোর সময় সমস্ত তুতো ভাই-বোনেরা হয়তো একসঙ্গে বসতাম, সেটা আর হয় না। ওটা মিস করি। এ ছাড়া যেমন ছিলাম, তেমনই আছি। হয়তো কলকাতার দৃশ্যগুলি কিছুটা পাল্টেছে। এখন প্যান্ডেলগুলি আরও রঙিন হয়েছে, গুছিয়ে করা হয় সবটা। মানুষ আরও বেশি করে প্যান্ডেল হপিং করেন। নইলে সেটা ছাড়া সব একই রয়েছে। সেই অর্থে আমি খুব একটা তফাৎ পাই না।”
এ কাল, সে কালের পুজো বা কলকাতায় তেমন বদল না ঘটলেও, তিনি তো এখন চেনা নাম, চেনা মুখ। পেশার জন্যই একাধিক নিয়ম মেনে চলতে হয়। জীবনযাপনেও নিশ্চয় বদল এসেছে। ডায়েট মেনে চলা, জিম তো কম বেশি সবার রুটিনেই ঢুকে পড়েছে। সেখানে পুজোতেও সেই নিয়ম কড়া ভাবে মানা হয়? রাহুলের সাফ জবাব, “এই সময় যদি কেউ ডায়েট মেনে চলেন তা হলে আমার মনে হয় তাঁদের মাথায় সমস্যা আছে।” এর পর তাঁর আরও সংযোজন, “গোটা বছর ধরে যে নিয়ম মেনে চলি পুজোর সময়টা সেটা পুরো বন্ধ করে দিই। খাওয়া-দাওয়ায় কোনও নিয়ন্ত্রণ রাখব না। তবে আবার এমনও করব না যে ৭-১০ দিন পর পর্যন্ত প্রচণ্ড অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় থাকলাম। তবে, হ্যাঁ, ডায়েট অবশ্যই মানব না।”
আর পুজোর প্রেম? ছোটবেলায় মণ্ডপে হালকা চোখাচোখি, মনটা আনচান করে ওঠা কি হয়েছে? ‘খাকি’ খ্যাত অভিনেতা জানান ছোটবেলায় পুজো-প্রেম না হলেও, তাঁর এবং দেবাদৃতার সম্পর্কের অনেকটা জুড়ে রয়েছে দুর্গাপুজো। অভিনেতার কথায়, “ছোটবেলায় পুজোর সময় খেতে ব্যস্ত ছিলাম আর কী! প্রেমের বিষয়টা অনেক পরে হয়েছে জীবনে। তবে, দেবাদৃতার সঙ্গে সম্পর্কটা আমার পুজোর সঙ্গে একটা বিশাল বড় যোগ। আমাদের সম্পর্কের জায়গাটা আজকে যেখানে দাঁড়িয়ে সেটা তো শুরুই... সবাইকে জানিয়েছিলাম দশমীর দিন।”
প্রিয় মানুষ, বাড়ির সবার বা নিজের জন্য কি পুজোর কেনাকাটা হয়েছে? এই প্রশ্ন শুনেই খানিক থেমে অভিনেতা বলেন, “আমার পুজোর কেনাকাটা হচ্ছে সেই পরীক্ষায় বসার মতো। শেষ মুহূর্তে, ঘুম থেকে উঠব আর মনে হবে এই রে সিলেবাস তো শেষ হয়নি, এ দিকে কালকে পরীক্ষা! ৬-৮ ঘণ্টা ধরে পড়ো এ বার। আমিও তেমন শেষের দিকেই হয়তো দৌড়াব এ দিক, ও দিক, 'কিছুই তো কেন হয়নি করে'। ফলে দেরি আছে।” শেষ মুহূর্তে কোন দিকে দৌড়াবেন? অনলাইন নাকি শহরের চেনা বাজারের একটিতে? রাহুল বলেন, “অনলাইন শপিং পুজোর সময় খুব কম হয়। গিয়েই মূলত কেনাকাটা করি। গড়িয়াহাটেও যাই মাস্ক, টুপি পরে। হাতিবাগান দূরে হয়, অত আলস্য কাটিয়ে যাওয়া হয় না। কিন্তু গড়িয়াহাট, হাজরা, শপিং মল থেকেই কেনাকাটা করা হয়।”
রাহুলের পুজোর কেনাকাটার দেরি থাকলেও, দেবীর তো আসতে দেরি নেই আর তেমন! এ বার দেবীর কাছে কী চাইবেন তিনি? “দেবীর কাছে এটাই প্রার্থনা থাকবে যে যেন আমাদের সেই সুযোগটা দেয় যাতে আমরা নিজেদের ভাল রাখতে পারি। ঈশ্বর তো ভাল রাখেন না, খালি সুযোগটা করে দেন যাতে আমরা নিজেদের ভাল রাখতে পারি। খেয়াল রাখতে পারি। কাজকর্মের ক্ষেত্রে, স্বাস্থ্যের দিক থেকে যাতে ভাল থাকি। শুধু আমার পরিবার, আমার জন্য নয়, সবার জন্য এটাই চাই”, জানান অভিনেতা।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।