Durga Puja 2020

অষ্টমীতে যে মেয়ের সঙ্গে আইসক্রিম খাওয়ার কথা, মাস্ক পরা এ সে তো?

কালকে আমার সঙ্গে অতক্ষণ গল্প করে, আজকে আবার নতুন বন্ধু! দাঁড়াও, দেখাচ্ছি মজা!!

Advertisement

রজতেন্দ্র মুখোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২০ ১৭:৪০
Share:

পুজোয় চাই নতুন জামা, এ স্লোগান আমরা বহু বছর ধরেই শুনে আসছি। কিন্তু পুজোয় চাই নতুন মাস্ক, এই স্লোগানটি এবছরের এবং একদমই টাটকা। সারা বিশ্বের করোনা পরিস্থিতির দিকে চোখ রাখলে এ স্লোগান এখন অবাস্তব তো নয়ই বরং খুবই সময় উপযোগী। মাস্ক পরতে বাঙালি এখন অনেকটাই অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে। যে মাস্ক পরে আছে, সে-ই সভ্য, এমন একটা ভাবনাও যেন আস্তে আস্তে চারিয়ে গিয়েছে সমাজশরীরে।

Advertisement

পুজোর সময় নিজেকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে নেওয়ার জন্য যে সাজপোশাক, তার সঙ্গে যাতে বেমানাননা লাগে, তাই মেয়েদের শাড়ি বা সালোয়ারের সঙ্গে আর ছেলেদের শার্ট বা পাঞ্জাবির সঙ্গে ম্যাচিং কাপড়ের এবং ম্যাচিং ডিজাইনের মাস্ক চলে এসেছে বাজারে। সেই মাস্কগুলো দেখতে যত সুন্দর, দামেও ততটাই। কোনও মাস্ক-এ হয়তো শান্তিনিকেতনের কাঁথাস্টিচ, কোথাও গুজরাটি সেলাইয়ের কাজ, কোথাও আঁকা বাংলার প্রাচীন পটচিত্র, কোনওটাতে আবার বিমূর্ত কোনও ফিগার। অ্যাপ্লিকের মতো নানারঙের টুকরো কাপড় জুড়ে-জুড়ে বা পুরুলিয়ায় ছো-এর মুখোশের আদলে মাস্ক তৈরি হচ্ছে, এমনটাও তো দেখা যাচ্ছে খবরকাগজে। যারা আঁকতে পারে, তারা একরঙা কাপড় কিনে তাতে ফেব্রিক রং দিয়ে নানারকমছবি এঁকে মাস্ক বানিয়ে প্রিয়জনদের পুজো উপলক্ষ্যে উপহার দিচ্ছে। সেটা হচ্ছে এক্সক্লুসিভ মাস্ক, বুটিকের মতো।

এগুলো সবই ভাল উদ্যোগ হলেও চিন্তার কথা তো একটাই। যে উৎসবে এটা পরা হবে, তা হল দুর্গাপুজো। আর দুর্গাপুজো হল সুন্দর মুখের উৎসব। পুজোর এই চারদিন, যদি ঠাকুর দেখতে আসা একটি মেয়ের মুখ, একটি ছেলে না-ই দেখতে পায়, কিংবা প্যান্ডেলে দাঁড়িয়ে পেশাদার ঢাকিদের সঙ্গে সমান তালে ঢাকবাজানো ঝাঁকড়াচুলো ছেলেটার মুখটা ঠিক কেমন, তা যদি জানতেই না পারে জব্বলপুর থেকে কলকাতার মামারবাড়িতে পুজো দেখতে আসা সদ্য কলেজে পা-দেওয়া সেই কিশোরী, তবে পুজোর আর রইল কী?

Advertisement

আরও পড়ুন: পায়ে পায়ে মিডি প্রেম!

টম অ্যান্ড জেরি থেকে ছোটা ভীম— সব্বাইকে খুঁজে পাওয়া যাবে মাস্কে!

আর সবচেয়ে মুশকিলের জায়গা হল, সপ্তমীর দিন মাস্ক-পরা যে মেয়েটিকে দেখে একটি ছেলের ভাল লেগেছিল, তাকে অষ্টমীর দিন অন্য পোশাকে দেখে সে নিজেই তো এই ভেবে টেনশনে পড়ে যাবে যে, এই মেয়েটির সঙ্গেই আজ তার আইসক্রিম খাওয়ার কথা ছিল কিনা! বুক ঠুকে তার দিকে এগিয়ে গিয়ে মিনিট দশেক ঘাড় নেড়ে-নেড়ে কথা বলার পর ছেলেটা হয়তো খেয়াল করবে, একটু দূরে অন্য একটি মেয়ে বিবেকানন্দর মতো বুকের কাছে দু’হাত জড়ো করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে জ্বলন্ত চোখে তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। আর সে চোখের ভাষায় স্পষ্ট পড়া যাচ্ছে, বাহ্‌, বেশ! কালকে আমার সঙ্গে অতক্ষণ গল্প করে, আজকে আবার নতুন বন্ধু! দাঁড়াও, দেখাচ্ছি মজা!! তখন একে কোনওমতে ছেড়ে, আগের মেয়েটির পিছনে ছুটে গিয়ে প্রচুর কাকুতি-মিনতি করেও পরিস্থিতি সামলানো বেশ কঠিন হয়ে ওঠে। আইসক্রিম খাওয়ানোর সময় তার মুখটুকু দেখতে পাওয়ার যে সম্ভাবনা, সেটুকু না মাঠেই মারা যায়! আর এই সমস্ত ঝামেলার মূলে কিন্তু ওই হতচ্ছাড়া মাস্ক, যাকে কিনা রেগেমেগে মুখ থেকে টেনে খুলে, নর্দমায় ছুড়ে ফেলে দেওয়ারও কোনও উপায় নেই!

পুজোর ক’দিন কিশোরী ও রমণীদের টানা-টানা দুর্ধর্ষ ভুরু, ঠোঁটের ঠিক উপরে শোভা পাওয়া ছোট্ট কালো তিল, ফিকে ডালিমরঙা অনুপম লিপস্টিক— সবই তো এই চারটে দিন মাস্কের চাদরের নীচে হারিয়ে যাওয়া সভ্যতার মতো চাপা পড়ে থাকবে! তাই বুদ্ধিমান ডিজাইনাররা, মেয়েদের জন্য বিশেষ এক ধরনের স্বচ্ছ মাস্ক তৈরি করার চেষ্টা করছেন, যার ঠোঁটের চারপাশটা এক ধরনের পাতলা মেটিরিয়াল দিয়ে তৈরি করা থাকবে। ফলে, এটি মুখে পরলে, ঠোঁট সমেত মুখের বেশ খানিকটা অংশ নাকি দেখতে পাওয়া যাবে। কোনও কোনও শাড়ির সঙ্গে যেমন ব্লাউজপিস এবং সালোয়ারের সঙ্গে হাতার কাপড় দিয়ে দেওয়া থাকে, তেমনই মাস্ক তৈরি করিয়ে নেওয়ার জন্য আলাদা কাপড় দেওয়াও শুরু হয়ে গিয়েছে কিনা আমার ঠিক জানা নেই।নামকরা বুটিকগুলো তো আলাদা একটা মাস্ক-সেকশনই তৈরি করে ফেলেছে। ছেলেদের জন্যে তৈরি করা হচ্ছে নানান ডিজাইনের লেদার-মাস্ক। যার এক একটার ধাঁচ ও গড়ন এক এক রকম।

আরও পড়ুন: উৎসবের সেলিব্রেশনে লাগুক রামধনুর ছোঁয়া

মাস্ক যখন সবে চালু হল, তখন সবচেয়ে মুশকিলের ছিল বোধহয় ছোটদের তা পরিয়ে রাখা। মুখের উপর অস্বস্তিকর কোনও জিনিস সর্বক্ষণ পরে থাকতে কোন্‌ ছোটই বা চাইবে বলুন! কিন্তু তারাও যাতে আনন্দ করে মাস্ক পরে, সেজন্য তাদের প্রিয় নানান কার্টুন আর কমিকস চরিত্রের ছবি আঁকা মাস্কও এসে গিয়েছে বিভিন্ন কিড স্টোরে। টম অ্যান্ড জেরি থেকে ছোটা ভীম— সব্বাইকে খুঁজে পাওয়া যাবে সেখানে!

কার্টুন: দেবাশীষ দেব

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন