room

এ বার পুজোয় মোমের আলোয় মাতুন প্রেমে

অন্দরসজ্জায় ক্যান্ডেল কিম্বা মোমবাতির ব্যবহারের একটা দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে,রয়েছে ঐতিহ্যও। দেখে নিন কী ভাবে ঘর সাজাবেন।

Advertisement

সুদীপ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৬:৪১
Share:

মোমের আলো ঘরকে স্নিগ্ধ করে।

উৎসব পর্বের অন্দরসজ্জায় কখনও কখনও একটা সাবেক ছোঁয়া মনকে উতলা করে। কোথাও যেন মন ছুঁয়ে যাওয়া পুরনো দিন, ডাউন মেমরি লেন। কিছুটা নস্টালজিয়া— সেই ছেলেবেলায় প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে পুজো দেখে বেড়ানো। মন ভালো করা সন্ধেগুলো।

Advertisement

আসলে কিছু দিন আগেও বাঙালি বাড়িতে প্রায় সারা বছর একটা পুজো পুজো ভাব থাকত, তুলসীমঞ্চ থাকত, শাঁখের আওয়াজ থাকত, উলুধ্বনি থাকত, তুলসীমঞ্চে প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখতেন মা-ঠাকুমারা।

এখন সে দিন গিয়েছে। আজও গোধূলির রঙে প্রতি দিন রাঙা হয়ে ওঠে ঘরের ভিতরটা। সন্ধেবেলা ঘরের ভিতরের আলো যেমন জ্বলে ওঠে, তেমন ভাবেই ঘরের কোনায় কিংবা প্রবেশ পথের কাছে, একটা সুন্দর রেকাবিতে কিছুটা জলের মধ্যে বাতিও জ্বলে উঠুক। দেখবেন, একটা মোহময় পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

Advertisement

অন্দরসজ্জায় ক্যান্ডেল কিম্বা মোমবাতির ব্যবহারের একটা দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে,রয়েছে ঐতিহ্যও।

জানেন কি, মোমবাতির জন্মস্থান কোথায়? মোমবাতির জন্মস্থান হিসেবে রোমকে ধরা হয়। লাতিন শব্দ ‘ক্যানডেবে’ থেকে ‘ক্যান্ডেল’ শব্দটির উৎপত্তি। আনুমানিক তিন হাজার খ্রিষ্ট পূর্বাব্দ থেকে ক্যান্ডেল অথবা মোমবাতির আলো জ্বালা শুরু। একটা দীর্ঘ সময় মোমবাতির ব্যবহার করা হত শুধু প্রার্থনার কাজে। প্রথম প্রথম মোমবাতি শুধু ইউরোপে তৈরি হলেও পরবর্তীতে এর রফতানি শুরু হয় বিভিন্ন দেশে।

সপ্তদশ শতাব্দীর আগে পর্যন্ত মোমবাতি হাতে বানানো হত। অত্যন্ত ব্যায়বহুল ছিল সেগুলো। রাজদরবারে ব্যবহার হত মোমবাতির। ঝাড়বাতিতে গ্যাসের আলো আসার আগে মোমবাতি জ্বলে উঠত।

সময় পাল্টেছে চিতা বাঘের গতিতে। মোমবাতির আলো আধুনিক সমাজে দরকার হয় নিতান্ত ইলেকট্রিসিটি চলে গেলেই। কিন্তু তারই মাঝে ক্যান্ডেল উদ্ভাসিত হয় বাঙালির অন্দরসজ্জাতেও।

ফ্ল্যাট কিম্বা বাড়িতে প্রবেশ দরজার পাশেই একটা টেবিলের উপরে,একটি তামা,কিম্বা সিরামিক কিম্বা কাঁচের পাত্রে কিছুটা জল দিয়ে,তাতে যদি দু’-তিনিটে ফ্লোটিং ক্যান্ডেল দেওয়া যায়, বেশ হয়। এখন অনেক সুবাসিত ক্যান্ডেলও কিনতে পাওয়া যায়। ভাসিয়ে দিন, আর জলে কয়েকটি টাটকা গোলাপের পাতা দিয়ে দিন। সুন্দর লাগবে। সুবাসিত ক্যান্ডেল বা গোলাপের পাপড়ি না থাকলে জলে সামান্য এসেন্স ছড়িয়ে দিন।

সাজানো ক্যান্ডেল কিংবা ফ্লোটিং ক্যান্ডেল যদিও আপনারা বাড়িতেই বানিয়ে নিতে পারেন। খুব একটা কঠিন কাজ নয়। আর বানিয়ে সেগুলো ঘর সাজানোর কাজেও লাগাতে পারেন।

যদি উৎসবের দু’-একটা দিন,বন্ধু বা আত্মীয়দের বাড়িতে নিমন্ত্রণ করেন এবং সব আলো বন্ধ করে শুধু ক্যান্ডেল জ্বালিয়ে ডিনার করতে বসেন, তা হেলও বেশ হয়! ডিনার চলতে থাকুক, আড্ডাও চলুক। সঙ্গে চালিয়ে দিন অল্প ভলিউমে নিজেদের পছন্দের গান।

উৎসবের দিনগুলোতে ড্রইং রুমের মধ্যে কিছু গাছ রাখুন। ইনডোর প্ল্যান্ট। সেই দু’টি গাছের ফাঁকে (গাছের পাতা বাঁচিয়ে) মোমবাতি রেখে দিন কয়েকটা। সন্ধে নাগাদ বাড়ির সব আলো বন্ধ করে ক্যান্ডেলগুলো জ্বালিয়ে দিন। ঘর অন্ধকার। মোমবাতির আলো গাছের পাতা ছুঁয়ে দেওয়ালে এসে মায়াবী ছায়া তৈরি করবে।আর আপনি বসে গল্প করবেন আপনার প্রিয়জনের সঙ্গে। বলুন তো, উৎসবের সন্ধে বা রাতে এমন আর একটাও মনকেমন করা আবহ পাবেন কোথাও?

আচ্ছা, পুজোর একটা রাতে শুধু ক্যান্ডেল জ্বলিয়ে ফ্ল্যাটের ড্রইং রুমে পুরনো বাংলা গানের জলসা বসালে কেমন হয়? অক্টোবরের রাত, গরমটাও খুব একটা থাকবে না। খুব গরম পরলে এসি চালিয়ে নিতে পারেন। আহা! এমন একটা আয়োজন যদি করেই ফেলুন না হয়!

ছবি সৌজন্য: লেখক।

(লেখক অন্দরসজ্জা বিশেষজ্ঞ)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন