home

জিনিসপত্র বেড়ে গিয়েছে? এমন নকশাদার কুলুঙ্গি বানিয়ে নিন

কখনও ছোটদের বই, কখনও আরাধ্য দেবতার আসন, আবার কখনও বা জামাকাপড় ভাঁজ করেও রাখা যাবে সহজেই।

Advertisement

সুদীপ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৮ ১১:১৯
Share:

কুলুঙ্গি গৃহস্থের কেবল কাজেই আসে না, অন্দরসজ্জার মানকেও বাড়িয়ে তোলে। ছবি: পিক্সঅ্যাবে।

বাঙালিদের অন্দরসজ্জা কতটা মৌলিক এ নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন আছে। মোটামুটি যখন থেকে বাঙালিবাড়িতে অন্দরসজ্জার ছোঁয়া চোখে পরে, একটা মিশ্র অন্দরসজ্জার ছবি ভেসে ওঠে আমাদের চোখের সামনে। তারই মধ্যে কিছু কিছুতে বাঙালি বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। যেমন কুলুঙ্গি।

Advertisement

পুরনো আমল থেকে বাংলায় মাটির বাড়ি ছিল, তখন থেকেই মাটির দেওয়ালের মধ্যেও এই কুলুঙ্গির চল ছিল। মাটির দেওয়ালগুলো ছিল বেশ চওড়া। কখনও কখনও কুড়ি ইঞ্চি পর্যন্ত হত। সেই চওড়া দেওয়ালের কিছুটা কেটে কেটে কুলুঙ্গি বানিয়ে নেওয়া হত। কুলুঙ্গির মধ্যে দরকারি, অদরকারি অনেক কিছুই রাখা হত। কখনও ছোটদের বই, কখনও আরাধ্য দেবতার আসন, আবার কখনও বা জামাকাপড় ভাঁজ করেও রাখা হত।

একটা উদাহরণ দিলে কিছুটা স্পষ্ট হবে। বাড়ির বাইরের তুলসীমঞ্চ দেখেছেন নিশ্চই। মাটির তুলসীমঞ্চের সামনের দিকে কিংবা পাশের দিকে কিছুটা কেটে কুলুঙ্গির মতো বানিয়ে তোলা হত। আর এই কুলুঙ্গির মধ্যে থাকত মাটির প্রদীপ। জ্বালিয়ে রাখা হত সন্ধে থেকে রাত পর্যন্ত।

Advertisement

আরও পড়ুন: কার্পেটে সাজানোর শখ? কিন্তু নিয়ম জানেন তো?

নকশাদার আলো রাখুন কুলুঙ্গিতে। ছবি: পিক্সঅ্যাবে।

কুলুঙ্গির ইতিহাস নিয়ে আমারা নিজেরা মৌলিকত্ব দাবি করতেই পারি। বিশেষ করে মাটির বাড়ির কুলুঙ্গি। মুর্শিদাবাদের জগৎ শেঠের বাড়ি দেখেছেন? সে সময়ের আধুনিক নকশার উদাহরণ জগৎ শেঠের বাড়ি। সেই বাড়িতে কুলুঙ্গি ব্যবহার করা হয়েছে। তবে চিরাচরিত বাঙালিবাড়ির কুলুঙ্গির মত উপরটা আর্চের মত নয়। বরং এ বাড়ির কুলুঙ্গিগুলোর নকশা ছিল স্ট্রেট লাইনের। দেখতেও খুবই সুন্দর লাগত। এখনও কেউ যদি মুর্শিদাবেদের জগৎ শেঠের বাড়িতে যান, ভাল করে কুলুঙ্গি-সহ অন্দরসজ্জাটা লক্ষ করবেন। সে যুগে দাঁড়িয়ে অত্যন্ত আধুনিক অন্দরসজ্জা ছিল তাঁর বাড়ির।

আজকের অন্দরসজ্জায় দেওয়ালের মধ্যে ছোট কোনও খোপ, পিলারকে ঢেকে দেওয়ার জন্য ফল্‌স প্লাইয়ের প্যানেলিং কিংবা কখনও ডেকরেশনের জন্য দেওয়ালের কিছুটা কেটে কুলুঙ্গি কিংবা কুলুঙ্গি বানিয়ে নিই আমরা। তবে কাটাকাটির ক্ষেত্রে এটা মনে রাখতে হবে, মোটা প্লাস্টার করা দেওয়াল হলেই অল্প কিছুটা কাটা সম্ভব। না হলে একেবারেই নয়। কনস্ট্রাকশন দুর্বল হয়ে যেতে পারে।

আরও পড়ুন: এ সব উপায়ে প্রবেশদ্বার বদলে বাড়িকে দিন নয়া চেহারা

কুলুঙ্গি কিংবা এলকোবের ভিতরে আলোর ব্যবস্থা রাখাটা খুব দরকার। একটা প্লাইয়ের বাক্স করে কুলুঙ্গির মধ্যে ঢুকিয়ে দিতে হবে,আর বাক্সটার উপরের দিকে হ্যালোজেন বা এলইডি লাগিয়ে নিতে হবে। তা হলেই কুলুঙ্গি আলোয় ভরে যাবে। কুলুঙ্গি যদি বেশ বড় হয়, তবে সেল্‌ফ রাখার দরকার আছে, না হলে নয়। যদি দেওয়ালে কুলুঙ্গি না থাকে তা হলে প্লাই বা কাঠ দিয়ে আসবাবের সঙ্গে মিলিয়ে কুলুঙ্গি বানিয়ে নিতেও পারেন।

প্রবেশ দরজার বাইরের দেওয়ালে যদি কুলুঙ্গি বানিয়ে তাতে আলোর বন্দোবস্ত করে ক্রিস্টালের কোন শো পিস রাখা যায় তা হলে দেখতেও সুন্দর লাগে। বাড়িতে সাবেকিয়ানা ও আধুনিকতার মিলমিশ রাখা যায়।

আরও পড়ুন: মনের মতো বেসিন লাগান, হেসে উঠবে বাড়ি

কাঠের টুকরো দিয়েও বানিয়ে ফেলতে পারেন সাধের কুলুঙ্গি। ছবি: পিক্সঅ্যাবে।

বাথটাব লাগালে ঠিক লাগোয়া দেওয়ালে নীচু উচ্চতায় কিংবা বাথরুমের বেসিনের ঠিক পাশের দেওয়ালে কুলুঙ্গি বানিয়ে তাতে মার্বেল বা গ্রানাইট দিয়ে মুড়িয়ে দিতে পারেন। বসার ঘরে সোফার আশপাশে দেওয়ালে দু’-তিনটে কুলুঙ্গি থাকলে তাকে সুন্দর করে সাজিয়ে নিয়ে শো পিস রাখতে পারেন।

মোটকথা, ঘরের কোনও জায়গায় যদি আগে থেকেই এমন কুলুঙ্গি করা থাকে, তাকে কাজে লাগিয়ে ফেলুন। ঠিক মতো সাজিয়ে তুলতে পারলে দেখতে কিন্তু বেশ লাগবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন