Chhath Puja Reasons

ছট পুজো কেন পালন করা হয়? জানুন সূর্যদেব ও ছঠি মাইয়ার আরাধনার নেপথ্যের নানা তথ্য

ছট পুজোর কিংবদন্তীর সঙ্গে যোগ রয়েছে রামায়ণ ও মহাভারতেরও।

Advertisement
আনন্দ উৎসব ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০২৫ ১৯:১৮
Share:
০১ ১০

ছট পুজো - প্রকৃতি ও দেবত্বের মহামিলন: ছট পুজো মূলত সূর্যদেব (সূর্য) এবং তাঁর বোন বা শক্তির দেবী ষষ্ঠী (ছঠি মাইয়া) -এর প্রতি উৎসর্গীকৃত চার দিন ব্যাপী এক মহাব্রত। পৃথিবীতে জীবনের ধারা বজায় রাখার জন্য সূর্যদেবকে ধন্যবাদ জানানো এবং পরিবারে সুখ, সমৃদ্ধি ও সন্তানের মঙ্গল কামনায় এই উৎসব পালিত হয়। প্রকৃতি ও দেবত্বের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের এক অনন্য উৎসব এই ছট।

০২ ১০

সূর্য উপাসনার গুরুত্ব: এই উৎসবের কেন্দ্রবিন্দু হলেন সূর্য দেবতা। হিন্দু ধর্ম অনুযায়ী, সূর্য হলেন এক মাত্র প্রত্যক্ষ দেবতা, যাঁকে প্রতি দিন দেখা যায়। সূর্যের কিরণ রোগ-জীবাণু নাশ করে এবং দীর্ঘ জীবন, সুস্বাস্থ্য ও আত্মবিশ্বাস প্রদান করে বলে বিশ্বাস করা হয়। বেদে সূর্যকে 'জগতের আত্মা' বলা হয়েছে। এই পুজোয় তাই সূর্যের আরাধনা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

Advertisement
০৩ ১০

কে এই ছঠি মাইয়া: সূর্যদেবের পাশাপাশি ছঠি মাইয়া বা ষষ্ঠী দেবীরও পুজো করা হয় ছটের সময়। বিভিন্ন মতে, ছঠি মাইয়া হলেন প্রকৃতি দেবীর ষষ্ঠ অংশ। তাঁকে 'দেবসেনা' বা 'মা ষষ্ঠী' রূপে পুজো করা হয়, যিনি সন্তান ও পরিবারের রক্ষাকর্ত্রী। অনেকে তাঁকে সূর্যদেবের বোন হিসাবেও মনে করেন। নিঃসন্তান দম্পতিরা সন্তান লাভের কামনায় এবং যাঁদের পরিবার রয়েছে, তাঁরা সন্তানের দীর্ঘায়ু কামনায় এই ব্রত পালন করেন।

০৪ ১০

পুরাণ মতে রাজা প্রিয়ব্রতর কাহিনি: পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, মনু স্বয়ম্ভুর পুত্র রাজা প্রিয়ব্রত নিঃসন্তান ছিলেন। মহর্ষি কশ্যপের পরামর্শে তিনি যজ্ঞ করার পর তাঁর স্ত্রী মালিনী এক মৃত পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। শোকে কাতর রাজা আত্মহত্যার চেষ্টা করলে আকাশ থেকে দেবী ষষ্ঠী আবির্ভূতা হন। তিনি নিজেকে ব্রহ্মার মানস কন্যা হিসাবে পরিচয় দিয়ে মৃত শিশুকে স্পর্শ করলে সে জীবিত হয়ে ওঠে। এর পর থেকেই রাজা তাঁর পুজো প্রচলন করেন বলে বিশ্বাস করা হয়।

০৫ ১০

মহাভারতের দ্রৌপদী ও ছট ব্রত: মহাভারতের কাহিনিতে এই পুজোর উল্লেখ আছে। পাণ্ডবরা যখন তাঁদের রাজ্য ও সম্পত্তি হারান, তখন দ্রৌপদী ঋষি ধৌম্যের পরামর্শে ছট পুজো ও সূর্যদেবের উপাসনা করেছিলেন। এই ব্রতের প্রভাবেই পাণ্ডবরা তাঁদের হৃত রাজ্য ফিরে পান এবং তাঁদের সমস্ত সমস্যা দূর হয় বলে বিশ্বাস করা হয়।

০৬ ১০

সূর্যপুত্র কর্ণের আরাধনা: মহাভারতের আরেক চরিত্র সূর্যপুত্র কর্ণ। তিনি জন্ম থেকেই সূর্যদেবের একনিষ্ঠ উপাসক ছিলেন। কথিত আছে, কর্ণ প্রতি দিন নদীবক্ষে দাঁড়িয়ে সূর্যদেবের পুজো করতেন এবং অর্ঘ্য নিবেদন করতেন। তাঁর সেই সূর্য উপাসনার প্রথা থেকেই ছট পুজোর কঠোর নিয়ম ও অর্ঘ্য দানের উৎপত্তি হয়েছে বলেও মনে করা হয়।

০৭ ১০

রাম-সীতার ছট পুজা: রামায়ণেও ছট পুজোর উল্লেখ পাওয়া যায়। রাবণকে পরাজিত করে শ্রী রামচন্দ্র যখন অযোধ্যায় ফেরেন এবং তাঁর রাজ্যাভিষেক হয়, তখন তিনি ও মাতা সীতা কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে সূর্যদেবের উপাসনা করেন। প্রজা কল্যাণে ও সমস্ত পাপস্খালনের জন্য এই ব্রত পালন করা হয় বলে লোকবিশ্বাস।

০৮ ১০

নিয়মনিষ্ঠা ও পবিত্রতা: ছট পুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল - এর কঠোর নিয়ম ও পবিত্রতা। ভক্তরা টানা চার দিন ধরে ব্রত পালন করেন, যার মধ্যে প্রায় ৩৬ ঘণ্টার নির্জলা উপবাস (জল গ্রহণ না করে উপবাস) অন্তর্ভুক্ত। এই সময় পবিত্র স্নান, শুদ্ধ নিরামিষ আহার এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়।

০৯ ১০

অস্তগামী ও উদীয়মান সূর্যের পুজো: এটিই এক মাত্র হিন্দু উৎসব - যেখানে শুধু উদীয়মান সূর্য নয়, অস্তগামী সূর্যকেও পুজো করা হয়। তৃতীয় দিনে নদীর ঘাটে দাঁড়িয়ে অস্তগামী সূর্যকে 'সান্ধ্য অর্ঘ্য' এবং চতুর্থ দিনে উদীয়মান সূর্যকে 'ঊষা অর্ঘ্য' নিবেদন করা হয়। সূর্য তাঁর তেজ কমিয়ে দিন শেষ করেন। তাই, এই রূপেও তাঁকে সম্মান জানানো হয়।

১০ ১০

আধুনিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্ব: ছট পুজো প্রকৃতির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং নারী শক্তির প্রতীক। এই উৎসব কঠোর শারীরিক ও মানসিক শৃঙ্খলারও শিক্ষা দেয়। এটি পরিবারকে একত্রিত করে এবং সমাজ ও প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের গভীর বন্ধন তুলে ধরে। এই কারণে প্রাচীন এই উৎসব আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক ও জনপ্রিয়। (এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement