Why Ganesha is called Siddhidata

গণেশের বুদ্ধিমত্তা চমকে দিয়েছিল দেবতাদেরও! কী ভাবে হলেন তিনি সিদ্ধিদাতা?

গণেশ তাঁর পিতামাতা, অর্থাৎ শিব ও পার্বতীকে প্রদক্ষিণ করে বলেন, "আমার কাছে আপনারাই সম্পূর্ণ পৃথিবীর সমান! তাই আপনাদের প্রদক্ষিণ করাই পৃথিবী প্রদক্ষিণ করার সমতুল্য!"

Advertisement

আনন্দ উৎসব ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০২৫ ১২:২৬
Share:

প্রতীকী চিত্র।

গণেশকে 'সিদ্ধিদাতা' বলা হয়, কারণ তিনি সিদ্ধি প্রদানকারী। 'সিদ্ধি' শব্দের অর্থ হল সাফল্য বা কার্যসিদ্ধি। হিন্দু ধর্ম মতে, কোনও শুভ কাজ করার আগে অথবা নতুন কিছু শুরু করার আগে গণেশের পুজো করা হয়। কারণ, বিশ্বাস করা হয় যে গণেশ পুজো করলে সেই কাজে কোনও বাধা আসে না এবং তা সফল ভাবে সম্পন্ন হয়।

Advertisement

এর নেপথ্যের পৌরাণিক কাহিনি কী?

গণেশের সিদ্ধিদাতা হওয়ার পিছনে বেশ কিছু পৌরাণিক কাহিনি রয়েছে। যার মধ্যে দু’টি বহুল প্রচলিত -

Advertisement

১. শ্রেষ্ঠত্বের প্রতিযোগিতা:

একবার দেবতাদের মধ্যে একটি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। শর্ত ছিল, যিনি বাকি সকলের আগে পুরো পৃথিবী প্রদক্ষিণ করে ফিরে আসতে পারবেন, তিনিই শ্রেষ্ঠ দেব হিসাবে বিবেচিত হবেন। এর পরে দেবতারা তাঁদের নিজ নিজ বাহনে চড়ে পৃথিবীর প্রদক্ষিণ শুরু করলেন। এমনকী কার্তিকও তাঁর ময়ূরের পিঠে চড়ে দ্রুত বেগে বেরিয়ে পড়লেন।

অন্য দেবতারা যখন নিজেদের গতি নিয়ে গর্বিত, তখন গণেশ নিজের বাহন ইঁদুরে চড়ে তাঁর পিতামাতা, অর্থাৎ শিব ও পার্বতীকে প্রদক্ষিণ করে বললেন, "আমার কাছে আপনারাই সম্পূর্ণ পৃথিবীর সমান! তাই, আপনাদের প্রদক্ষিণ করাই পৃথিবী প্রদক্ষিণ করার সমতুল্য!"

গণেশের এই বুদ্ধি ও প্রজ্ঞায় দেবতারা অত্যন্ত খুশি হলেন এবং তাঁকেই শ্রেষ্ঠত্বের সম্মান দিলেন। সেই থেকে গণেশকে বিঘ্নহর্তা বা সব বাধার বিনাশকারী এবং সিদ্ধিদাতা বা সাফল্য প্রদানকারী হিসাবে পুজো করা হয়।

২. গণেশ ও সরস্বতী:

পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, এক বার দেব-দেবীরা জ্ঞান এবং প্রজ্ঞার দেবী সরস্বতীর কাছে তাঁর জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে জানতে চাইলেন। সরস্বতী জানালেন, তাঁর জ্ঞান আসে গণেশের কাছ থেকে, যিনি সকল জ্ঞান ও সাফল্যের উৎস। তিনি আরও বলেন, গণেশের আশীর্বাদ ছাড়া কোনও জ্ঞান বা কাজ সফল হতে পারে না। এই ঘটনার পর থেকে গণেশকে সিদ্ধিদাতা হিসাবে পুজো করা হয়।

সিদ্ধিদাতা হিসাবে গণেশের পুজো কী ভাবে প্রভাব ফেলে সাধারণ মানুষের জীবনে?

১. আস্থা ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি: যে কোনও নতুন কাজ, যেমন ব্যবসা শুরু করা, নতুন বাড়িতে প্রবেশ, বা কোনও পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করার আগে গণেশ পুজো করলে মানুষের মনে এক ধরনের আত্মবিশ্বাস ও ইতিবাচক মানসিকতা তৈরি হয়। এটি বিশ্বাস ও মানসিক দৃঢ়তা বাড়াতে সাহায্য করে।

২. বাধা দূরীকরণ: 'বিঘ্নহর্তা' হিসাবে গণেশকে স্মরণ করলে মানুষের মনে হয় যে, তাদের সামনে আসা সব বাধা দূর হবে। এটি মানসিক শান্তি ও স্থিরতা দেয়। যা কঠিন পরিস্থিতিতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।

৩. সাফল্যের প্রতীক: গণেশকে সিদ্ধিদাতা হিসাবে পুজো করা মনে করিয়ে দেয় যে, কেবল কঠোর পরিশ্রমই যথেষ্ট নয়, এর সঙ্গে প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিও সমান গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর পুজো শেখায়, বুদ্ধি দিয়ে কাজ করলে সাফল্য অর্জন সহজ হয়।

৪. সামাজিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব: গণেশ চতুর্থীর সময়ে বা অন্য যে কোনও শুভ কাজে গণেশকে প্রথম পুজো করার রীতি সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করে এবং একটি ঐক্যবদ্ধ সংস্কৃতির জন্ম দেয়। এটি ধর্মীয় ও সামাজিক জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

সংক্ষেপে বললে বলা যায়, গণেশকে সিদ্ধিদাতা হিসাবে পুজো করা কেবল একটি ধর্মীয় প্রথা নয়। বরং, আস্থা, প্রজ্ঞা এবং ইতিবাচক মানসিকতার প্রতীক। যা মানুষকে তাদের জীবনের পথে সফল হতে অনুপ্রাণিত করে।

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement