প্রতীকী চিত্র
দুর্গাপুজোয় দেব-দেবীর পাশাপাশি আর একটি আকর্ষণীয় চরিত্রকে আমরা দেখি। তার নাম কলাবউ। দুর্গাপুজোর সময় কলাবউকে সাধারণত গণেশের পাশে স্থাপন করা হয়, তাই অনেকেই মনে করেন তিনি গণেশের স্ত্রী। কিন্তু, এই ধারণাটি কি সত্যি? জেনে নেওয়া যাক।
কলাবউ আসলে কে?
কলাবউ গণেশের স্ত্রী নন, বরং তিনি হলেন নবপত্রিকা। নবপত্রিকা হল নয়টি ভিন্ন গাছের পাতা এবং ডাল দিয়ে তৈরি একটি প্রতীকী মূর্তি, যা দুর্গা পূজার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই নয়টি গাছের পাতা হল– কদলী বা কলাগাছ, কচু, হলুদ, জয়ন্তী, বিল্ব বা বেল, ডালিম, অশোক, মানকচু এবং ধান। এই নয়টি উদ্ভিদকে একসঙ্গে বেঁধে শ্বেত অপরাজিতা লতা দিয়ে পেঁচিয়ে বাঁধা হয়। এরপর সেটিকে লাল পাড়ের সাদা শাড়ি পরানো হয় এবং ঘোমটা দিয়ে বধূর রূপ দেওয়া হয়।
কলাবউ ও নবপত্রিকার তাৎপর্য
শাস্ত্র মতে, এই নয়টি গাছের প্রতিটি হিন্দু ধর্মের একজন করে দেবীর প্রতীক।
কলাগাছ: দেবী ব্রহ্মাণীর প্রতীক।
কচুগাছ: দেবী কালীর প্রতীক।
হলুদগাছ: দেবী দুর্গার প্রতীক।
জয়ন্তী: দেবী কার্তিকীর প্রতীক।
বেল: দেবী শিবানীর প্রতীক।
ডালিম: দেবী রক্তদন্তিকার প্রতীক।
অশোক: দেবী শোকরহিতার প্রতীক।
মানকচু: দেবী চণ্ডিকার প্রতীক।
ধান: দেবী লক্ষ্মীর প্রতীক।
এই নয়টি গাছকে একসঙ্গে করে দেবী দুর্গাকে আহ্বান করা হয়। এটি মূলত কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত একটি আচার, যা এই বিশ্বাসকে প্রকাশ করে যে দেবী দুর্গা শস্য এবং প্রকৃতির উর্বরতার দেবী।
গণেশের সঙ্গে কলাবউয়ের সম্পর্ক
তাহলে, কেন কলাবউকে গণেশের পাশে রাখা হয়? এর পিছনে কোনও ধর্মীয় বা পৌরাণিক ব্যাখ্যা নেই। এটি প্রচলিত বিশ্বাস এবং স্থানীয় রীতির অংশ। গণেশকে বিঘ্নহর্তা এবং প্রথম পূজ্য দেবতা হিসাবে মানা হয়। দেবীর পুজোর আগে তাঁর পুজো করা হয়। কলাবউ যেহেতু দুর্গা পূজার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ, তাই তাঁকে গণেশের পাশে স্থাপন করার মাধ্যমে পুজোর পবিত্রতা এবং সার্বজনীনতাকে বোঝানো হয়।
পরিশেষে, কলাবউ গণেশের স্ত্রী নন, তিনি আসলে প্রকৃতির নয়টি ভিন্ন রূপের প্রতীক। তিনি হলেন নবপত্রিকা, যা এই উৎসবের সঙ্গে বাংলার কৃষিকাজের ঐতিহ্যকে মিলিয়ে দেয় এবং প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের গভীর সম্পর্ককে তুলে ধরে।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।