৫০০ বছরের ঐতিহ্য - সিমলাগড়ের দক্ষিণা কালী: হুগলি জেলার পাণ্ডুয়ার সিমলাগড়ের এই কালীপুজো প্রায় ৫০০ বছরের পুরনো। এই কালী দক্ষিণা কালী রূপে পূজিতা হন। এটি বাংলার অন্যতম প্রাচীন ও জাগ্রত কালী ক্ষেত্র।
হরিহরপুর ও শ্মশান কালী: এক সময়ে এই এলাকার নাম ছিল হরিহরপুর। এলাকাটি ছিল শ্মশান সংলগ্ন এবং ঘন জঙ্গলে ঘেরা। জনবসতি ছিল না। সেই সময়ে দেবীকে কেউ শ্মশান কালী, আবার কেউ ডাকাত কালী নামে ডাকতেন!
কাপালিকের সাধনাস্থল: লোককথা অনুসারে, এক সময়ে এই জঙ্গল ঘেরা এলাকার পাশে পুকুরপাড়ে এক কাপালিক বাস করতেন। তিনি পঞ্চমুণ্ডির আসনে বসে কালীর আরাধনা করতেন।
ডাকাতদের আরাধনা: স্থানীয় ইতিহাস অনুসারে, ডাকাতরা ডাকাতি করতে যাওয়ার আগে এই ঘন জঙ্গলে পুজো দিত। বিখ্যাত রঘু ডাকাতও এই কালীর সাধনা করেছিলেন বলে লোকমুখে শোনা যায়।
নরবলি থেকে মুক্তি: এক সময়ে দেবীর সামনে নরবলি দেওয়া হত! শোনা যায়, সেই সময়ে নরমুণ্ড দেখে ভয় পেয়েছিলেন তান্ত্রিক নটবর ভট্টাচার্য। এর পরে নাকি দেবী স্বয়ং স্বপ্নাদেশ দিয়ে তাঁকে নরবলি বন্ধ করতে বলেন!
তান্ত্রিকের অনুরোধে নরবলি বন্ধ: আরও শোনা যায়, তান্ত্রিক নটবর ভট্টাচার্যের অনুরোধেই তার পর থেকে মন্দিরে নরবলি প্রথা বন্ধ হয়। তবে, বর্তমানে এখানে ছাগ বলি প্রথা চালু রয়েছে।
দেবীর বিশেষ ভোগ: সিমলাগড়ের দক্ষিণা কালীর ভোগে থাকে পোনা মাছ। দেবী সন্দেশ খেতে খুব ভালবাসেন। তাই পুজোয় সন্দেশ অবশ্যই থাকে। বর্তমানে কালীপুজোর দিন বিভিন্ন ফল দিয়েও পুজো দেওয়া হয়।
জিটি রোড ও জনবসতি: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে জিটি রোডের গুরুত্ব বাড়লে এই মন্দিরের সংলগ্ন রাস্তারও গুরুত্ব বাড়ে। ধীরে ধীরে দেবীর মাহাত্ম্য দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে পড়ায় মন্দিরের আশপাশে জনবসতি গড়ে ওঠে।
ট্রাক চালকদের শ্রদ্ধা: অতীতে বর্ধমান থেকে আসা ট্রাক চালকেরা পুজো দেওয়ার জন্য মিহিদানা ও সীতাভোগ নিয়ে আসতেন। এখনও জিটি রোড দিয়ে যাওয়ার সময়ে অনেক গাড়ির ড্রাইভার দেবীর পুজো দিয়ে যান।
জাগ্রত দেবী: সেবায়েতদের কথায়, এই মন্দিরের দেবী খুবই জাগ্রত। তাঁর কৃপা পেতে প্রতিদিনই বহু ভক্ত ভিড় করেন। সময়ের সঙ্গে মন্দিরটি আধুনিক রূপ নিলেও ঐতিহ্য একই আছে। (এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ)।