Ganesh Chaturthi Special

ইঁদুরের মতো ছোট্ট একটি প্রাণীই কেন বিশালাকার গণেশের বাহন? নেপথ্যে রয়েছে কোন কাহিনি, কী তার অর্থ?

গজমুখাসুরকে কোনও অস্ত্র দিয়েই পরাস্ত করা যাচ্ছিল না। তাই গণেশ নিজের একটি দাঁত ভেঙে গজমুখের দিকে ছুড়ে মারেন।

Advertisement

আনন্দ উৎসব ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০২৫ ১৩:১৬
Share:

প্রতীকী চিত্র।

দুর্গাপুজোর সময় মা দুর্গার বাহন সিংহের সঙ্গে যেমন কার্তিকের বাহন ময়ূর, লক্ষ্মীর পেঁচা এবং সরস্বতীর হাঁস থাকে, তেমনই গণেশের বাহন হিসেবে ইঁদুরকে দেখা যায়। এই বিশাল আকারের দেবতার জন্য এমন একটি ছোট প্রাণীকে কেন বাহন হিসাবে বেছে নেওয়া হল, তার নেপথ্যে রয়েছে বেশ কিছু পৌরাণিক কাহিনি এবং কিছু প্রতীকী বার্তা।

Advertisement

পৌরাণিক কাহিনি:

১. গজমুখ অসুরকে বশ করার গল্প:

Advertisement

পুরাণ অনুসারে, গজমুখ নামে এক শক্তিশালী অসুর ছিল - যে ছিল দেবতাদের প্রবল প্রতিপক্ষ। গজমুখকে দমন করার জন্য দেবতারা গণেশের শরণে যান। এরপর গণেশ তার সঙ্গে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। কিন্তু, গজমুখকে কোনও অস্ত্র দিয়েই পরাস্ত করা যাচ্ছিল না। তাই গণেশ নিজের একটি দাঁত ভেঙে গজমুখের দিকে ছুড়ে মারেন। সেই দাঁতের আঘাতে গজমুখ নিজের অহংকার ছেড়ে গণেশের কাছে আত্মসমর্পণ করে। তখন গণেশ তাকে বলেন, 'তোমার অহংকার চূর্ণ হয়েছে। এখন থেকে তুমি আমার বাহন হবে।' গজমুখ তখন একটি বিশাল ইঁদুরের রূপ ধারণ করে এবং চিরদিনের জন্য গণেশের বাহন হয়ে যায়!

২. ক্রৌঞ্চ গন্ধর্বের কাহিনি:

আরও একটি প্রচলিত কাহিনি হল - ক্রৌঞ্চ নামে এক গন্ধর্ব (স্বর্গীয় গায়ক) ছিলেন। যিনি তাঁর প্রতিভা নিয়ে খুব অহংকারী ছিলেন। একবার তিনি এক ঋষির পায়ের উপর দিয়ে হেঁটে যান। এতে ঋষি ক্রুদ্ধ হয়ে তাঁকে একটি বিশাল ইঁদুর হওয়ার অভিশাপ দেন। অভিশাপের ফলে ক্রৌঞ্চ ইঁদুর হয়ে পৃথিবীতে চলে আসেন এবং তাঁর ধ্বংসাত্মক স্বভাবের কারণে মানুষের ফসল ও সম্পদ নষ্ট করতে শুরু করেন। যখন সেই ইঁদুররূপী ক্রৌঞ্চ গণেশের আশ্রমে হানা দেন, তখন গণেশ একটি ফাঁস দিয়ে তাঁকে কাবু করেন। ক্রৌঞ্চ নিজের ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চান। গণেশ তখন তাঁকে ক্ষমা করে বলেন, 'তুমি এখন থেকে আমার বাহন হবে।' সেই থেকেই ইঁদুর গণেশের বাহন।

প্রতীকী অর্থ:

১. অহংকারের বিসর্জন:

ইঁদুর অত্যন্ত ছোট হলেও খুবই ক্ষিপ্র এবং যেকোনও জায়গায় ঢুকে যেতে পারে। সেইসঙ্গে, ছোট্ট এই প্রাণীটি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিজের ধারাল দাঁত দিয়ে নষ্ট করতে সক্ষম। অন্যদিকে গণেশ হলেন জ্ঞান ও প্রজ্ঞার প্রতীক। এই বিশাল শরীরের দেবতাকে একটি ছোট ইঁদুর বহন করে। যার প্রতীকী অর্থ হল - জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দিয়ে যেকোনও ক্ষুদ্র মানসিকতা বা ধ্বংসাত্মক শক্তিকে বশ করা যায়।

২. মনের প্রতীক:

অনেক পণ্ডিত মনে করেন, ইঁদুর হল মানব মনের প্রতীক। মন খুব চঞ্চল এবং তা নানা ধরনের কামনা-বাসনার পিছনে ছুটে বেড়ায়। ঠিক যেমন ইঁদুর সব সময় কিছু না কিছু খুঁজতে থাকে। গণেশ ইঁদুরের উপর বসে আছেন, যার অর্থ হল - তিনি চঞ্চল মন এবং কামনা-বাসনা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম।

সুতরাং, বাহন হিসাবে ইঁদুরকে বেছে নেওয়ার মাধ্যমে গণেশ দেখিয়েছেন যে তিনি কেবল বাধা দূর করেন না। বরং, অহংকার, ক্ষয় এবং চাঞ্চল্য়কে বশ করে জীবনের ভারসাম্য রক্ষা করতে পারেন।

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement