অনেকেই বিষ্ণুর দশাবতার বা শিবের নানা রূপের কথা জানেন। কিন্তু জানেন কি, গণপতিরও ১২টি বিশেষ রূপ আছে, যাঁরা বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীতে এসেছিলেন অসুরদের বিনাশ করতে? মুদ্গল পুরাণ ও গণেশ পুরাণে এই ১২টি অবতারের কথা বলা আছে, আর তাঁদের কাহিনিগুলি যেন একের পর এক রোমাঞ্চকর গল্প।
গণেশ পুরাণের সেই চার অবতারের গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। সত্যযুগে দেবান্তক ও নরান্তক নামের দুই অসুর ত্রিলোক জুড়ে ত্রাসের রাজত্ব শুরু করেছিল। তাদের থামাতে মহোৎকট বিনায়ক রূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন গণেশ। দশভূজ আর রক্তবর্ণ এই অবতারটি অন্ন দানা ছুড়ে মুহূর্তেই বধ করেন অসুরদের।
এরপর ত্রেতাযুগে সিন্ধু নামক এক দৈত্য অমরত্বের বর পেয়ে ত্রিলোককে অস্থির করে তুললে ময়ূরেশ্বর রূপে আসেন গণপতি। তাঁর বাহন ছিল ময়ূর, যা পরে তিনি তার ভাই কার্তিকেয়কে উপহার দেন। এই রূপেই তিনি সিন্ধুর উদর থেকে অমৃত কলস বের করে তাকে পরাজিত করেন।
সিন্দুরাসুর নামের এক অসুরকে দমন করতে গজানন রূপে এসেছিলেন গণেশ। তাঁর শরীরের রক্তবর্ণ আর সিঁদুরের প্রলেপ আসলে সিন্দুরাসুরের রক্ত, যা দিয়ে তিনি স্নান করে তাকে চিরতরে বিনাশ করেছিলেন। এই কারণেই গণেশকে সিঁদুর অর্পণ করা হয়।
সবশেষে কলিযুগের শেষে আসবেন ধূম্রকেতু, যিনি নীল অশ্বে চড়ে পাপীদের দমন করে নতুন সৃষ্টিচক্রের পথ দেখাবেন।
মনের ঈর্ষাকে বিনাশ করতে এসেছিলেন বক্রতুণ্ড, যিনি মৎসাসুরকে পরাজিত করে তাকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। মৎসাসুর দমনে সিংহ বাহনে এসেছিলেন গণেশ। শিক্ষা দিয়েছিলেন, ঈর্ষার দহন শেষ হয় কেবল ধৈর্য ও প্রজ্ঞায়।
অহংকার (মদাসুর) দমন করতে এসেছিলেন একদন্ত, যিনি অহংকারী অসুরকে পাতাললোকে পাঠিয়েছিলেন।
মোহাসুরকে (মোহ) হারাতে এসেছিলেন মহোদর, যিনি জ্ঞানের কাছে মোহের পরাজয় দেখিয়েছিলেন। মোহ যতই প্রবল হোক, জ্ঞানের আলো তার সীমা টেনে দেয়।
লোভাসুরকে (লোভ) পরিশুদ্ধ করে পাতাললোকে পাঠিয়েছিলেন গজানন।
লম্বোদর ক্রোধাসুরকে পরাজিত করে ত্রিলোককে শান্ত করেছিলেন। বার্তা দেন, অগ্নি যতই প্রজ্বলিত হোক, স্থিরতা তার প্রতিষেধক।
কামাসুরকে (কাম) পরাস্ত করতে এসেছিলেন বিকট। নিজের ভুল বুঝতে পেরে যখন কামাসুর ক্ষমা চাইলেন, বিকট অবতার তাকেও ক্ষমা করে দেন। অর্থাৎ অশান্ত কামনা কেবল সর্বনাশ ডেকে আনে।
বিঘ্নরাজ রূপে এসে গণেশ শুধুমাত্র একটি ফুল ছুঁড়েই অহংকারী মমাসুরকে কাবু করে ফেলেছিলেন।
অভিমানাসুরকে পরাজিত করতে এসেছিলেন ধূম্রবর্ণ। (এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।)