প্রতীকী চিত্র
আশ্বিন মাসের কৃষ্ণ পক্ষ জুড়ে চলে পিতৃ পক্ষ। এই ১৫ দিনে পূর্বপুরুষদের উদ্দেশে শ্রাদ্ধ ও তর্পণ করার বিশেষ মাহাত্ম্য আছে। বিশ্বাস করা হয়, এই সময়ে মৃত পূর্বপুরুষেরা পৃথিবীতে ফিরে আসেন। তাঁদের তুষ্ট করলে আত্মা শান্তি পায়, আর সন্তুষ্ট হয়ে পরিবারকে আশীর্বাদ করেন সমৃদ্ধির জন্য।
সকাল হলেই রেডিওতে বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের উদাত্ত কণ্ঠস্বর ভেসে আসে, ‘আশ্বিনের শারদ প্রাতে…’ এই শব্দগুলি শুধু ভাষ্যপাঠ নয়, এ যেন এক নস্টালজিক সুর। এক মায়াবী ছন্দে সে সুর নিয়ে যায় ফেলে আসা দিনে, যেখানে অনেকের কাছেই তাঁদের পূর্বপুরুষদের স্মৃতি এখনও জীবন্ত। আজকের দিনে হয়তো তাঁরা আর বেঁচে নেই। মহালয়ার সকালে তাঁদের উদ্দেশে তর্পণ করা মানে শুধু জল অর্পণ করা নয়, এ যেন তাঁদের প্রতি হৃদয়ের গভীরে থাকা শ্রদ্ধা আর ভালবাসার এক নীরব প্রকাশ।
পিতৃ পক্ষের শেষ দিনই মহালয়া। দেবী পক্ষের সূচনা ঘটে এই দিনেই। বলা হয়, দেবীর চক্ষুদানও হয় মহালয়ার প্রভাতে। তাই মহালয়ার সকাল থেকেই শুরু হয় পিতৃ তর্পণ।
তর্পণ শব্দের অর্থই সন্তুষ্ট করা। মন্ত্রোচ্চারণ করে কুশ, তিল মেশানো জল, চাল, দুধ, সাদা ফুল একত্রে নিবেদন করা হয় পূর্বপুরুষদের উদ্দেশে। সাধারণত দক্ষিণ মুখে বসে, হাতে কুশ নিয়ে ‘ওম আগচ্ছন্তু মে পিতর, গ্রহন্তু জলাঞ্জলিম’ মন্ত্র পাঠ করে জল অর্পণ করতে হয়। শাস্ত্র মতে, এই ভাবে তর্পণ করলে আত্মা প্রশান্তি লাভ করে।
হিন্দু ধর্মে তর্পণের নানা প্রকারের উল্লেখ রয়েছে— দেব তর্পণ, ঋষি তর্পণ, মাতৃ তর্পণ, ভীষ্ম তর্পণ ইত্যাদি। তবে পিতৃ তর্পণই সবচেয়ে প্রচলিত। অনেকেই একে পিতৃযজ্ঞও বলেন।
এ বছর মহালয়া পড়েছে ২১শে সেপ্টেম্বর, রবিবার। অমাবস্যা তিথি শুরু হবে ২০ সেপ্টেম্বর রাত প্রায় ১১:৫৪ মিনিটে এবং শেষ হবে ২১ সেপ্টেম্বর রাত ১২:২৩:৪৬ মিনিটে। এ ছাড়াও, মহালয়ার দিন এই বছর আংশিক সূর্যগ্রহণও ঘটবে।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।