Maa Durga Color

শাস্ত্র মতে বাঙালির 'দুগ্গা' ঠাকুরের গায়ের রং কী? বেদ-পুরাণ কী বলছে

পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে দেবীর গাত্রবর্ণ হবে তপ্তকাঞ্চনের মতো বা অতসী ফুলের ন্যায়। কেমন সে রং? পটুয়ার হাতে গড়া মৃন্ময়ী কি সেই রূপেই চিন্ময়ী হয়ে ওঠেন?

Advertisement

আনন্দ উৎসব ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৪:২৪
Share:

প্রতীকী চিত্র

দেবী দুর্গা হলেন মাতৃশক্তি। সোনাবরণ, লাবণ্যবতী রূপ তাঁর। শরতে চারটি দিনের জন্য ভুবনমোহিনী রূপ নিয়ে তিনি আসেন। কেমন তাঁর গাত্রবর্ণ? কী বলছে বেদ-পুরাণ-শাস্ত্র?

Advertisement

পৌরাণিক কাহিনি বলছে, দুর্গা হবেন অতসী পুষ্পবর্ণা। পল্লি বাংলায় যে অতসী ফুল দেখা যায়, তার রং সোনার মতো উজ্জ্বল। তেমনই হবে দেবীর গড়ন। ঠিক সে ভাবেই আবহমানকাল থেকে দুর্গা গড়েন বাংলার মৃৎশিল্পীরা।

মৎসপুরাণ মতে দেবী তপ্তকাঞ্চনবর্ণা। অর্থাৎ উত্তপ্ত সোনার (সোনা গলালে তপ্ত তরল সোনার যে রঙ হয়) মতো তাঁর গায়ের রং। দুর্গার ধ্যান মন্ত্রে তাঁর তপ্তকাঞ্চনবর্ণা রূপের কল্পনা করা হয়। বৃহদ্ধর্মপুরাণ অনুযায়ী, রামের জন্য দুর্গাপুজোর বন্দোবস্ত করেছিলেন ব্রহ্মা। দক্ষিণায়ণ দেবতাদের নিদ্রাকাল তাই বোধন (অকাল বোধন) করতে হবে। দেবী কুমারীর বেশে এসে ব্রহ্মাকে বিল্ববৃক্ষমূলে, মানে বেল গাছের কাছে দুর্গার বোধন করতে বলেন। দেবতারা মর্ত্যে এসে দেখেন, এক দুর্গম স্থানে বেল গাছের সবুজ পাতার মধ্যে ঘুমিয়ে রয়েছে একটি তপ্তকাঞ্চনবর্ণা বালিকা। ব্রহ্মার বুঝতে দেরি হয়নি যে, এই বালিকাই দুর্গা। বোধন স্তবে সেই বালিকাকে জাগিয়ে তোলেন ব্রহ্মা। বালিকা রূপী দেবী দুর্গাও তপ্তকাঞ্চনবর্ণা।

Advertisement

যুগ যুগ ধরে দেবীর গাত্রবর্ণের বর্ণনায় গৌরবর্ণা, স্বর্ণবর্ণা, পীতবর্ণা ইত্যাদি বিশেষণ ব্যবহৃত হয়। এমনও বলা হয় যে, শিবজায়া উমার দেহের রং হবে শিউলি ফুলের বোঁটার মতো। কিন্তু শুধুই কি সোনার মতো উজ্জ্বল রূপে দুর্গা পূজিতা হন বাংলায়? বঙ্গদেশ বৈচিত্রের আধার। প্রতি বাঁকে বাঁকে ব্যতিক্রম। লাল, নীল এমনকী কৃষ্ণবর্ণের দুর্গারও আরাধনা হয় বহুত্ববাদের জন্মভূমি বাংলায়।

নদিয়ায় নবদ্বীপের যোগনাথতলার ভট্টাচার্য বাড়িতে রক্তবর্ণা দুর্গার পুজো হয়।

হুগলির উত্তরপাড়ার ভট্টাচার্য বাড়ি এবং বাঁশবেড়িয়ার কাঠঘোড়া লেনের রায় পরিবারে লাল দুর্গার পুজো হয়। কৃষ্ণনগর নাজিরাপাড়ার চট্টোপাধ্যায় বাড়ির দুর্গা আবার নীল। বেলেঘাটার রামকৃষ্ণ নস্কর লেনের ভট্টাচার্য বাড়ির দুর্গার গায়ের রঙ কালো। নদিয়া জেলার হাঁসখালির বাহিরগাছি গ্রামে ঘোর অমাবস্যার রাতের মতো কালো রঙের দুর্গা পুজো পান। ক্যানিংয়ের ভট্টাচার্য পরিবারের দুর্গা প্রতিমার মুখের রঙ কালো, বাকি দেহ বাদামি। কোথাও অগ্নিকাণ্ড, কোথাও প্রতিমা শিল্পীর ভুল গাত্রবর্ণের নিরিখে ব্যতিক্রমী দুর্গার সৃষ্টি করছে। আদপে দেবী সোনার মতো উজ্জ্বল বর্ণের অধিকারিণী।

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement