সংগৃহীত চিত্র
চন্দননগরের সার্কাস মাঠ সর্বজনীন জগদ্ধাত্রী পুজো মানেই এক অন্য উন্মাদনা। ৫৫তম বর্ষে পা রেখে এই পুজো যেন শহরবাসীকে এক নতুন স্বপ্ন দেখাল। এ বার মণ্ডপের সজ্জায় মিশেছে পাহাড়ের শান্ত স্নিগ্ধতা—যা প্রবেশ মাত্রই দর্শকদের মনে এনে দেবে এক অনাবিল শান্তি। পুজো কমিটি প্রতি বছরই নতুন কিছু উপহার দেয়, আর সেই ধারা বজায় রেখেই যেন এ বার মণ্ডপে এক আধ্যাত্মিক পরিবেশের সৃষ্টি করা হয়েছে।
পাহাড়ের মেজাজ নিয়ে মণ্ডপে প্রবেশ করতেই প্রথমে চোখে পড়বে সিদ্ধিদাতা গণেশের প্রতিমা। তার পাশেই রয়েছে দেবাদিদেব মহাদেবের বিশাল মূর্তি। আর একে বারে শেষে, গর্ভগৃহে অধিষ্ঠাত্রী দেবী জগদ্ধাত্রী। প্রতি বারের মতোই প্রতিমার উচ্চতা তাক লাগানোর মতো। এই বারের প্রতিমার নাম রাখা হয়েছে — 'রাজরানি'। সুবর্ণ অলঙ্কার, লাল বেনারসি শাড়িতে সেজে হাস্যময়ী দেবী যেন সত্যিই এক রাজকীয় রূপে বিরাজ করছেন। দেবীর মূর্তির ঠিক উপরেই স্থান পেয়েছেন জগন্নাথ দেব। চলছে অঘোরীদের লাইভ পারফর্মেন্স।
এ বারের মণ্ডপসজ্জার সৃজনে রয়েছেন স্বয়ং রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পী শ্রী গৌরাঙ্গ কুইল্যা। তাঁর নিপুণ হাতেই এই আধ্যাত্মিক মণ্ডপ জীবন্ত হয়ে উঠেছে। এই পুজো কেবল আরাধনাই নয়, এই পুজোয় আছে এনটারটেন্টমেন্ট-এর রসবোধ, আছে আকর্ষণ আর ছন্দ। ১৯৭২ সালে চার জন স্বপ্নদর্শী মানুষ — দিলীপ চক্রবর্তী, অলোক চক্রবর্তী, রতন পাল এবং গণেশ দে — মিলে এই পুজোর প্রতিষ্ঠা করেন। সেই সময় বাঁশ আর টুনি আলোয় মণ্ডপ তৈরি হলেও, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এটি এখন চন্দননগরের অন্যতম থিম পুজোর মর্যাদা পেয়েছে।
এই কমিটির ঐতিহ্য শুধু পুজোতেই থেমে নেই। রক্তদান শিবির থেকে শুরু করে সারা বছর ধরে দুঃস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ানো— মানবতার সেবায়ও সার্কাস মাঠের ভূমিকা অনস্বীকার্য। ১৯৮৪ সালে চন্দননগর কেন্দ্রীয় জগদ্ধাত্রী পুজা কমিটির অধীনে নিবন্ধিত হওয়ার পর এর জনপ্রিয়তা কেবল বেড়েই চলেছে। ২৫ বছর পূর্তিতে, ১৯৯৭ সালে, ৭০ ফুট উঁচু ওয়াশিংটন পার্লামেন্টের আদলে তৈরি মণ্ডপটি আজও এক ঐতিহাসিক মাইলফলক।
'প্রথাকে সম্মান জানিয়ে সৃষ্টিশীলতাকে উদযাপনের' এই যাত্রাপথেই সার্কাস মাঠের জগদ্ধাত্রী পুজো প্রতি বছর হাজার হাজার দর্শনার্থীকে মুগ্ধ করে চলেছে।
কোথায় হয় এই পুজো?
ঠিকানা: ১৫, মানকুন্ডু স্টেশন রোড, তেমাথা, মানকুন্ডু, চন্দননগর, পশ্চিমবঙ্গ ৭১২১৯৬।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।