সিউড়ি পুলিশ লাইনে দুর্গাপুজো প্রতি বারই হয়। তবে জাঁকজমক থাকত না। সেই পুজোই এ বার থিম ভাবনা এবং বাজেটে শহরের অন্যতম সেরা পুজো হাওয়ার দৌড়ে সামিল।
এ বার পুলিশ লাইনের পুজোর থিম ‘ঢোলকপুর’। কচিকাঁচাদের প্রিয় কার্টুন চরিত্র ছোটা ভীম এবং তার বন্ধু রাজু, কালিয়া, ছুটকি, জগ্গু, ঢোলু ভোলু সকলেই থাকে ঢোলকপুর রাজ্যে। গ্রাম, রাজবাড়ি, কার্টুন চরিত্র— পুরোটাই তুলে ধরা হবে মণ্ডপে।
প্রচলিত রাস্তা থেকে ভিন্নপথে হাঁটার উদ্যোগ নিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল। শহরবাসীর সামনেও সেই ভাবনা তুলে ধরতে এ বারই প্রথম পুলিশলাইনের সংরক্ষিত এলাকা ছেড়ে উল্টো দিকে চাঁদমারি প্যারেড গ্রাউন্ডে নিয়ে আসা হয়েছে পুজো। যাতে পুলিশকর্মী ও তাঁদের পরিবারের পাশাপাশি উৎসবে সামিল হতে পারেন আমজনতাও।
আরও পড়ুন: সিঁদুর খেলবেন তরুণী, সঙ্গে থাকবেন স্ত্রী
আরও পড়ুন: গ্রিনসিটি মডেলে সেজে উঠছে মণ্ডপ
জেলা পুলিশ সুপার বলছেন, ‘‘সকলে যাতে আনন্দ করতে পারেন সেই জন্যই এমন উদ্যোগ। তবে বাচ্চারা যাতে খুব আনন্দ পায়, সে দিকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।’’ এসপি-র সংযোজন, ‘‘যে ভাবে প্রস্ততি নেওয়া হয়েছে, তাতে শহরের সেরা পুজোর তালিকায় অবশ্যই থাকবে পুলিশ লাইনও।’’
থিম ভাবনা রূপ দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছেন শহরের প্রতিষ্ঠিত মণ্ডপশিল্পী সৌরেন্দ্র ভাণ্ডারী। সহযোগিতায় রয়েছেন মণ্ডপশিল্পী দেবাশিস মিত্র, আলোকশিল্পী পুরন্দরপুরের পিন্টু সাধু। প্রতিমার সঙ্গে মানানসই দৃশ্যপট আঁকছেন পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ার রাজেন দাস। দায়িত্বে থাকা শিল্পীরা জানান, মাসখানেক আগে তাঁদের ডাকা হয়েছিল। খোদ পুলিশ সুপারের ইচ্ছাতেই মণ্ডপ সাজবে।
সৌরেন্দ্রবাবু বলেন, ‘‘পুলিশ সুপার আমাকে ডেকে জানতে চেয়েছিলেন, কী ধরনের কাজ আমি করতে পারি। ঠিক হয় বাচ্চাদের প্রিয় কার্টুনেই সাজানো হবে মণ্ডপ। তখনই ছোটা ভীমের গ্রাম ঢোলকপুর গড়ার ভাবনা হয়।’’ তিনি জানান, মণ্ডপের মূল আকর্ষণ পাহাড়ের উপরে থাকা ঢোলকপুরের রাজবাড়ি। মণ্ডপে থাকবে ছোটা ভীম ও তার বন্ধু রাজু, কালিয়া, ছুটকি, জগ্গু, ঢোলু ভোলু এবং ঢোলকপুরের রাজা ইন্দ্রদেব বর্মা ও রাজকন্যা ইন্দুমতীও। পুজোয় আমন্ত্রিত ছোটা গণেশ, ছোটা কৃষ্ণ। এ ছাড়া রাজবাড়ি ঘিরে ওই কার্টুনে বর্ণিত ছোটা ভীমের বাড়ি, গাছপালা, পাহাড়, ঝরনা, প্রজাপতি জীবজন্তু এমনকী লাড্ডুর পসরা সাজিয়ে হাজির টুনটুন মাসিও। থাকছে দু’টি ট্রয়ট্রেন। সে গুলি তৈরির কাজ চলছে জোর কদমে।
কেমন হচ্ছে প্রতিমা? পুলিশ সুপার যখন বর্ধমানের দায়িত্বে ছিলেন, সেখানকার পুলিশ লাইনে একাধিক বার মণ্ডপসজ্জার দায়িত্ব পেয়েছিলেন কাটোয়ার দৃশ্যপট শিল্পী রাজেন দাস। এ বার বীরভূমের দায়িত্ব তাঁর কাঁধে। তিনি বলেন, ‘‘রাজবাড়ির মধ্যে একেবারে প্রাকৃতিক পরিবেশ। তিনটি হাতির পিঠে সওয়ার হবেন দেবী দুর্গা ও তাঁর সন্তানেরা। সেটাই ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করছি। আসা করি, বাচ্চাদের খুব ভাল লাগবে।’’
কী বলছেন পুলিশকর্মীরা? তাঁদের কথায়, ‘‘পুলিশ লাইনের আবাসনে থাকে ১৯০টি পরিবার। এই পুজো আগে এত ধুমধাম করে হতো না। অসুবিধা ছিল সংরক্ষিত এলাকা হওয়ার জন্যেও। এ বার অন্য রকম পুজো প্রস্ততি ঘিরে সকলেই খুশি। বিশেষ করে পুলিশকর্মীদের সন্তানেরা। আনন্দ বাড়াতে থাকছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও।