Ananda Utsav 2019

বিদেশ হয়ে গেল আজন্মের দেশ

আজ চন্দনারা দেশহীন। অসমের নাগরিকপঞ্জিতে নাম নেই চন্দনা দের।

Advertisement

নমিতেশ ঘোষ

কোচবিহার শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৮:৪০
Share:

কাশফুল

দূরে তোর্সার পাড় ঘেঁষে কাশফুল ফুটেছে। ওই তো দূরে ছোট্ট পুকুরে শালুক-পদ্ম পাতা জড়াজড়ি করে আছে। সদ্য কুড়ি ফুটতে শুরু করেছে। আকাশের দিকে তাকালে কেমন জানি আনন্দ খেলে ওঠে মনে। পেঁজা তুলোরে মতো মেঘ হাতছানি দিয়ে ডাকে। ছুঁতে ইচ্ছে করে। চন্দনা, বাপি, রতন’রা ছুটতে থাকে। মনে হয় ওই তোর্সা নদীর পরেই মেঘেদের সারি। আরেকটু কাছে গেলেই হাতের নাগালে। ট্রেনের আওয়াজ ভেসে আসে। বাড়ির পাশ দিয়ে রেলপথ চলে গিয়েছে অনেক দূরে। চন্দনা উঁকি দেয়, চলতে চলতে ট্রেনটি একসময় রেলপথ ধরে হারিয়ে যায়। দেখতে ইচ্ছে করে, খুব দেখতে ইচ্ছে করে আবারও ওই ট্রেনটিকে। উদাস মন নিয়েই কুমোরটুলির দিকে ছুটতে থাকে চন্দনারা।

Advertisement

জগজ্জননী আসবেন। আর দেরি নেই। হাতে আর কয়েকটা দিন। কুমোরটুলির রাস্তায় সারি সারি দেবীর মূর্তি তৈরি হচ্ছে। কোনওটায় খড়-মাটির প্রলেপ পড়ছে। কোনওটায় বসছে মুখের অবয়ব। তুলির টানও পড়ছে একটি-দুটিতে।

চন্দনারা কড় গুণতে শুরু করে। বাড়ি ফিরে আসে, মায়ের সঙ্গে খুনসুটিতে মেতে ওঠে। বার বার বলে ওঠে, “মা কবে নতুন জামা কিনব।” বাবাকে জড়িয়ে ধরে বারে বারে। তোর্সা বইতে থাকে তাঁর নিজস্ব গতি হয়। চন্দনা বড় হয়। নতুন বাড়ি হয় তাঁর। তোর্সা পেরিয়ে, জঙ্গল পেরিয়ে, হাইওয়ে ধরে এগোতে এগোতে ব্রহ্মপুত্রের ধারে। তখন থেকে বাপি’রা অপেক্ষায় বসে থাকে। যেন মেয়ের অপেক্ষাতেই বসে থাকে কোচবিহার। অসম থেকে ছেলেমেয়ে নিয়ে চন্দনা’রা বাড়ি ফেরে। ওই বছরে একদিন। এভাবেই কেটে গিয়েছে তিন কাল। আজ চন্দনারা দেশহীন।

Advertisement

আরও পড়ুন:হারিয়ে গেল শহরের সেই পুজোর দর্জিরা​

আরও পড়ুন:রামধনু-গরিমায় ভরা আদি বালিগঞ্জ সর্বজনীনের পুজো মণ্ডপ

অসমের নাগরিকপঞ্জিতে নাম নেই চন্দনা সেনগুপ্তের। শুধু চন্দনা নন, নাসিমা, আর্জিনা তাঁদের কারও নামে নেই। তাঁরা আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। মনে পরে সেই তোর্সা নদীর কথা। ছোট্ট পুকুরে শাপলা তুলতে হাঁটু জলে নেমে পড়ার কথা। মনে পড়ে সাইকেল নিয়ে স্কুল, স্কুল থেকে কুমোরটুলি। দিনশেষে ছোট্ট বাড়িতে ফেরে একবার মা-বাবার কোল চেপে বসা। কই কখনও তো কেউ বলেনি, “ভারত আমার দেশ নয়।” কখনও তো কেউ বলেনি, “এই বাড়ি, এই মাটি, এই আকাশ, এই নদী আমার নয়।” কই কখনও তো কেউ বলেনি, “এই স্কুল, এই পথ, এই বাতাস আমার নয়।” তাহলে আজ কিসের তালিকায় নাম উঠবে তাঁর। চন্দনারা ভাবতে পারে না। মনে মনে বিড় বিড় করে বলেন তাঁরা,এ কেমন দিন এল আজ? এমন করে সব কেড়ে নিচ্ছে কেন?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন