Durga Puja 2019

গঙ্গোপাধ্যায় পরিবারের দুর্গাপুজো বন্ধ হয়নি বন্যাতেও

১১০০ বঙ্গাব্দে গঙ্গোপাধ্যায় পরিবারের পূর্বপূরুষ চন্দ্রশেখর গঙ্গোপাধ্যায় প্রথম এই পুজো শুরু করেন।

Advertisement

নুরুল আবসার

উদয়নারায়ণপুর শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১১:৪৫
Share:

প্রস্তুতি: চলছে কাঠামো তৈরি। নিজস্ব চিত্র

আদতে পারিবারিক দুর্গাপুজো। তবে কালের নিয়মে তা ‘বারোয়ারি’ হয়ে গিয়েছে। এই পরিবারের শরিক বর্তমানে অনেক। তবে পুজোর সময় এলে তাঁরা এক হয়ে যান‌। বছর ভর চাঁদা দিয়ে তহবিল গড়েন। সেই টাকাতে হয় পুজো। এভাবেই চলে আসছে হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরের গজার গঙ্গোপাধ্যায় পরিবারের পুজো।

Advertisement

চারদিন ধরে ধুমধাম করে হয় পুজো। আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও কবিতা পাঠের। একসময়ে এই পুজোয় গান গাইতে এসেছিলেন রবীন মজুমদারের মতো শিল্পী। সেই স্মৃতিচারণে আজও মজেন পরিবারের সব থেকে বয়স্ক শরিক ৮৫ বছরের বিশ্বরূপ গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর দাবি পুজো এ বছর পড়ল ৩২৬ বছরে।

১১০০ বঙ্গাব্দে গঙ্গোপাধ্যায় পরিবারের পূর্বপূরুষ চন্দ্রশেখর গঙ্গোপাধ্যায় প্রথম এই পুজো শুরু করেন। তিনি জমিদার না হলেও অনেক ভূসম্পত্তির মালিক ছিলেন। এলাকাটি বন্যাপ্রবণ। একাধিকবার গ্রাম ভেসে গিয়েছে দামোদরের বন্যায়। কিন্তু পুজো কোনও বছর বন্ধ হয়নি। পুজো হয় স্থায়ী দুর্গাদালানে। প্রথমে এটি ছিল মাটির। ছাউনি ছিল টিনের। পরে এটি পাকা করা হয়। প্রতিমা একমেড়ে। পুজো শুরুর সময়ে যে কুম্ভকার প্রতিমা গড়েন, যে ব্রাহ্মণ পুজো শুরু করেছিলেন আর যে ঢাকিরা বাজিয়েছিলেন, তাঁদের উত্তরসূরীরাই এখনও সেই কাজ করেন।

Advertisement

পুজোয় এক সময়ে কলকাতার বিশিষ্ট শিল্পীরা গান গাইতে আসতেন। বিশ্বরূপবাবু বলেন, ‘‘রবীন মজুমদার যখন তাঁর কেরিয়ারের তুঙ্গে তখন তিনি এখানে গান গেয়ে গিয়েছেন। সেই স্মৃতি ভোলার নয়।’’ পুজোর সময়ে দরিদ্রনারায়ণসেবা হত। সেই জাঁক আর না থাকলেও নিয়ম কিন্তু পালিত হয়ে আসছে। স্থানীয় শিল্পীদের নিয়ে হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বসে কবিতা পাঠের আসর।

গঙ্গোপাধ্যায় পরিবার বর্তমানে প্রায় ১৫টি শরিকে ভাগ হয়ে গিয়েছে। অনেকে কলকাতায় থাকেন। বেশিরভাগ থাকেন গ্রামেই। বিভিন্ন পেশায় তাঁরা নিযুক্ত আছেন। পুজোর উদ্যোক্তা মূলত এখানে যাঁরা থাকেন তাঁরাই। ভানুদেব গঙ্গোপাধ্যায় নামে এক শরিক বলেন, ‘‘একটি পুকুর ও কিছু জমি আমরা আলাদা করে রেখেছি দুর্গাপুজোর জন্য। সেখান থেকে যে আয় হয় তা পুজোতে খরচ করা হয়। যদিও তাতে কুলায় না। সেই কারণে আমরা শরিকরা নিজেদের মধ্যে কমিটি করেছি। চাঁদা দিয়ে তহবিল গড়েছি। তাতে বাকি খরচ উঠে যায়।’’

এই গ্রাম মূলত কৃষি নির্ভর। তাঁত শিল্পের জন্যও গ্রামটি বিখ্যাত। অধিকাংশই নিম্ন মধ্যবিত্ত ও গরিব মানুষ। গ্রামে আরও চারটি সর্বজনীন ও দু’টি পারিবারিক পুজো হয়। তবে গ্রামবাসীরা ভিড় করেন গঙ্গোপাধ্যায় পরিবারের পুজোতেই। শুধু তাই নয়, আশেপাশের গ্রাম থেকেও দর্শনার্থীরা আসেন। পাশের গ্রামের ৬৬ বছরের বাসিন্দা তারকনাথ মেটে বলেন, ‘‘আমরা একসময়ে নিয়মিত এই পুজো দেখতে আসতাম। এখনও আসি।’’

পুজোর আগে সেজে ওঠে দুর্গা দালান। রাস্তাঘাটের ঝোপজঙ্গল সাফ করা হয়। আলো দিয়ে সাজানো হয় চারিদিক। ঐতিহ্যের সোনার কাঠির ছোঁয়ায় যেন জেগে ওঠেন দুর্গাদালান। প্রতিমার কাঠামো তৈরি হয়ে গিয়েছে। তাতে পড়েছে মাটির প্রলেপ। এ বার দেবীর আসার অপেক্ষা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন