সংগৃহীত চিত্র
উত্তর কলকাতার পোস্তা বাজার। গোটা বাংলার অর্থনীতির অন্যতম ধমনী এই এলাকা, যেখানে ব্যস্ততা কখনও থামে না। কিন্তু জগদ্ধাত্রী পুজোর চারটে দিন সেই ব্যস্ততাও যেন একটু থমকে দাঁড়ায়। বাজারের ব্যবসায়ীরা মিলিত ভাবে যে পুজো করেন, তার ইতিহাস পুরনো, আর আকর্ষণ প্রতি বছর নতুন। এ বছর, অর্থাৎ ২০২৫ সালে, পোস্তা বাজার মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশন-এর সেই জগদ্ধাত্রী পুজো আরও বেশি করে আলোচনার কেন্দ্রে। কারণ, উৎসবের আমেজে সামিল হলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
গত ২৮ অক্টোবর, মঙ্গলবার, তিনি এই মণ্ডপে এসেছিলেন। প্রথাগত ফিতে কাটার চেয়েও বড় ছিল তাঁর মানবিক উপস্থিতি। দেবীর সামনে প্রার্থনা জানানোর পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী সময় দেন স্থানীয় ব্যবসায়ী, শ্রমিক এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলতে। শহরের এই বাণিজ্য-কেন্দ্রের মানুষ জনের সঙ্গে তাঁর এই সাক্ষাৎ উৎসবের আবেগ আরও বাড়িয়ে দেয়। এই প্রসঙ্গে তিনি ঐক্যের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন, যেন জগদ্ধাত্রীর শক্তির আরাধনা আসলে সমাজের সকলের এক সঙ্গে থাকারই বার্তা।
মণ্ডপসজ্জা দেখলে মন ভরে যায়। জানা গিয়েছে, পুরো মণ্ডপটি সেজে উঠেছে মাটির উপরে করা আলপনার কাজে, যা এক গ্রাম বাংলার স্নিগ্ধতা নিয়ে এসেছে এই শহুরে বাজারে। এক প্রান্তে রয়েছে জগন্নাথ, সুভদ্রা ও বলরামের প্রতিমা। জগদ্ধাত্রীর মূর্তির পাশে এই তিন দেব-দেবীর উপস্থিতি যেন ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে এক সঙ্গে বাঁচার বার্তা দেয়। এই পুজোর নান্দনিকতা ও আবহের ভিডিও/ফটো সামাজিক মাধ্যমে বেশ ভাইরাল হয়েছে। সমাজমাধ্যমে অনেকেই এই পুজোকে এ বছরের কলকাতার সেরা জগদ্ধাত্রী প্যান্ডেলগুলির মধ্যে অন্যতম বলে উল্লেখ করেছেন। বোঝাই যায়, এই আয়োজন কেবল ব্যবসায়ীদের নয়, গোটা শহরের নজর কেড়েছে।
পোস্তার এই পুজো প্রতি বছরই ঐতিহ্য আর আধুনিকতার এক সুন্দর মিশ্রণ ঘটায়। মুখ্যমন্ত্রীও সেই ঐতিহ্যের প্রতি সম্মান জানিয়েই উৎসবের আবহে আনন্দের জোয়ার বইয়ে দেন। তিনি ব্যবসায়ীদের সতর্ক করেছেন আগুন লাগার মতো বিপদ থেকে বাঁচতে, একই সঙ্গে দিয়েছেন একতাবদ্ধ থাকার উপদেশ— “ভাগ হতে গেলে ভেঙে পড়তে হয়।” তাঁর এই বার্তা কেবল পুজোর মণ্ডপে নয়, ছড়িয়ে পড়েছে গোটা বড়বাজার অঞ্চলে, যেখানে সকলে মিলেমিশে এক সঙ্গে বাঁচেন এবং কাজ করেন। পোস্তার জগদ্ধাত্রী যেন এ বছর শুধু শক্তি আর সংহতির দেবী নন, তিনি যেন মিলন আর ভালোবাসার প্রতীক।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।