প্রতীকী চিত্র।
জগদ্ধাত্রী পুজো মানেই হুগলি নদীর তীরে অবস্থিত চন্দননগরে আলোর জাদুকরি মেলা! সুউচ্চ প্রতিমা আর চোখ ধাঁধানো আলোকসজ্জার জন্য এই শহরের খ্যাতি বিশ্ব জোড়া। তবে গত কয়েক বছর ধরে এই উৎসবে এক নতুন ধারা যুক্ত হয়েছে — তা হল থিমের বৈচিত্র্য। যা এখন মণ্ডপ ছাড়িয়ে প্রতিমার শোলার সাজেও জায়গা করে নিয়েছে।
শোলার সাজে পৌরাণিক কাহিনি থেকে লোকশিল্প:
চন্দননগরের সাবেকি প্রতিমাগুলিতে ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিক থিম ভাবনার এই সংমিশ্রণ দর্শকদের জন্য নতুন আকর্ষণ জোগাচ্ছে।
পৌরাণিক আখ্যান: বেশ কিছু বারোয়ারি পুজোয় প্রতিমার চালচিত্রে শোলার কারুকার্যের মাধ্যমে রামায়ণ, মহাভারত এবং বিষ্ণুর দশাবতারের মতো পৌরাণিক কাহিনি ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে। যেমন - মধ্যাঞ্চল বারোয়ারির এ বারের থিম বিষ্ণুর দশ অবতার।
বাংলার সংস্কৃতি: বাংলার সমৃদ্ধ লোকশিল্প ও সংস্কৃতিও উঠে আসছে মায়ের সাজে। পাদ্রি পাড়ার থিম এ বার বাংলার স্থাপত্য, বিষ্ণুপুরের ডোকরা এবং টেরাকোটার মতো লোকশিল্পের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে।
সমাজ ও প্রকৃতি: কোনও কোনও পুজো কমিটি আবার সামাজিক বা পরিবেশ সচেতনতামূলক বার্তা দিচ্ছে। যেমন, খলিসানি বারোয়ারিতে এ বার সবুজায়ন বা বৃক্ষ রোপণের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে থিম হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।
বাঙালির পার্বণ: কুণ্ডুঘাট দালানের মতো বারোয়ারিগুলিতে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণকে মায়ের চালচিত্রে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে।
চালচিত্রে থিমের নেপথ্য কারণ:
চন্দননগর কেন্দ্রীয় জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, গত চার বছর ধরে মায়ের অঙ্গসজ্জায় শোলার সাজে এই থিম বৈচিত্র্যের প্রভাব বেশি করে বাড়তে শুরু করেছে। মূলত, ২০২১ সাল থেকে করোনা পরিস্থিতির কারণে যখন শোভাযাত্রা বন্ধ ছিল, তখন পুজো কমিটিগুলি থিমের পিছনে খরচ বাড়াতে শুরু করে। সেই থেকেই থিম ও অভিনব শোলার সাজ দর্শকদের কাছে আরও বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে।
বর্ধমানের কাটোয়া এলাকার বনকাপাসি গ্রাম থেকে আসা শয়ে শয়ে শিল্পীরা দিনরাত এক করে এই নতুন শিল্পকলা ফুটিয়ে তুলতে ব্যস্ত। এই থিম-নির্ভর শোলার কাজ আলোর শহরের জগদ্ধাত্রী পুজোকে এক নতুন মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছে। যা দেখতে জেলা, রাজ্য পেরিয়ে দেশ-বিদেশ থেকেও পর্যটকদের ভিড় বাড়ছে।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।