প্রাচীনত্বের নিরিখে কলকাতার বারোয়ারি পুজোগুলিকে পিছনে ফেলে দেবে হুগলির বুড়িমাতলা আঞ্চলিক সার্বজনীন দুর্গোৎসবের মাতৃ-আরাধনার আয়োজন।
উদ্যোক্তাদের দাবি অনুসারে, এই পুজো শুরু হয়েছিল ১৭৯৭ সালে। নেপথ্যে ছিল হুগলির বলাগড়ের বর্ধিষ্ণু গ্রাম হিসাবে পরিচিত সোমড়ার মুখোপাধ্যায় পরিবার। এই পরিবারের সদস্যরাই প্রথম এই এলাকায় 'বুড়িমার পুজো' শুরু করেন।
পরবর্তীতে একটা সময় এই পরিবারের কর্তা ছিলেন স্বর্গীয় পাঁচুগোপাল মুখোপাধ্যায়। তাঁর আমলে একটি বিশেষ ঘটনা ঘটে।
শোনা যায়, পাঁচুগোপাল পুজোর দায়িত্বে থাকাকালীনই বাংলার বুকে নেমে আসে দুর্ভিক্ষ। তাতে বহু মানুষ প্রাণ হারান। মূল্যবৃদ্ধি হয় আকাশছোঁয়া। ফলত, সে বছর পুজো না করার সিদ্ধান্ত নেন পাঁচুগোপাল মুখোপাধ্যায়।
কিন্তু, এর পরই দেবীর স্বপ্নাদেশ পান তিনি। 'বুড়িমা' তাঁকে নির্দেশ দেন, বাড়ির কলাগাছ কেটে তার থোড় নৈবেদ্য হিসাবে অর্পণ করতে এবং পুজো অব্যাহত রাখতে। সেই থেকে আজও এই পুজোয় কাঁচা থোড়ের নৈবেদ্য দেওয়া হয়।
পাঁচুগোপালের মৃত্যুর পর শুরু হয় আর এক সমস্যা। পুজোর দায়িত্ব এসে পড়ে তাঁর নাবালক সন্তানদের উপর। কিন্তু, অর্থাভাবে তাঁরা পুজো করতে অসমর্থ হন।
এর ফলে মূল পুজো শুরু হওয়ার শতাধিক বছর পর তা বন্ধ হওয়ার জোগাড় হয়! সেই সময় পুজোর দায়িত্বে কাঁধে তুলে নেন এলাকারই কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি।
এই ঘটনার জেরেই মুখোপাধ্যায় বাড়ির পুজো বারয়োরি পুজোর রূপ পায়। পুজো পরিচালনার দায়িত্ব পায় সোমড়া আঞ্চলিক সার্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি।
সেই ঐতিহ্য আজও বহমান। আজও এই পুজো বুড়িমার পুজো বা বুড়িমাতলার পুজো হিসাবে সমান জনপ্রিয়।
উদ্যোক্তাদের মতে, এই পুজোর ইতিহাসই আর পাঁচটা বারোয়ারি দুর্গোৎসব থেকে একে আলাদা করে দিয়েছে। যার সাক্ষী থাকতে সকলকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন তাঁরা। (এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।)