জৈষ্ঠ্য মাসের ফলহারিণী অমাবস্যা। এই তিথিতে মহা সমারোহে পূজিত হন দেবী কালিকা। বহু কালীমন্দিরে নিষ্ঠাভরে চলে দেবীর আরাধনা। সেই রাতেই সেজে ওঠে হাওড়া জেলার জগৎবল্লভপুরের অন্তর্গত পাঁতিহাল মহেশতলা। এখানে পূজিত হন দেবী মণ্ডলা কালী।
পুজোর আনুমানিক বয়স ৩৫০ বছরেরও বেশি। সাধারণত বারোয়ারি পুজো হিসেবেই চলে আসছে এটি। এর নেপথ্যের ইতিহাসও বেশ রোমহর্ষক।
কথিত, ৩৫০ বছর আগে পাঁতিহাল গ্রামের বিখ্যাত বনেদি পরিবার ঘোষালদের বাড়িতে দেবীর পুজো করা হত। সেই পরিবারের কোনও এক পূর্বপুরুষ তন্ত্র সাধনা করতেন। যাকে কেন্দ্র করে পরিবারে মতবিরোধ দেখা দিলে এক সময়ে বন্ধ হয়ে যায় পুজো।
সেই সময়ে গ্রামের আর এক সম্ভ্রান্ত পরিবার রায় বাড়ির জমিদার কালাচাঁদ রায়কে দেবী স্বপ্নাদেশ দেন, মণ্ডলা নামের একটি জায়গায় জলাশয়ের পাশে তাঁকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
ঘোষাল পরিবারের গৃহীসাধক রামশরণ ঘোষালের সাহায্যে কালাচাঁদ পঞ্চমুণ্ডির আসনে জৈষ্ঠ্য মাসের ফলহারিণী অমাবস্যায় দেবীর পুজো আরম্ভ করেন। ওই জলাশয়টি বর্তমানে পরিচিত মণ্ডলা পুকুর নামে। আর সেই থেকেই দেবীর নাম মণ্ডলা কালী।
একদম প্রথম দিকে মাটি ও হোগলা পাতার ছাউনি দিয়ে গড়া মন্দিরে পুজো হত কালীর। পরবর্তীতে রায় পরিবারের বেচারাম রায়ের হাত ধরে নির্মিত হয় মন্দির। তার সামনেই নাটমন্দির, বলিদানের জায়গা, মায়ের ঘাট ইত্যাদি তৈরি হয়েছে।
দেবী কালিকা এখানে সদাহাস্যময়ী। গাত্রবর্ণ নীল এবং গলায় মুণ্ডমালা। বাম পা প্রথমে এবং ডান পা পিছনে। শবরূপী শিবের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছেন স্বমহিমায়। দ্বিভুজা দেবীর এক হাতে নরমুণ্ড ও অন্য হাতে কারন পাত্র।
এই পুজোর বিশেষত্ব হল, এখানে দেবী প্রতিমা গড়া হয় ষোলো আনায়। অর্থাৎ প্রতিমা গড়তে যেমনই খরচ হোক না কেন, মাত্র ষোলো আনাতেই প্রতিমা বিক্রি করে আসছেন শিল্পীরা।
পুজোর এক মাস আগে বৈশাখী অমাবস্যায় দেবীর কাঠামো পুজো করা হয়। সেই সময়ে মৃৎশিল্পীরা প্রতি বছর বৈশাখী অমাবস্যায় দেবীর কাঠামোর উপরে প্রথম মাটির প্রলেপ দেওয়ার কাজ শুরু করতেন।
লোকমুখে প্রচলিত, কোনও এক বৈশাখের অমাবস্যায় কালাচাঁদ মামলা মোকদ্দমা নিয়ে বেজায় ব্যস্ত ছিলেন। সেই ফাঁকে দেবীর কাঠামোয় মাটিই পড়েনি! আদালতে যাওয়ার পথে এক বালিকাকে দেখতে পেয়েই খেয়াল হয়। ঘোষাল পরিবারের প্রিয়নাথ ঘোষালকে দিয়েই সে বার প্রতিমার কাঠামোয় মাটির প্রলেপ দেওয়া হয়েছিল। সেই থেকে এখনও পর্যন্ত ঘোষাল বংশের উত্তরপুরুষেরাই রীতি মেনে মাটির প্রলেপ দেওয়ার কাজটি করে আসছেন। ( ‘আনন্দ উৎসব ২০২৫’-এর সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছেন একাধিক সহযোগী। প্রেজ়েন্টিং পার্টনার ‘মারুতি সুজ়ুকি অ্যারেনা’। অন্যান্য সহযোগীরা হলেন ওয়েডিং পার্টনার ‘এবিপি ওয়ানস্টপ ওয়েডিং’, ফ্যাশন পার্টনার ‘কসমো বাজ়ার’, নলেজ পার্টনার ‘টেকনো ইন্ডিয়া ইউনিভার্সিটি’, ব্যাঙ্কিং পার্টনার ‘ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া’, কমফোর্ট পার্টনার ‘কার্লন’)। (এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ)।