প্রতীকী চিত্র।
একটু কাজ করলেই বা সোশ্যাল মিডিয়া ঘাঁটাঘাঁটি করলেই স্মার্টফোন গরম হয়ে যাচ্ছে? লিকুইড কুলিং সিস্টেম এই সমস্যার সমাধান হতে পারে। আসুন, ফোন ঠান্ডা রাখার এই ব্যবস্থা কী ভাবে কাজ করে জেনে নেওয়া যাক।
লিকুইড কুলিং সিস্টেম কী?
স্মার্টফোনে লিকুইড কুলিং সিস্টেমটি মূলত একটি ছোট আকারের 'হিট পাইপ' বা 'ভেপার চেম্বার' ব্যবহার করে কাজ করে। এই পাইপ বা চেম্বারটি এমন একটি বদ্ধ স্থান যেখানে খুব সামান্য পরিমাণে একটি বিশেষ শীতলীকরণ তরল (সাধারণত বিশুদ্ধ জল বা অন্য কোনও তরল) থাকে।
এই সিস্টেমের মূল উদ্দেশ্য হল, প্রসেসর বা অন্যান্য গরম হওয়া যন্ত্রাংশ থেকে তাপ শোষণ করে তা দ্রুত ফোনের অপেক্ষাকৃত শীতল অংশে ছড়িয়ে দেওয়া, যাতে ডিভাইসের তাপমাত্রা একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যেই থাকে।
এটি কী ভাবে কাজ করে?
এই পুরো প্রক্রিয়াটি বোঝার জন্য স্কুল লেভেলের পদার্থবিজ্ঞান সম্পর্কে সচেতন থাকলেই হবে। তাপের পরিবহন ব্যবস্থার উপর ভিত্তি করে এটি কাজ করে। প্রক্রিয়াটি ধাপে ধাপে বর্ণনা করা যাক।
তাপ শোষণ: যখন স্মার্টফোনে কোনও ভারী কাজ (যেমন - গেমিং বা ভিডিয়ো এডিটিং) চলে, তখন প্রসেসর থেকে প্রচুর তাপ উৎপন্ন হয়। এই তাপ সরাসরি হিট পাইপ বা ভেপার চেম্বারের একটি অংশে (যা ইভাপোরেটর নামে পরিচিত) পৌঁছোয়।
বাষ্পীভবন: হিট পাইপের মধ্যে থাকা সামান্য পরিমাণে শীতলীকরণ তরলটি এই তাপ শোষণ করে দ্রুত বাষ্পে পরিণত হয়। এই বাষ্পীভবনের জন্য প্রচুর তাপের প্রয়োজন হয়, যা প্রসেসর থেকে শোষিত হয়।
বাষ্পের স্থানান্তর: তরল বাষ্পে পরিণত হওয়ার পর উচ্চ চাপ সৃষ্টি হয়। এই চাপের কারণে বাষ্প দ্রুত পাইপের মধ্য দিয়ে অপেক্ষাকৃত শীতল অংশে (যা কন্ডেন্সার বা ঘনীভবনকারী নামে পরিচিত) চলে যায়।
ঘনীভবন: কন্ডেন্সার অংশটি ফোনের বাইরের দিকের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে, যা তুলনামূলক ভাবে শীতল। এখানে এসে বাষ্প তার তাপ ছেড়ে দেয় এবং আবার তরলে পরিণত হয়। এই তাপ ফোনের পিছনের অংশ দিয়ে বাইরে বেরিয়ে যায়।
পুনরাবর্তন: ঘনীভূত তরলটি তখন পাইপের ভিতর থাকা একটি বিশেষ কাঠামো (যেমন - সূক্ষ্ম জাল বা উইক) ব্যবহার করে কৈশিক ক্রিয়ার মাধ্যমে আবার ইভাপোরেটরে ফিরে আসে।
এই চক্রটি অবিরাম চলতে থাকে, যতক্ষণ না ফোনের তাপমাত্রা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। যেহেতু এই প্রক্রিয়াটি তাপের পরিবহন ব্যবস্থার উপর নির্ভর করে, তাই এতে কোনও পাম্প বা পাখা (ফ্য়ান) ব্যবহার করতে হয় না, যা ফোনের আকারকে ছোট রাখতে সাহায্য করে।
নামী সংস্থাগুলির স্মার্টফোনগুলিতে কী কী ধরনের লিকুইড কুলিং ব্যবস্থাপনা থাকে?
বিভিন্ন স্মার্টফোন কোম্পানি তাদের নিজস্ব উন্নত লিকুইড কুলিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে। যার মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হল -
শাওমি: শাওমি তাদের গেমিং এবং ফ্ল্যাগশিপ ফোনগুলিতে 'লুপ লিকুইডকুল টেকনোলজি' ব্যবহার করে। এই প্রযুক্তি প্রচলিত ভেপার চেম্বারের চেয়েও উন্নত। এতে একটি বিশেষ রিং আকৃতির ব্যবস্থা থাকে, যেখানে তরল ও বাষ্পের জন্য আলাদা চ্যানেল থাকে, যা তাপ অপসারণের কার্যকারিতা উল্লেখযোগ্য ভাবে বাড়িয়ে তোলে।
ওয়ানপ্লাস: ওয়ানপ্লাস তাদের ফ্ল্যাগশিপ মডেলগুলিতে 'অ্যাকটিভ ক্রায়োফ্লাক্স' নামক একটি তত্ত্ব নিয়ে কাজ করেছে। এই সিস্টেমে একটি পাম্প ব্যবহার করে তরলকে সক্রিয় ভাবে প্রবাহিত করা হয়, যা তাপকে দ্রুত অপসারিত করতে সাহায্য করে। যদিও এটি এখনও বাণিজ্যিক ভাবে সব ফোনে আসেনি, তবে এটি ভবিষ্যতে স্মার্টফোন কুলিংয়ের দিক নির্দেশক হতেই পারে।
রিপাবলিক অফ গেমার্স ফোন: গেমারদের জন্য তৈরি এই ফোনে একটি জটিল মাল্টি-লেয়ার কুলিং সিস্টেম থাকে, যার মধ্যে ভেপার চেম্বার এবং গ্রাফাইটের স্তর থাকে। কিছু মডেলে সক্রিয় কুলিংয়ের জন্য 'এক্সটারনাল ফ্যান' বা 'এয়ারোঅ্যাকটিভ কুলার' ব্যবহার করা যায়, যা সরাসরি তাপ নিষ্কাশনে সাহায্য করে।
স্যামসাং: স্যামসাং তাদের গ্যালাক্সি ফ্ল্যাগশিপ সিরিজগুলিতে ভেপার চেম্বার কুলিং ব্যবহার করে। তারা এতে উন্নত গ্রাফাইট শিট এবং জেল-ভিত্তিক থার্মাল ইন্টারফেস ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার করে, যা প্রসেসর থেকে তাপকে ভেপার চেম্বারে আরও দক্ষতার সঙ্গে স্থানান্তর করতে সাহায্য করে।
লিকুইড কুলিং সিস্টেম শুধুমাত্র স্মার্টফোন ঠান্ডা রাখতেই সাহায্য করে না, বরং প্রসেসরের কর্মক্ষমতাও অক্ষুণ্ণ রাখে। অতিরিক্ত তাপ প্রসেসরের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়, যাকে 'থার্মাল থ্রটলিং' বলা হয়। লিকুইড কুলিং এই থ্রটলিং প্রতিরোধ করে, ফলে ব্যবহারকারী দীর্ঘ সময় ধরে নির্বিঘ্নে স্মার্টফোন ব্যবহার করতে পারেন।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।