লেখকের উপরে হামলায় ক্ষোভ বাংলাদেশ জুড়ে

শনিবার বিকেলে সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠান চলাকালীন অন্তত দু’জন আততায়ী ছুরি নিয়ে শিক্ষাবিদ ইকবালের উপর হামলা চালায়। ছাত্ররা এক জনকে ধরে ফেললেও অন্য জন পালিয়ে যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঢাকা শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৮ ০২:০৩
Share:

আততায়ী: অনুষ্ঠানে ইকবালের পিছনে এ ভাবেই দাঁড়িয়েছিল আক্রমণকারী ফয়জুল। নিজস্ব চিত্র

বিশিষ্ট লেখক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক জাফর ইকবালের উপর হামলা জঙ্গিদের কাজ বলেই মনে করছে শেখ হাসিনা সরকার। ছাত্রদের হাতে ধরা পড়া এক আক্রমণকারী জেরায় পুলিশকে জানিয়েছে, জাফর ইকবাল ‘ইসলামের শত্রু’। তাই সে তাঁকে খুনের চেষ্টা করেছে। ধৃত এই মাদ্রাসা-ছাত্র ফয়জুল হাসান কোন জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত, বিভিন্ন জনকে জেরা করে পুলিশ তা খুঁজে বার করার চেষ্টা করছে।

Advertisement

শনিবার বিকেলে সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠান চলাকালীন অন্তত দু’জন আততায়ী ছুরি নিয়ে শিক্ষাবিদ ইকবালের উপর হামলা চালায়। ছাত্ররা এক জনকে ধরে ফেললেও অন্য জন পালিয়ে যায়। সিলেটের হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ইকবালকে হেলিকপ্টারে ঢাকায় নিয়ে এসে কম্বাইন্ড মিলিটারি হসপিটালে ভর্তি করা হয়। তাঁর মাথায় চারটি ক্ষত হয়েছে। এ ছাড়া বুক ও মুখেও আঘাত লেগেছে। তবে তিনি অনেকটাই ভাল আছেন বলে রবিবার তাঁর স্ত্রী ইয়াসমিন হক জানিয়েছেন। ইকবাল ও ইয়াসমিন দু’জনেই সিলেটের ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক।

জনপ্রিয় এই লেখকের উপর হামলায় বাংলাদেশ জুড়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন মৌলবাদ-বিরোধী মানুষ। সব কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে রবিবার বিক্ষোভ মিছিল বেরোয়। শনিবার সন্ধ্যায়ই ঢাকার শাহবাগ চত্বরে মশাল নিয়ে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেন গণজাগরণ মঞ্চের সদস্যরা। মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সর্বদা সরব জাফর ইকবাল বহু বার জঙ্গিদের হুমকি পাওয়ার কারণে দু’বছর ধরে তাঁকে পুলিশি পাহারা দেওয়া হচ্ছে। পুলিশ থাকা সত্ত্বেও এ ভাবে আক্রান্ত হওয়ায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির পক্ষে হাসান আজিজুল হক, কামাল লোহানি, আব্দুল গাফ্‌ফার চৌধুরী, শাহরিয়ার কবির, মুনতাসির মামুন-সহ বিশিষ্ট জনেরা একটি বিবৃতিতে জাফর ইকবালের উপর জঙ্গি হামলায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিবৃতিতে বলা হয়েছে— খুচরো জঙ্গি দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সাফল্য দাবি করলেও জঙ্গিদের মূল রাজনীতি ‘মওদুদিবাদ ও ওয়াহাবিবাদ’ যে বাংলাদেশে দিব্য সক্রিয় রয়েছে, এই হামলা তার প্রমাণ। অভিযোগ করা হয়েছে, ২০১৩-র ফেব্রুয়ারিতে হেফাজতে ইসলামির প্রধান আহমেদ শফি খোলা চিঠিতে জাফর ইকবালকে ‘নাস্তিক’ ও ‘মুরতাদ’ ঘোষণা করে এই ধরনের হামলা ও হত্যাকাণ্ডকে ধর্মের নামে বৈধতা দিলেও সরকার কোনও পদক্ষেপ করেনি।

Advertisement

রবিবার একটি অনুষ্ঠানে এই ঘটনার নিন্দা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘‘এটা ধর্মান্ধদের কাজ। নিরীহ মানুষকে খুন করে কেউ বেহশতে যেতে পারে না।’’ তিনি জানান— বাংলাদেশে এ ধরনের সন্ত্রাসবাদী কাজকর্ম চলতে দেওয়া হবে না, সে বিষয়ে সরকার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। শনিবার বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল আলমগির অভিযোগ করেছিলেন, ‘‘ঘোলা জলে মাছ ধরতে সরকারই এই হামলা ঘটিয়েছে।’’ এ দিন শাসক আওয়ামি লিগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তার জবাবে বলেন, ‘‘জঙ্গিরা জাফর ইকবালের উপর হামলা করেছে। আর বিএনপি-ই এই জঙ্গিদের পৃষ্ঠপোষক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন