কুয়েত বরাবরই বাংলাদেশের পাশে। এবার আরও কাছে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়বে একসঙ্গে। দু’টি দেশই মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে, মুসলিম উম্মাহর বড় চ্যালেঞ্জ সন্ত্রাস। যে কোনও মূল্যে তাকে নির্মূল করতেই হবে। গণতন্ত্রের ধ্বংস চাইছে সন্ত্রাসবাদ। লক্ষ্য, উন্নয়নের ডানা ছেঁটে স্থায়ী অন্ধকার প্রতিষ্ঠা। তাদের ইচ্ছে অপূর্ণই থাকবে। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বিকাশ রোখা যাবে না। কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী শেখ জাবের আল-মুবারক আল হামাদ আল সাবাহ ঢাকায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতে সেই অঙ্গীকারই করেছেন। বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিত শক্ত করতেও সাহায্যের হাত লম্বা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তাঁরা যে এক পালকের পাখি কথাবার্তায় স্পষ্ট।
একে একে দু’য়ে খুবই মিল। একাত্তরে বাংলাদেশ মুক্ত হওয়ার দশ বছর আগে স্বাধীন কুয়েত। ধীরে ধীরে অনেক বন্ধুর পথ পেরিয়ে গণতন্ত্রের রাস্তায়। কাজটা সহজ ছিল না। পশ্চিম এশিয়ায় গণতন্ত্র ‘অবাস্তব’। প্রতিবেশীরা যা পারেনি কুয়েত তা পেরেছে। মানতে পারেনি ইরাক। ১৯৯০ সালের ২ আগস্ট কুয়েত দখল করেছে। খুব ছোট দেশ কুয়েত। জনসংখ্যা মাত্র ২৯ লাখ। তাকে পকেটে পুরতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে ইরাক। রাষ্ট্রসংঘ কুয়েতের পাশে দাঁড়িয়েছে। তাদের সংযুক্ত বাহিনী শেষ পর্যন্ত কুয়েতকে বাঁচায়। হার মেনে ইরাক বাহিনী ফিরে যায়। যুদ্ধ থামাতে আন্তর্জাতিক সংকট কাটলেও ক্ষয়ক্ষতি কম হয়নি। হতাহত ৮৫ হাজার।
এর আগে শাত-এল-আরব জলপথের অধিকার নিয়ে ইরাক-ইরান যুদ্ধ ১৯৮০তে। দীর্ঘ আট বছর সংঘর্ষের পর শান্তি রাষ্ট্রসংঘের মধ্যস্থতায়। সন্ত্রাসই ইরাকের শক্তি। তাতেই বিশ্বে প্রভাব বিস্তারের ছক। কাউকেই রেহাই দেয় না। পাকিস্তানেও সন্ত্রাস রফতানিতে দ্বিধা নেই। আমেরিকায় ৯/১১ জঙ্গি হানার পর ইরাককে দুষ্টচক্রের অক্ষশক্তি বা ‘অ্যাক্সিস অব এভিল’ আখ্যা দেওয়া হয়। সেই অভিযোগেই ২০০৩-এর ২০ মার্চ আমেরিকার ইরাক অভিযান। ন’মাস পর আত্মগোপনকারী ইরাকি রাষ্ট্রপতি সাদ্দাম হুসেনের খোঁজ মেলে তিকরিতে। ১৭ দিন বাদে তাঁর ফাঁসি হয়। ২০০৪-এর ২৮ জুন ইরাক মুক্তি পায়। গণভোটে নতুন সংবিধান গৃহীত হয়। নির্বাচনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গড়ে উঠলেও ক্ষমতা থেকে যায় সেনাবাহিনীর হাতে।
ইরাকের ঘটনার আঁচ পড়ে কুয়েতে। ইরাক যে তাদের শান্তিতে থাকতে দেবে না, সে ধারণাটা অস্পষ্ট থাকে না। কুয়েত সন্ত্রাস বিরোধী জোট তৈরিতে ব্যস্ত হয়।বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক খুবই গভীর। কুয়েত জানে ইরাক যেমন তাদের জ্বালাচ্ছে, পাকিস্তান তেমন বাংলাদেশকে ছোবল মারতে ব্যস্ত। বাংলাদেশে সন্ত্রাস রফতানিতে পাকিস্তানের জুড়ি নেই।
সন্ত্রাস রুখতে অর্থনৈতিক ভিত শক্ত হওয়া দরকার। কুয়েত ধনী দেশ। অফুরন্ত তেল ভাণ্ডারে সমৃদ্ধ। বাংলাদেশের অর্থনীতি উন্নয়নমুখী হলেও অগ্রসর হতে আরও সাহায্যের দরকার। কুয়েত সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে। বাংলাদেশ-কুয়েতের মধ্যে চারটি চুক্তি স্বাক্ষরিত। সেখানে অর্থনীতি, বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্য, জ্বালানি, জনশক্তি রফতানি, সামাজিক, আইসিটি ক্ষেত্রে সহযোগিতায় প্রস্তুত কুয়েত। নিঃসন্দেহে এটা মৈত্রীর নতুন অধ্যায়।
কুয়েতের আত্মবিশ্বাস বাড়ছে। ২০১৫তে ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধে সেনা পাঠিয়ে সফল। সৌদি আরব কুয়েতের পাশে। দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গাঢ়। কুয়েতের তেল আছে, জল নেই। বাংলাদেশের অন্তহীন নদী, সীমাহীন সবুজ প্রকৃতি তাদের কাছে স্বপ্ন। উন্নয়নের লক্ষ্য পূরণে সেই সম্পদ কাজে লাগাতে সব রকম সাহায্য করবে কুয়েত।