রোহিঙ্গায় ক্ষোভ মাত্রা ছাড়াচ্ছে

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলায় বাংলাদেশিরাই এই মুহূর্তে সংখ্যালঘু! প্রায় একই চিত্র ৪৫ কিলোমিটার দূরের টেকনাফেও।

Advertisement

অগ্নি রায়

শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৮ ০২:১৬
Share:

ফাইল চিত্র।

যেন নিজভূমে পরবাসী।

Advertisement

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলায় বাংলাদেশিরাই এই মুহূর্তে সংখ্যালঘু! প্রায় একই চিত্র ৪৫ কিলোমিটার দূরের টেকনাফেও। এই দু’টি এলাকায় স্থায়ী বাসিন্দার অন্তত চার গুণ রোহিঙ্গা বসবাস করছেন এখানকার দুটি শিবির কুতুপালং এবং নয়াপাড়ায়। স্বাভাবিক ভাবেই কক্সবাজারের মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে, আর দুশ্চিন্তা বাড়ছে ঢাকার। কারণ কড়া নাড়ছে নির্বাচন। তার আগে এই বারো লক্ষ রোহিঙ্গাকে মায়ানমারে ফেরত পাঠানো যে সম্ভব নয় বিলক্ষণ বুঝছে সরকার। ফলে বাসিন্দাদের ক্ষোভ সামাল দেওয়াটা একটি বড় কাজ হয়ে দাঁড়াচ্ছে তাদের।

কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক ধরে এগিয়ে মূল শরণার্থী শিবির আসার অনেক আগে ডান দিকে শুরু হয়ে গিয়েছে রোহিঙ্গাদের ঘর সংসার। উখিয়া উপজেলার এই এলাকায় মোট শরণার্থী রয়েছেন প্রায় ৮ লাখ। অথচ এই উপজেলার স্থায়ী বাসিন্দার সংখ্যা বড় জোর আড়াই লক্ষ! প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম জানাচ্ছেন, ‘‘স্থানীয় মানুষ ক্ষুব্ধ। উখিয়ার গোটা এলাকাটিই ছিল পাহাড়ি জঙ্গল। এখন গাছ উপড়ে শিবির করতে হচ্ছে। পরিবেশে প্রভাব পড়ছে। ধসের সম্ভাবনাও বেড়েছে।’’

Advertisement

শরনার্থী শিবিরের আশেপাশে ক্ষোভের গুঞ্জন। এখানে কাজ করছে দেশ বিদেশের অজস্র এনজিও। ইউনিসেফ-এর সাদা তাঁবুতে পাহাড় ছয়লাপ। বিভিন্ন দেশের গাড়ি আসা যাওয়া করছে পণ্যসামগ্রী নিয়ে। আর তাদের ট্রাকের ধুলোয় অতিষ্ঠ হচ্ছেন স্থানীয় মানুষ। বছর পাঁচেক এই এলাকায় গাড়ি চালান শিমুল। এখন একটি এনজিও-র হয়ে উখিয়া থেকে কক্সবাজার সদরে কার্যত ডেলি প্যাসেঞ্জারি করছেন। বললেন, ‘‘সংলগ্ন এলাকার ঘরবাড়ি ভাড়া এক লাফে বেড়ে গিয়েছে। বিভিন্ন দেশের এনজিও এবং এজেন্সির কর্তাব্যক্তিরা ভাড়া নিয়ে থাকছেন। স্থানীয়রা দরকারেও এত টাকা ভাড়া দিতে পারছেন না। ইলিশ থেকে বাদাম ভাজা— আকাশ ছোঁয়া জিনিসের দাম। মজার ব্যাপার, কিছু রোহিঙ্গা ওই চড়া দামের ইলিশ কিনে খেতে পারলেও স্থানীয়রা পারছেন না।’’

রোহিঙ্গাদের একটা বড় অংশ কুতুপালং শিবিরের রাস্তা, পয়ঃপ্রণালী এবং ঘর তৈরির কাজে হাত লাগিয়ে দিনে চারশো টাকা উপার্জন করছেন। স্থানীয় দিনমজুরেরা হাত গুটিয়ে বসে। শরণার্থীদের চার সদস্যের পরিবার পাচ্ছেন প্রতিমাসে ৩০ কিলো চাল। পরিবার আর একটু বড় হলে চালের পরিমাণ ৬০ কিলো। দৈনন্দিন ব্যবহারের অঢেল জিনিসও পাচ্ছেন তাঁরা, যার উদ্বৃত্ত দিয়ে রীতি মতো দোকান খুলে বসেছেন।

সব মিলিয়ে যেন এক সমান্তরাল অর্থনীতি চলছে ৬ হাজার বর্গ একর পাহাড়ি জমি জুড়ে। আর ভোটের আগে সেটাই চরম অস্বস্তি তৈরি করেছে সরকারের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement