ন’দিনে নিহত ৮০

মাদক-বিরোধী অভিযান নিয়ে তপ্ত বাংলাদেশ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এ মাসের ১৯ তারিখে নিরাপত্তা বাহিনী মাদক-বিরোধী অভিযান শুরু করে। পুলিশ ও র‌্যাব ছাড়া সীমান্তরক্ষী বাহিনীকেও এ কাজে যুক্ত করা হয়। সেই রাত থেকেই মাদক চোরাচালানে অভিযুক্তদের গুলিবিদ্ধ দেহ পাওয়া যেতে শুরু করে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঢাকা শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৮ ০২:২৩
Share:

প্রতীকী ছবি।

নির্বাচনের বছরে নিরাপত্তা বাহিনীর মাদক-বিরোধী অভিযান নিয়ে উত্তাল বাংলাদেশ। এই অভিযানে দেশের নানা জায়গায় গত নয় দিনে অন্তত ৮০ জন প্রাণ হারিয়েছে। পুলিশের দাবি এরা সকলেই দাগি অপরাধী এবং মাদক চোরাচালানে যুক্ত। শনিবার রাত থেকে রবিবার পর্যন্ত নানা জায়গায় যে ১১ জনের মৃতদেহ মিলেছে, তার মধ্যে টেকনাফ পুরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর একরামুল হকও রয়েছেন। তিনি শাসক দল আওয়ামি লিগের সদস্য। পুলিশ জানিয়েছে, মায়ানমার থেকে সীমান্ত পেরিয়ে যে বিপুল পরিমাণে ‘ইয়াবা’ নামে মাদক ট্যাবলেট ঢোকে, একরামুল তার অন্যতম নিয়ন্ত্রক ছিলেন। তাঁর নামে বহু মামলা ছিল।

Advertisement

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এ মাসের ১৯ তারিখে নিরাপত্তা বাহিনী মাদক-বিরোধী অভিযান শুরু করে। পুলিশ ও র‌্যাব ছাড়া সীমান্তরক্ষী বাহিনীকেও এ কাজে যুক্ত করা হয়। সেই রাত থেকেই মাদক চোরাচালানে অভিযুক্তদের গুলিবিদ্ধ দেহ পাওয়া যেতে শুরু করে। সব ক্ষেত্রেই পুলিশের দাবি— হয় নিজেদের মধ্যে গোলাগুলি, না হয় আক্রান্ত পুলিশের পাল্টা গুলিতে তাদের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু নিহতদের পরিবারের অভিযোগ, অভিযুক্তদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে গুলি করে খুন করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। এ দিন কাউন্সিলরের মৃত্যু নিয়েও পুলিশের বয়ান— মাদক পাচারকারীরা জড়ো হয়েছে খবর পেয়ে নিরাপত্তা বাহিনী ঘিরে ফেললে দুষ্কৃতীরা গুলি চালাতে শুরু করে। পুলিশ পাল্টা গুলি চালায়। তার পরে বাকিরা পালিয়ে গেলেও একরামুলের গুলিবিদ্ধ দেহ মেলে।

তবে বিরোধী বিএনপি-র নেতা রুহুল কবির রিজভির অভিযোগ, ‘‘নয় বছর ধরে হাত গুটিয়ে বসে থাকার পরে সরকারের এই অভিযান আসলে বিরোধী দলের কর্মী-নেতাদের হত্যার পরিকল্পনা। গোটা দেশ জানে, কক্সবাজারে শাসক দলের এমপি নিজেই মাদক চোরাচালান চক্রের মাথা। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে কোনও অভিযান হবে না।’’ জাতীয় পার্টির প্রধান হুসেইন মহম্মদ এরশাদও অভিযানের সমালোচনা করে বলেছেন, ‘‘সংসদেই তো মাদক কারবারি বসে রয়েছে। তাকে তো ধরা হচ্ছে না!’’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল তার জবাবে বলেন, ‘‘কাউকে ছাড়া হবে না। ওই এমপি-র বিরুদ্ধে প্রমাণ মিললে তাঁরও শাস্তি হবে।’’ মন্ত্রীর দাবি, অভিযুক্তদের দলীয় পরিচয় না-দেখতে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাঁর কথায়, মানুষ এই অভিযানে খুশি। মাদকচক্র নির্মূল না-করা পর্যন্ত অভিযান চলবে।

Advertisement

মানবাধিকার সংগঠনগুলি অবশ্য ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড’-এর জন্য সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনীর সমালোচনায় সরব হয়েছে। তাদের বক্তব্য— ফিলিপিন্স ও লাতিন আমেরিকার একাধিক দেশে এ ভাবে হত্যাকাণ্ড চালিয়ে মাদকচক্র নির্মূল করার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। মাদক সমস্যা আদতে সামাজিক সমস্যা। হত্যাকাণ্ডে তার সমাধান হয় না। তা ছাড়া এই পন্থা গণতান্ত্রিকও নয়। বিচার পাওয়ার অধিকার সব নাগরিকের মৌলিক অধিকার। তা ছাড়া, রাষ্ট্রীয় বাহিনীর গণহত্যা জঙ্গিবাদের জন্ম দেয়। জঙ্গি সমস্যায় জর্জরিত বাংলাদেশে তা আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন