ফাঁসি হয়ে গেল জামাত নেতা মির কাসেমের

ফাঁসি হয়ে গেল একাত্তরে গণহত্যার পাণ্ডা, আল বদর বাহিনীর চট্টগ্রামের প্রধান মির কাসেম আলির। শনিবার রাতে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে ঢাকার কাশিমপুর কারাগারে প্রাণদণ্ড কার্যকর করা হল বাংলাদেশে জামাতে ইসলামির বিপুল অর্থ ভাণ্ডারের খাজাঞ্চি হিসেবে পরিচিত এই নেতার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঢাকা শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৪:০২
Share:

মির কাসেম আলি

ফাঁসি হয়ে গেল একাত্তরে গণহত্যার পাণ্ডা, আল বদর বাহিনীর চট্টগ্রামের প্রধান মির কাসেম আলির। শনিবার রাতে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে ঢাকার কাশিমপুর কারাগারে প্রাণদণ্ড কার্যকর করা হল বাংলাদেশে জামাতে ইসলামির বিপুল অর্থ ভাণ্ডারের খাজাঞ্চি হিসেবে পরিচিত এই নেতার।

Advertisement

একাত্তরে জামাতের ছাত্রনেতা মির কাসেম চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লায় ‘মহামায়া ভবন’ নামে সংখ্যালঘুদের একটি বাড়ি দখল করে ‘ডালিম হোটেল’ বানান। মুক্তিযোদ্ধা ও সংখ্যালঘু হিন্দু যুবকদের ধরে নিয়ে গিয়ে সেখানে নির্যাতন করে হত্যা করত কাসেমের বাহিনী। দেহ ফেলে দেওয়া হতো কর্ণফুলি নদীতে। পাক সেনারা ঢাকায় ভারতীয় সেনাদের কাছে আত্মসমর্পনের আগের রাতে কাসেম ও তার বাহিনী পালিয়ে গেলে স্থানীয় বাসিন্দারা এই হোটেল দখল করে বন্দিদের মুক্ত করেন।

এর পর গা-ঢাকা দেওয়া মির কাসেম সেনাশাসক জিয়াউর রহমানের আমলে ফের প্রকাশ্য রাজনীতি শুরু করেন। সৌদি আরব ও পাকিস্তানের কাছ থেকে পাওয়া বিপুল অর্থে কাসেম বাংলাদেশ ইসলামি ব্যাঙ্ক, ইবনে সেনা ট্রাস্ট, নয়া দিগন্ত সংবাদপত্র, দিগন্ত টেলিভিশন-সহ অজস্র বাণিজ্যিক সংগঠন গড়ে তোলেন বলে অভিযোগ। সরকারি হিসেব অনুযায়ী তাঁর সম্পদের পরিমাণ ১২ হাজার কোটি টাকা। বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করতে তিনি কোটি কোটি টাকা খরচ করে আন্তর্জাতিক লবিস্ট সংস্থা নিয়োগ করেন। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক জঙ্গি হানার পিছনেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ ও কাসেমের ফাঁসি রদের উদ্দেশ্য রয়েছে বলে দাবি করছেন গোয়েন্দারা।

Advertisement

কারাগারের সামনে জোরদার নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আদালত ২০১৪-র মার্চেই মির কাসেমকে প্রাণদণ্ড দিয়েছিল। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টও গণহত্যায় দোষী সাব্যস্ত করে সেই দণ্ড বহাল রাখার পরে বাংলাদেশের জামাতে ইসলামির কেন্দ্রীয় সুরার এই সদস্য জানিয়ে দেন, রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন না। এর পরেই ঢাকার কাশিমপুর কারাগারে ফাঁসির তোড়জোড় শুরু হয়। ফাঁসিকাঠে নতুন দড়ি পরানো হয়। তৈরি রাখা হয় জল্লাদদের।

এ দিন দুপুরে প্রাণদণ্ড কার্যকর করার জন্য সরকারি আদেশ কারাগারে পৌঁছনোর পরে বিকেলে কাসেমের আত্মীয়দের জেলে ডাকা হয়। জনা ৪০ স্বজন প্রায় এক ঘণ্টা কথা বলে যান আসামির সঙ্গে। মির কাসেমের স্ত্রী জানান, জেল কর্তৃপক্ষ ফাঁসি কার্যকরের কথা কাসেমকে জানিয়ে দিয়েছেন। মানিকগঞ্জে তাঁর মরদেহ কবর দেওয়া হবে। কিন্তু কুখ্যাত এই জামাত নেতার দেহ সেখানে না-আনার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন মানিকগঞ্জের বাসিন্দারা।

জামাতের এই হেভিওয়েট নেতার ফাঁসির তোড়জোড়ের মধ্যেই কঠোর নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয় রাজধানী ঢাকাকে। পুলিশের পাশাপাশি সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি-কেও মোতায়েন করা হয়। চেকপোস্ট তৈরি করা হয় মোড়ে মোড়ে। ‘চট্টগ্রামের জল্লাদ’ নামে পরিচিত যুদ্ধাপরাধী মির কাসেমের ফাঁসি উদযাপন করতে শয়ে শয়ে মানুষ জড়ো হন শাহবাগের চত্বরে। এই নিয়ে একাত্তরে গণহত্যার ছয় জন নায়ককে ফাঁসিতে ঝোলাল শেখ হাসিনার সরকার। তার মধ্যে পাঁচ জনই জামাতে ইসলামির কেন্দ্রীয় নেতা। এ ছাড়া ফাঁসি হয়েছে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা, বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন