রাষ্ট্রদ্রোহ-সহ ১০ মামলায় বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এবং বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে আগামী ৯ জানুয়ারি আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। খালেদা ওই দিন হাজির না থাকলে তাঁর জামিন বাতিল করা হবে বলেও আদালত জানিয়েছে। বৃহস্পতিবার ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লা এই আদেশ দেন।
এদিকে জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতির আর একটি মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য আদালতে হাজিরা দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২টার পর তিনি পুরান ঢাকার বকশিবাজারের কারা অধিদফতরের মাঠে ঢাকার তিন নম্বর বিশেষ জজ আদালতে হাজির হন। একই দিনে খালেদা জিয়ার দুই মামলার তারিখ ছিল আজ। দুপুরে খালেদা যখন দুর্নীতির মামলায় হাজিরা দিতে যান তখনই আরও ১০টি মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য দিন ধার্য ছিল। কিন্তু খালেদা জিয়া আদালতে হাজির না হওয়ায় তাঁর আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া সময়ের আবেদন করেন। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক আবেদন মঞ্জুর করে ৯ জানুয়ারি খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজিরের নির্দেশ দেন। সরকার পক্ষের অতিরিক্ত প্রসিকিউটর তাপস পাল জানান, ওই দিন খালেদা জিয়া আদালতে না গেলে তাঁর জামিন বাতিল করে দেওয়া হবে বলেও বিচারক হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন। জামিন বাতিল করা হবে।
খালেদার বিরুদ্ধে মামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে মিরপুরের দারুসসালাম থানায় নাশকতার আট মামলা, রাষ্ট্রদ্রোহের একটি ও যাত্রাবাড়ি থানার বিস্ফোরক আইনের মামলা।
রাষ্ট্রদ্রোহের মামলার নথি থেকে জানা যায়, চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি ঢাকা মহানগর হাকিম রাশেদ তালুকদারের আদালতে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির প্রাক্তন সম্পাদক মোমতাজ উদ্দিন আহমদ মেহেদি বাদী হয়ে এ মামলা করেন। ওই মামলায় গত ৫ এপ্রিল খালেদা জিয়া আদালতে হাজির হয়ে জামিন নেন। আর্জিতে বলা হয়, ২০১৫ সালের ২১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেন, ‘আজকে বলা হয় এত লক্ষ শহিদ হয়েছে, এটা নিয়েও অনেক বিতর্ক আছে।’
ওই দিন খালেদা জিয়া আরও বলেন, ‘তিনি (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) বাংলাদেশের স্বাধীনতা চাননি। তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন। জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা না দিলে মুক্তিযুদ্ধ হতো না।’
এ দিকে যাত্রাবাড়ি থানার মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০১৫ সালের ২৩ জানুয়ারি রাতে যাত্রাবাড়ির কাঠেরপুল এলাকায় গ্লোরি পরিবহণের যাত্রীবাহী একটি বাসে পেট্রলবোমা হামলা হয়। এতে বাসের ২৯ যাত্রী দগ্ধ হন। পরে তাঁদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ১ ফেব্রুয়ারি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নুর আলম (৬০) নামের এক যাত্রী।
আরও পড়ুন: ঢাকায় আজ পর্রীকর, কথা হাসিনার সঙ্গে
এ ঘটনায় ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করে যাত্রাবাড়ি থানায় মামলা করেন থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কেএম নুরুজ্জামান।
খালেদা ছাড়াও এই মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এমকে আনোয়ার, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভি, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবি খান সোহেল, সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, বরকত উল্লাহ বুলু, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেন, শওকত মাহমুদ, বিএনপি চেয়ারপার্সনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল, চেয়ারপার্সনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস।
অন্য দিকে, ২০১৫ সালে দারুসসালাম থানা এলাকায় নাশকতার অভিযোগে আটটি মামলা দায়ের করা হয়। এই আট মামলায় বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে আসামি করা হয়।
চলতি বছরেই এই মামলাগুলি ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। অভিযোগপত্রের পর খালেদা এই সব মামলায় হাজির হয়ে জামিন নেন।