—ফাইল চিত্র।
তিনি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী। বিরোধী ছিলেন স্বাধীনতারও। স্বাধীন দেশের স্বপ্ন যাঁরা দেখতেন এবং তা বাস্তবায়িত করতে যাঁরা লড়াই চালাতেন, তিনি ছিলেন তাঁদের নির্যাতনকারী এবং হত্যাকারী। কিন্তু, দেশ স্বাধীন হওয়ার কয়েক বছর পর থেকেই সেই মির কাসেম আলিই ধীরে ধীরে হয়ে উঠলেন ধনকুবের। তাঁর সেই উত্থান পর্বের শুরু বাংলাদেশের তত্কালীন সামরিক শাসক জেনারেল জিয়াউর রহমানের আমলে।
মির কাসেমের জন্ম ১৯৫২ সালে, মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার চালা গ্রামে। তাঁর বাবা তৈয়ব আলি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডে চাকরি করতেন। চার ভাইয়ের মধ্যে মির কাসেম দ্বিতীয়। তাঁকে এলাকার মানুষ মিন্টু নামেই চেনেন। বাবার চাকরির সুবাদে পরিবারের সঙ্গে তিনি থাকতেন চট্টগ্রামে। পড়েছেন চট্টগ্রাম কলেজে। ১৯৭১-এ জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামি ছাত্র সংঘের পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ সম্পাদক ও স্বাধীন বাংলাদেশে ইসলামি ছাত্র শিবিরের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। পরে, মীর কাসেমের নেতৃত্বেই ১৯৭৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ইসলামি ছাত্রসংঘ নাম পরিবর্তন করে ছাত্রশিবির নামে আত্মপ্রকাশ করে। তিনি হন শিবিরের প্রথম কেন্দ্রীয় সভাপতি। এর পর মির কাসেমকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকার কারণে ১৯৮০ সালে তিনি রাবেতা আল ইসলামির এ দেশীয় পরিচালক হন। ওই সংগঠনে যুক্ত থাকা অবস্থায় জামায়াতে ইসলামির কর্মী হিসেবেও যোগ দেন। পরবর্তীতে দলটির নির্বাহী পরিষদের সদস্য হন। আর ১৯৮৫ সালে হন জামায়াতের শুরা সদস্য। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে স্বাধীনতার বিরোধিতা করলেও, স্বাধীনতার পরে সেই স্বাধীন দেশেই করেছেন ব্যবসা মির কাসেম আলি। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান রাবেতা আল ইসলামির বাংলাদেশীয় পরিচালক, ইসলামি ব্যাঙ্কের প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চেয়ারম্যান ও পরিচালক, ইসলামি ব্যাঙ্ক ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, ইবনে সিনা ট্রাস্ট (প্রশাসন) ও ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালসের বোর্ড অব ডিরেক্টরের সদস্যও ছিলেন তিনি। তিনি ফুয়াদ আল খতিব ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রাস্ট (এআইটি) ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানও ছিলেন।
মির কাসেম আলির ব্যক্তিগত বাণিজিক গ্রুপের নাম ‘কেয়ারি’। তিনি কেয়ারি হাউজিং ও ইডেন শিপিং লাইন্সের চেয়ারম্যান। নামের আগে ‘কেয়ারি’ রয়েছে— এ রকম ১০টি কোম্পানির পরিচালক ছিলেন তিনি। সেগুলো হল কেয়ারি লিমিটেড, কেয়ারি পোলট্রি হ্যাচারি অ্যান্ড প্রসেস, কেয়ারি স্প্রিং, কেয়ারি শান, কেয়ারি ট্যুরস অ্যান্ড সার্ভিসেস, কেয়ারি তাজ, কেয়ারি কালার সেন্টার, কেয়ারি ঝর্না, কেয়ারি রিয়েল এস্টেট এবং কেয়ারি টেলিকম লিমিটেড। এ ছাড়াও কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিনে যাওয়ার জন্য রয়েছে মির কাসেমের একক মালিকানাধীন বিলাসবহুল পাঁচটি প্রমোদতরি কেয়ারি ক্রুইজ, কেয়ারি ডাইন, কেয়ারি সিন্দবাদ, কেয়ারি কর্ণফুলি ও কেয়ারি তরঙ্গ। পাশাপাশি কেয়ারি গ্রুপের সহস্রাধিক অ্যাপার্টমেন্ট ও বিপণিবিতান রয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার-সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায়। দিগন্ত মিডিয়া কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান মির কাসেম আলির অধীনে ছিল দৈনিক নয়াদিগন্ত পত্রিকা আর দিগন্ত টেলিভিশনও।
অভিযোগ, তিনি আমেরিকার প্রথম সারির এক লবিস্ট কোম্পানিকে বিপুল অর্থ দিয়ে নিয়োগ করেছিলেন তাঁকে এই মামলা থেকে বাঁচানোর জন্য। কিন্তু, শেষ রক্ষা হল না। শেষমেশ ফাঁসিতেই ঝুলতে হল তাঁকে।