নতুন ভাবে ফের বাজারে আসছে পুরনো সেই ঢাকাই মসলিন

যা গেছে তা যাক বলে নিরর্থক বসে থাকা নয়। অতীত খুঁড়ে বাঙালির হৃত গৌরব পুনরুদ্ধারের ব্রত। ঢাকাই মসলিন মরেছে মানছেন না বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

Advertisement

অমিত বসু

শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৬ ২০:২৩
Share:

যা গেছে তা যাক বলে নিরর্থক বসে থাকা নয়। অতীত খুঁড়ে বাঙালির হৃত গৌরব পুনরুদ্ধারের ব্রত। ঢাকাই মসলিন মরেছে মানছেন না বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

Advertisement

এক সময় সত্যিই খুন হয়েছিল বিদেশি শক্তির হাতে। ১৮৩৭-এ রানি ভিক্টোরিয়ার সময় ইংল্যান্ড প্রাচুর্যের চূড়োয়। শিল্প বিপ্লবের ফলে সমৃদ্ধ অর্থনীতি। আত্মপ্রকাশ ম্যাঞ্চেস্টারের বস্ত্র শিল্পের। বিপণন বিশ্ব জুড়ে। দখল বাংলার কাপড়ের বাজার। যন্ত্রে বোনা বস্ত্র। মসৃণ, মনোরম, দামও কম। ছেয়ে ফেলল বাংলা। আতান্তরে তাঁতিরা। তাঁতে বোনা কাপড় কে কিনবে? দাম যে অনেক বেশি। স্বল্পমূল্যের কাপড়ের লোভের আড়ালে ঢাকা পড়ল তাঁতিরা। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্পের মদন তাঁতির মতো অবস্থা হল সব তাঁতিদের। মহাজন ঋণ দিতে চায় শাড়ি বুনতে নয়, গামছা করতে। বাজারে গামছার চাহিদা আছে, শাড়ির নেই। বিদেশি কাপড়ে মজেছে বাঙালিরাও।

মসলিনের নমুনা পৌঁছল ম্যাঞ্চেস্টারেও। গভীর পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বস্ত্র বিশেষজ্ঞরা জানালেন, মেশিনে এ কাপড় তৈরি অসম্ভব। সেইসঙ্গে ঘোষণা করলেন, মানুষ এ কাপড় বুনেছে সেটাও অবিশ্বাস্য। গাছের পাতা ফুল, ফল যেমন আপনা-আপনিই হয়, এও তেমনি প্রকৃতির আশ্চর্য নির্মাণ। অরণ্যে খোঁজ করলে পাওয়া যাবে। বনের কীটপতঙ্গ পাখিরাও তৈরি করতে পারে। মাকড়সার জাল, বাবুই পাখির বাসার শিল্পকলা এই কাপড়েও রয়েছে।

Advertisement

প্রমাদ গুণলেন ব্রিটিশ শাসনে থাকা বাংলার তাঁতিরা। তাদের নৈপুণ্য অস্বীকার করে এমন আজগুবি প্রচার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। যাতে তাঁতিরা আর মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে। বিজলীর ছটায় তাঁতিদের প্রদীপ ম্লান। এক সময় একটু দপ দপ করে জ্বলে উঠেই নিভল। তাঁতিদের জন্য বরাদ্দ শুধুই অন্ধকার।

১৯৪৭-এ দেশ স্বাধীন হতেই তাঁতিদের দিকে নজর পড়ল। সরকারি সাহচর্যে তাঁতিরা কিছুটা উঠে দাঁড়ানোর সুযোগ পেল। সে আর ক’দিন। ভারতেও তৈরি হল বস্ত্রের কারখানা। কৃত্রিম সুতোয় তৈরি বস্ত্র বাজার ছেয়ে ফেলল। তার মধ্যেও তাঁতের শাড়ি কোনও রকমে বেঁচে রইল। অনেক চেষ্টায় নতুন যাত্রা শুরু করল ঢাকাই জামদানী। মসলিনের আর দেখা পাওয়া গেল না। মসলিন বোনার সুতো কোথায়। সে তো যে সে সুতোয় হবে না। ৩০০ কাউন্টের মিহি সুতো দরকার। যে সুতোর ৫০০ মিটারের ওজন মাত্র এক গ্রাম। ফুটি কার্পাসের চাষে যার জন্ম।

আরও খবর- রাখি সবন্তের ঢালিউডে এন্ট্রি?

এ চাষ হত ঢাকা শহর থেকে একটু দূরে মেঘনা আর শীতলক্ষার তীরে। উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়া দুই নদীর পলিতে জমি ছিল উর্বর। সুতো তাঁতিদের ঘরে উঠলে কেচে শুকিয়ে নেওয়া হত। তার পর শুরু হত বোনার পালা। বুনতে আঙুলে চাপ পড়ত বেশি। একটা শাড়ি করতে মাস কাবার হত। শেষ হওয়ার পর তাঁতির মুখে হাসি ফুটত। বাজারে কত দাম পাওয়া যাবে সে ভাবনার চেয়ে বড় হত শিল্প সৃষ্টির আনন্দ। আবার কার্পাস চাষ শুরু হচ্ছে হাসিনা সরকারের সৌজন্যে। নেওয়া হয়েছে ১২৪০ কোটি ৩৮ লক্ষ টাকার প্রকল্প। তাঁত শিল্পীদের প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা হচ্ছে। প্রবীণরা নবীনদের শেখাবেন যত্ন করে। তাঁদের হাত ধরেই ফিরবে ঢাকাই মসলিন। বিশ্বে বাংলাদেশের মান বাড়বে। দুনিয়া বুঝবে, বাঙালি কিছুই হারায় না। সময় মতো মনের দরজা খুলে সব কিছুই বার করে আনে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement