Banagladesh News

কুষ্টিয়ায় ফকির লালন সাঁইয়ের আখড়ায় সাধুসঙ্গে মজলেন ভক্তরা

কুষ্টিয়ায় ফকির লালন সাঁইয়ের ছেউড়িয়ার আখড়াবাড়ির বাৎসরিক আয়োজন সাধুসঙ্গ শেষ হল। গত শনিবার শুরু হয়ে এই সাধুর হাট ও মেলা চলল মঙ্গলবার পর্যন্ত।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঢাকা শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:০৫
Share:

সাধুসঙ্গে বাউলদের গান।

কুষ্টিয়ায় ফকির লালন সাঁইয়ের ছেউড়িয়ার আখড়াবাড়ির বাৎসরিক আয়োজন সাধুসঙ্গ শেষ হল। গত শনিবার শুরু হয়ে এই সাধুর হাট ও মেলা চলল মঙ্গলবার পর্যন্ত।

Advertisement

কুষ্টিয়ার কুমারখালির কালীগঙ্গার তীরে ছেঁউড়িয়ার ফকির লালন সাঁইয়ের আখড়াবাড়ি চত্বর ছিল মরমী আর আধ্যাত্মিক গানে মুখর। গত ক’দিন ধরেই লালনের তিরোধান দিবস স্মরণে অনুষ্ঠিত সাধুসঙ্গে এই সাধক ও কবির কথা-গানে মাতোয়ারা ছিল আখড়াবাড়ি। ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি/ মানুষ ছাড়া ক্ষ্যাপারে তুই মূল হারাবি কিংবা সুন্নত দিলে হয় মুসলমান/ নারীর তবে কি হয় বিধান’— এমন অনেক অসাম্প্রদায়িক গানের মানুষ-প্রাণের মানুষ সাধক লালনের আখরায় প্রতি বছরে এই সময়ে সমাবেত হন ভক্তজনেরা।

আখরায় হয় লালনের জীবন দর্শন নিয়ে তুমুল আলোচনা। চলে গানে গানে লালন স্মরণ। লালনের জীবনদর্শনে অচেনাকে চেনা, আত্মার শুদ্ধি, মুক্তি, জ্ঞান সঞ্চয়-সহ যে যার মনের বাসনা পূরণ করতে এ বারও সাঁইজির আখড়ায় ছুটে গিয়েছেন ভক্ত সাধু আর অনুসারীরা।

Advertisement

অবশ্য এর আগে গত সোমবারই ভক্ত সাধুদের ‘পুণ্যসেবার’ মধ্যে দিয়ে সাধুসঙ্গের মূল পর্বের আনুষ্ঠানিক পর্ব শেষ হয়েছে। লালনের তিরোধান দিবসে আনুষ্ঠানিক ভাবে সাধুসঙ্গ শেষ হলেও রীতি অনুযায়ী আরও কয়েক দিন চলবে গ্রামীণ মেলা ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সোমবার দুপুরে মাছ, মুড়িঘণ্ট, ডাল, ভাত, পায়েস এ সব খাবার দিয়ে সাধুদের আপ্যায়নের মধ্যে দিয়ে পূণ্যসেবা অনুষ্ঠিত হয়। পুণ্যসেবার আনুষ্ঠানিক পর্ব শেষে ধীরে ধীরে আখড়া ছেড়ে এক একে চলে গিয়েছেন বহু সাধু এবং দর্শনার্থীরা।

কুষ্টিয়ার লালন মাজারের প্রধান খাদেম মহম্মদ আলি জানান, মূলত এই পুণ্যসেবাই সাধুসঙ্গের মূল আকর্ষণ। এর মধ্যে দিয়ে লালন উৎসবের আনুষ্ঠানিক পর্ব শেষ হল। এর পরই বাউল, সাধকরা নিজেদের গন্তব্যে বেরিয়ে পড়বেন। মেলায় অংশগ্রহণকারীদের এক জন আবদুল্লাহ মাহফুজ জানান, বরাবরের মতো এ বারও সাধুসঙ্গে হাজার হাজার ভক্তের ভিড় জমেছিল। লালনের সাধুসঙ্গের শেষ দিনেও আখড়াবাড়িতে তিল ধারনের ঠাঁই ছিল না। বাউল, ভক্ত, আর লালন অনুসারী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছেন বাউল ভক্ত ও শিষ্যরা। শুধু বাংলাদেশই নয়, ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, জার্মান, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া-সহ বহু দেশ থেকে এসেছেম ভক্ত-দর্শনার্থীরা।

লালন স্মরণে ভক্তের ভিড়।

ফকির লালন নিজেই সাধুসঙ্গ নামে গুরুশিষ্যের এই পরম্পরা চালু করেছিলেন। দোল পূর্ণিমায় সাধুসন্তদের নিয়ে ছেউরিয়ার আখড়ার পুণ্যধামে মেতে উঠতেন উৎসবে। অবশ্য এখন দোলপূর্ণিমার আগে লালনের তিরোধান দিবসে সাধুসঙ্গ পালন করা হয়। গুরু-শিষ্যের পরম্পরায় সাধুসঙ্গ হয়ে ওঠে যেন এক অপূর্ব মিলনমেলা।

মাজারের প্রধান খাদেম মহম্মদ আলি বলেন, “লালন জানতেন, মানুষের মাঝেই স্রষ্টার বাস। তাই নিজেকে খুঁজে চলার অনন্ত চেষ্টা বাউলদের। যাপিত জীবনে উচ্চাভিলাষ নেই, বসবাস কেবলই সাধনায়। সাধুসঙ্গে গুরুর কাছে এই দীক্ষাই নেন বাউলরা।” তবে অনেক সাধুর মতে, কালের বিবর্তনে সাধুসঙ্গের সেই আগের ছবিটা যেন পাল্টে যেতে শুরু করেছে। ব্যাপক ভিড়ে ভাটা পড়েছে প্রকৃত বাউলের আচার। তবে জাতপাত ভুলে মানুষকে মানুষ হিসেবে গণ্য করার যে শিক্ষা লালন ফকির দিয়ে গেছেন, এখনও প্রজন্মান্তরে সেই দীক্ষাই বিলিয়ে আসছেন সাধু-বাউলরা।

মেলায় উপস্থিত ভক্ত সন্ন্যাসীদের মত, লালনের স্মৃতিবিজড়িত এই আখড়াবাড়ি যেন জাগতিক মোহ ছাড়িয়ে সংসারে একখণ্ড শান্তির ঘর। পথে পথে দিন কাটিয়ে দেওয়া সাধু ছাড়া সংসারী সাধুদের জন্যও এ ক’দিনের সাধুসঙ্গ যেন মনের খোরাক। বছর শেষে লালনের ভক্ত-অনুসারীরা সবাই জড়ো হন এখানে। গান-ভজনে মনের তৃষ্ণা মিটিয়ে, পরিপূর্ণ হৃদয় নিয়ে ফেরেন ভবের বাজারে।

ছবি: আবদুল্লাহ মাহফুজ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন