বাংলাদেশের উন্নয়নে অবাক জাপান

একাত্তরে মুক্তির পরেও, বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ হিসেবে বাঁচবে কি না সংশয় ছিল। অনেক পর্যবেক্ষক অঙ্ক কষে নিদান দিয়েছিলেন, বাংলাদেশ শেষ। কিন্তু মুক্তি যুদ্ধে লক্ষ লক্ষ শহিদের রক্ত বৃথা যায়নি। সব ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে জেগেছে নতুন প্রাণে। উন্নয়নের রাস্তায় সপ্রতিভ সফর। সব বাধা দূর। সম্মুখে প্রশস্ত পথ। বাংলাদেশকে দাবিয়ে রাখা যায় না।

Advertisement

অমিত বসু

শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৬ ১৫:০৫
Share:

একাত্তরে মুক্তির পরেও, বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ হিসেবে বাঁচবে কি না সংশয় ছিল। অনেক পর্যবেক্ষক অঙ্ক কষে নিদান দিয়েছিলেন, বাংলাদেশ শেষ। কিন্তু মুক্তি যুদ্ধে লক্ষ লক্ষ শহিদের রক্ত বৃথা যায়নি। সব ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে জেগেছে নতুন প্রাণে। উন্নয়নের রাস্তায় সপ্রতিভ সফর। সব বাধা দূর। সম্মুখে প্রশস্ত পথ। বাংলাদেশকে দাবিয়ে রাখা যায় না। অন্ধকারে জ্বলন্ত দীপশিখা। ঝড়ে হিমালয়ের স্থিরতা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘জাপান টাইমস’ এর নিবন্ধে সত্যটা স্পষ্ট করেছেন। দুনিয়াকে জানিয়েছেন, বর্তমান বাংলাদেশের লাবণ্যের রহস্য। চমকেছে জাপান। এতটা অগ্রসর হল কী করে! উন্নয়নের উৎস ধারাটা কোথায়। হাসিনার দৃপ্ত জবাব, ‘জনমুখী উন্নয়ন মডেলে আমরা জনগণকে বোঝা নয়, সম্পদে পরিণত করেছি। আজ আমাদের দেশের শ্রীবৃদ্ধিতে ১৫ থেকে ৬৪ বছরের ১০ কোটি ৫ লাখ মানুষ সরাসরি অবদান রাখছে। এটা মোট জনসংখ্যার ৬৫.৬২ শতাংশ। আমি দেখছি, আমাদের উন্নয়ন কর্মকান্ডে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল তরুণ সমাজ’।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে নিশ্চয়ই হাসিনার কথায় উদ্বুদ্ধ হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। দু’দশক ধরে জাপানের পালে বাতাস নেই। অর্থনীতি হোঁচট খাচ্ছে। চিনের থেকে পিছিয়ে পড়েছে অনেকটাই। ২০১২র নির্বাচনে, আবের দল লিবারেশন ডেমোক্রেটিক পার্টি, জাপানের সংসদ ডায়েটে ৪৮০র মধ্যে ৩২৫টি আসনে জিতে সরকার গড়ায় তাঁদের ঘিরে প্রত্যাশা বেড়েছে। তার পরে চার বছরেও নতুন অর্থনৈতিক দিশা খুঁজে পাননি শিনজো তাবে। মাঝখান থেকে দক্ষিণ চিন সাগরে বিতর্কিত দ্বীপ নিয়ে চিনের সঙ্গে বিরোধের সূচনা। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর সামরিক বাহিনীর অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছিল জাপান। এবার সংবিধান সংশোধন করে সেই বঞ্চনার অবসান ঘটানোর প্রয়াস। সামরিক বাজেট বাড়ানোয় আগ্রহ। এসব করে কী লাভ। চিনের সঙ্গে যুদ্ধ করে কি অর্থনৈতিক হাল ফিরবে। শান্তি ছাড়া উন্নয়ন যে কখনই সম্ভব নয়।
অশান্তির ছায়াও পড়তে দিচ্ছে না বাংলাদেশ। উন্নয়নকে ধ্রুব নক্ষত্র করে এগোচ্ছে। ফলও মিলছে। ২০০৬ সালে মাথাপিছু আয় ছিল মাত্র ৫৪৩ ডলার। সেটা দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪৬৬ ডলার। দেশজ উৎপাদন ৬.৩ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭.৫ শতাংশ হওয়ার মুখে। হাসিনা জানিয়েছেন, এই উন্নয়ন দেশের সম্পদকে কাজে লাগিয়েই। বিনিয়োগ ব্যবস্থার উদারতায় বিদেশি বিনিয়োগও রয়েছে। বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআই-এর ঝুঁকি একেবারেই কম। একশো ভাগ বিদেশি বিনিয়োগের আনুমতি আছে। যেখানে অবাধ প্রস্থান নীতি, লভ্যাংশ সহজে দেশে পাঠান, বিনিয়োগের নিরাপত্তা, স্থিতিশীল জ্বালানি মূল্যের নিশ্চয়তা রয়েছে।
বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি শিল্পোন্নয়নের জন্য একান্ত জরুরি। সেটা তিনগুণ বেড়েছে। আর পাঁচ বছরে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের গ্যারান্টি দিয়েছেন হাসিনা। পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনাও আছে। চট্টগ্রাম, মংলা সমুদ্র বন্দরের ক্ষমতা বাড়ছে। দেশের টাকায় তৈরি হচ্ছে পদ্মা সেতু। যার খরচ ৩০০ কোটি ৬০ লক্ষ ডলার। পায়রা আর কক্সবাজারের মাতাবাড়িতে ৫টি গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা আছে। ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে ৪ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের সম্ভাবনা। ৩৩টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে উন্নয়নের কাজ এক বছরে শেষ হবে। এ সব অঞ্চলে ১৪ বছরের মধ্যে এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান নিশ্চিত। হাসিনার দৃপ্ত ঘোষণা, ২০২১এ স্বাধীনতার ৫০ বছরে আমরা মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হব। তার ২০ বছর পর উন্নত দেশ। আমি জনগণের ক্ষমতায় বিশ্বাসী। সেই শক্তিতে বিশ্বে সবার সাথে মিলে মিশে কাজ করতে চাই। শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধতর বিশ্বই আমার লক্ষ্য। এরপরেও কী শিনজো আবে চিনের দিকে রণতরী ভাসানোর কথা ভাববেন।

Advertisement

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন