৬৫০ টাকা ফেললেই এখন বাসে খুলনা-কলকাতা

আকাশ পথটা ঢাকা-কলকাতার মাঝে হাইফেন। উড়ান চল্লিশ মিনিটের। উড়তে উড়তেই নামার তাড়া। বেশি উঁচুতে ওঠে না। যাতে নামতে কষ্ট হয়। টেক অফ-ল্যান্ডিংয়ে অনেকটা সময় খেয়ে নেয়। যেতে আসতে আর কতক্ষণ। ঢাকা-কলকাতা যোগাযোগে একটার পর একটা ফ্লাইট।

Advertisement

অমিত বসু

শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৭ ১৪:৪৬
Share:

ফাইল চিত্র।

আকাশ পথটা ঢাকা-কলকাতার মাঝে হাইফেন। উড়ান চল্লিশ মিনিটের। উড়তে উড়তেই নামার তাড়া। বেশি উঁচুতে ওঠে না। যাতে নামতে কষ্ট হয়। টেক অফ-ল্যান্ডিংয়ে অনেকটা সময় খেয়ে নেয়। যেতে আসতে আর কতক্ষণ। ঢাকা-কলকাতা যোগাযোগে একটার পর একটা ফ্লাইট। বোর্ডিং পাস নেওয়ার লম্বা লাইন এয়ার পোর্টের কাউন্টারে। এয়ারক্রাফ্ট ভর্তি যাত্রী। ডেলি প্যাসেঞ্জার কম নয়। সকালে এসে বিকেলে ফিরে যাওয়া। কেনাকাটায় পণ্যের পাহাড়। শাড়ির পর শাড়ি। বাক্স প্যাঁটরা উপচোচ্ছে। এক্সট্রা লাগেজের মাশুল গোনা ছাড়া উপায় কী। ঢাকায় গেলে মেয়েদের ঝোঁক ঢাকাই জামদানি, মসলিনের উপর। কলকাতায় এলে ঢাকুরিয়ার দক্ষিণাপন থেকে গড়িয়াহাট, পার্কস্ট্রিট, নিউমার্কেটে যত শাড়ির দোকান সব তুলে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে।

Advertisement

আকাশ যাত্রীরা আশ মিটিয়ে বাজার করতে পারে। ঘুরতে ফিরতেও পকেট টান পড়ে না। মাটির মানুষদের হিসেবের কড়ি মেপে চলতে হয়। কমবেশি হলে বিপদ। ট্রেনে-বাসে যাতায়াতটা চমৎকার। নদী গাছপালা আলো বাতাসে মিশে আসা-যাওয়া। আকাশ থেকে বিশাল পদ্মাও দড়ির মত সরু। বার্জে সেই নদী পেরোতে প্রবল ঢেউয়ে উথাল পাথাল। ঝিক ঝিক করে ট্রেন যখন যমুনা পেরোয়, মনে হয় এর চেয়ে সুন্দর নদী আর পৃথিবীতে নেই।

আরও পড়ুন: ঢাকার অন্য ভাস্কর্য সরবে না, আশ্বাস

Advertisement

বাংলাদেশে নদী তো অসংখ্য। ফরিদপুর-খুলনার মাঝে মধুমতী আজও বয়ে যায়। দেখতে পায় ক'জন। সবাই তো ঢাকা-কলকাতা নিয়ে ব্যস্ত। পুরোন অমূল্য বইয়ের মতো কখনও কখনও খুলনাকে খুলে দেখতে ইচ্ছে করে। সুযোগ কোথায়। খুলনায় রবীন্দ্রনাথের শ্বশুরবাড়িটা দেখতে কোন বাঙালির সাধ না জাগে। যদিও লাজুক বর রবীন্দ্রনাথ শ্বশুরবাড়ির পথ মাড়াননি কোনও দিন। বাবা দেবেন্দ্রনাথের তদারকিতে বিয়ে করেছেন কলকাতায় বসেই। তাই বলে কনে মৃণালিনী দেবীর জন্মস্থানটা তো আর মিথ্যে হয়ে যাবে না।

এবার দূরত্ব দূর। খুলনা-কলকাতা জুড়েছে বাস। হবে হবে করে দীর্ঘ দিন কেটেছে। শেষে সত্যি সত্যি হল। সোম থেকে শনি সল্টলেকের করুণাময়ী আন্তর্জাতিক বাস টার্মিনাস থেকে খুলনা ছুঁয়ে ঢাকা যাচ্ছে একটি বাস। ঢাকার কমলাপুর স্টেশন থেকে কলকাতাতে যাতায়াত করছে আরও একটি বাস। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন বা বি আর টি সি-র গ্রিনলাইনের বাস চলছে। ২০১৫তে কলকাতা-ঢাকা-আগরতলা রুটে বাস চলাচলের পর খুলনার সঙ্গে সেতুবন্ধ। ভাড়া মাত্র ৬৫০ টাকা। ঢাকায় গেলে ১৪০০ টাকা। আরামদায়ক এসি বাস। পেট্রাপোল-বেনাপোলে শুল্ক আর অভিবাসনের চেকিংয়ের পর খুলনায় খাওয়া দাওয়ার ব্রেক। সেখানে যাঁরা নেমে যাচ্ছেন তাঁরা তো বাড়ি গিয়েই খেতে পারবে। ঢাকার যাত্রীদের জন্য লাঞ্চের ব্যবস্থা। খাওয়া খারাপ নয়। রুইমাছ, চিকেন কারির সঙ্গে জুঁই ফুলের মতো গরম ভাত। খুলনা থেকে কাঁঠালবাড়ি, মাওয়া হয়ে ফেরিতে ভাসা। ভাগ্য প্রসন্ন থাকলে বার্জেই ইলিশের সন্ধান। দড়িতে ঝুলিয়ে ফেরার পথে কলকাতায় আনতে অসুবিধে কোথায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন