Michael Madhusudan Dutta

যশোরের সাগরদাঁড়িতে মধুসূদনের জন্মদিনের মেলা

গ্রিক পুরানের তিন দেবী হেরা, আথেনে, আফ্রোদিতের ঝগড়া সোনার আপেলের দখল নিয়ে। কেউ অধিকার ছাড়তে নারাজ। বিরোধ যখন চরমে, দ্বন্দ্ব মেটাতে আবির্ভাব প্যারিসের। তাঁর মধ্যস্থতায় পাল্লা ভারি আফ্রোদিতের। আপেল পেলেন তিনিই। বিবাদ মিটল না। তিন দেবীর ঈর্ষা বাঁকে বাঁকে জটিলতা ছড়াল। গল্পটা পছন্দ হল মাইকেল মধুসূদন দত্তের।

Advertisement

অমিত বসু

শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ১৩:৩৯
Share:

জন্মভিটেতে মধু মেলা।

গ্রিক পুরানের তিন দেবী হেরা, আথেনে, আফ্রোদিতের ঝগড়া সোনার আপেলের দখল নিয়ে। কেউ অধিকার ছাড়তে নারাজ। বিরোধ যখন চরমে, দ্বন্দ্ব মেটাতে আবির্ভাব প্যারিসের। তাঁর মধ্যস্থতায় পাল্লা ভারি আফ্রোদিতের। আপেল পেলেন তিনিই। বিবাদ মিটল না। তিন দেবীর ঈর্ষা বাঁকে বাঁকে জটিলতা ছড়াল। গল্পটা পছন্দ হল মাইকেল মধুসূদন দত্তের। ভারতীয় পুরাণের সঙ্গে মেলালেন গ্রিক পুরাণকে। তিন গ্রীক দেবীর আদলে গড়লেন ত্রয়ী শচী, রতি, মুরজা। প্রকাশিত হল মধুসূদনের দ্বিতীয় নাটক 'পদ্মাবতী'। পূব-পশ্চিমের সংস্কৃতিকে সহজেই মেলাতে পারতেন। যাতে নতুন স্বাদে গন্ধে সমৃদ্ধ হত বাংলা সাহিত্য। বিশ্বের জানলা খুলে লিখতে বসতেন। বিদেশের আলো বাতাস ছিল প্রেরণা।

Advertisement

নীতিশাস্ত্র মেনে সাহিত্য করেননি। মানবতার চূড়ান্ত বিকাশ ঘটিয়েছেন অবহেলিত চরিত্রের মধ্যে। রামায়ণে রামই নায়ক। মধুসূদনের 'মেঘনাদ বধ' কাব্যে তিনি টেনে তুলেছেন রাবণকে। পাঠকের দরবারে পৌঁছে দিলেন মহিমান্বিত চেতনায়। পাঠক অবাক। রাবণকে এভাবে কেউ দেখেনি কোনও দিন। অন্তত এখানে। মধুসূদনের রাবণ বীরত্বে, স্নেহে, মমতায় মানবতার আদর্শ বিগ্রহ। ১৮৬১-তে 'মেঘনাদ বধ' কাব্যের প্রকাশ বাংলা কাব্যের গতিপথকে বদলে দিল। সে বছরই আবির্ভাব রবীন্দ্রনাথের। কলকাতার জোড়াসাঁকোতে তাঁর প্রথম আলো দেখা। ন'বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথ পড়েছিলেন 'মেঘনাদ বধ'। পড়েই চিনেছিলেন অচেনা মানুষটিকে। মনে গেঁথেছিলেন তাঁর রূপকল্প। সবটা আত্মস্থ করা সম্ভব হয়নি। বয়স যত বেড়েছে মধুসূদনকে আবিষ্কার করেছেন। সেটা রবীন্দ্রনাথই পেরেছিলেন। বেশি কেউ চেষ্টা করলেও পারতেন কিনা সন্দেহ। মধুসূদন যে ভাবনায় সময়ের থেকে শতবর্ষ এগিয়েছিলেন।

যশোরে মাইকেল মধুসূদন দত্ত-র জন্মভিটে

Advertisement

‌তিনি বাংলাতেই বদ্ধ থাকেননি। ছুটেছেন এদেশ সেদেশ। বিদেশ ছাড়াও, ১৮৬০ থেকে ১৮৬৩ মাদ্রাজে থাকার সময়েও তাঁর হৃদয় জুড়ে ছিল বাংলা শিল্প, সংস্কৃতি, সাহিত্য। ঈশ্বর গুপ্ত, রঙ্গলালের কবিতায় বাঙালি তখন মজে। উপাদান রঙ্গ রসিকতা বা দেশভক্তি। তিনি শিকল ছিঁড়ে বাংলা সাহিত্যকে উড়িয়ে দিলেন উন্মুক্ত দিগন্তে। বিদেশি সাহিত্যে মগ্ন থেকেও মুহূর্তের জন্য ভোলেননি বাংলার জল মাটি আকাশ মানুষকে। আমৃত্যু তাঁর স্মৃতিতে ছিল যশোরের সাগরদাঁড়ি গ্রাম, কপোতাক্ষ নদী। নিজের সমাধি ফলকে আহ্বান করেছেন বাঙালিকে। বলেছেন, জন্ম যদি বঙ্গে তিষ্ঠ ক্ষণকাল।

আরও পড়ুন- বাংলাদেশের ৬০০ নদ-নদী উধাও ৪৫ বছরে

বাংলাদেশের যশোরের কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ি গ্রামের বাড়িটি এখনও দাঁড়িয়ে, যেখানে মধুসূদনের জন্ম। ১৮২৪-এর ২৫ জানুয়ারি পৃথিবীকে তাঁর প্রথম দেখা। চেনা শেষ হয়নি জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছেও। সেখানকার মানুষ আজও ভোলেনি মধুসূদনকে। প্রত্যেক বছর তাঁর জন্মদিন পালন করে আড়ম্বরের সঙ্গে। মধুর স্মৃতিতে মধুকে খোঁজে। মেলা চলে সাতদিন। কবি, সাহিত্যিকরা জড় হন। তাঁদের কথা শুনতে উপচে পড়ে ভিড়। ১৯৯৪ থেকে বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রক মধুসূদনের বাড়ি, স্মৃতি রক্ষার দায়িত্ব নিয়েছে। মেলা চলে সরকারের তত্ত্বাবধানে। কবির স্মারক সংগ্রহশালা গড়ে তোলার চেষ্টা হচ্ছে। যাতে জায়গাটা সাহিত্যের তীর্থক্ষেত্র হয়ে দাঁড়ায়। মধুসূদন চাইতেন, বাঙালি যেন তাঁকে ভুলে না যায়। কী করে ভুলবে। এমন বর্ণময় স্রষ্টাকে নির্বাসনে পাঠানোর সাধ্য কার।

আরও পড়ুন- মৃত্যুর পর প্রকাশিত হল কবি মাহবুবুল হক তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন