Bangladesh

জঙ্গিবাদের মোহে সন্তানের ভাল মন্দও ভুলে গেলে জননী!

স্বামী নতুন জামাতের সামরিক প্রশিক্ষক হয়ে স্ত্রীকে গড়ে তোলে নিজের মনের মতো। অস্ত্র শিক্ষায় শিক্ষিত করে। মনুষ্যত্বের পরিবর্তে নৃশংসতা। কোমল মন কঠিন। স্বামী নিহত হওয়ার পর শিলা আস্তানা গড়ে আজিমপুরে। সঙ্গী দুই সন্তান।

Advertisement

অমিত বসু

শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১৩:৫৭
Share:

ধৃত জেএমবি-র ৪ আত্মঘাতী মহিলা জঙ্গি।-নিজস্ব চিত্র।

অলিম্পিকে ভারতের মান যশ দুই নারীর সাফল্যে। ব্যর্থতার লজ্জা থেকে পুরুষদের মুক্তি। ক্রীড়াঙ্গনে বীরঙ্গনা হয়েও স্বভাবে তাঁরা কোমল। অস্মিতায় শ্রী হারান না কখনও। নিভৃত সাধনায় দেশের গৌরব আরও বাড়ানোর কথা ভাবেন। নিজেদের প্রমাণ করার ক্ষেত্র, বাছাই করে লড়াই চালান। সব দেশেই মেয়েদের একই রূপ। সমস্যা হয় পুরুষরা যখন তাদের বিপথগামী করে। অন্ধকার সুড়ঙ্গে ঢুকিয়ে বলে, একটু এগোলেই আলোয় ভাস্বর হবে। জয় তোমার পা ছোঁবে। তা তো হয় না। উল্টে আঁধারেই তলায়। হিংসার আগুনকে আলো বলে ভুল করে। পরিণতিতে নিজেরাও মরে, অন্যকেও মারে। শোণিত স্রোতে হারায় বর্তমান, ভূত, ভবিষ্যত। নিরাশ্রয় হয় তাদের সন্তানরা। একটু বড় হয়েই ভাবে এ শাস্তি কেন, কীসের অপরাধে। ঢাকার রূপনগরে নিহত জঙ্গি জাহিদুল ইসলামের স্ত্রী জেবুন্নাহার শিলার ভবিষ্যতও অনিশ্চয়তার ঘূর্ণিপাকে। স্বামী নতুন জামাতের সামরিক প্রশিক্ষক হয়ে স্ত্রীকে গড়ে তোলে নিজের মনের মতো। অস্ত্র শিক্ষায় শিক্ষিত করে। মনুষ্যত্বের পরিবর্তে নৃশংসতা। কোমল মন কঠিন। স্বামী নিহত হওয়ার পর শিলা আস্তানা গড়ে আজিমপুরে। সঙ্গী দুই সন্তান। পুলিশি হানার আগেই পালায় শিশু সন্তানকে কোলে নিয়ে। বড় মেয়ে পড়েই থাকে। পুলিশ তাকে রেখেছে তেজগাঁওয়ের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে। জাহিরের বাবা মমিনুল হক, নাতনিকে দেখতে যান প্রতি দিন। আদর করেন, উপহার দেন পছন্দের জিনিস। সান্ত্বনায় ভবিষ্যতের দিশা দেখাতে পারেন না। ওই সেন্টারে আছে জঙ্গি জননীদের আরও দুই সন্তান। অসহায়তায় দিন কাটছে তাদের। তারাও জানে না, আজকের পর কালকের দিনটা কোন বার্তা বয়ে আনবে।

Advertisement

নারী জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষে থাকা শিলা পালাতে পারলেও তার তিন সঙ্গী ধরা পড়েছে। গুলশন হামলার মাস্টারমাইন্ড নুরুল ইসলাম মারজানের স্ত্রী আফজান প্রিয়তি, জঙ্গি বামারুল্লাহর (যার আরও দু’টো নাম চকলেট আর রাহুল) ঘরণী শায়লা আফরিন, নিহত জঙ্গি তানভির কাদেরির স্ত্রী শারমিন আপাতত পুলিশি হেফাজতে। জেরায় উঠে আসছে অনেক গোপন তথ্য।

প্রিয়াতির বিয়ে ন’মাস আগে। বাড়ি পাবনার ঈশ্বরদীর দাপুনিয়া ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামে। বিয়ের পরই স্বামীর হাত ধরে জঙ্গি জগতে প্রবেশ। গণতন্ত্র শেষ করে মৌলবাদ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার। শায়লার বাড়ি ঢাকাতেই। তার একমাত্র সন্তান পুলিশি হেফাজতে। শারমিনের যমজ সন্তান। একজনকে পুলিশ উদ্ধার করেছে। সে ধানমান্ডির ইংরেজি স্কুল মাস্টারমাইন্ড-এর লেভেল এইটের ছাত্র। তিন নারী জঙ্গি ধরা পড়ার আগে পুলিশের সঙ্গে লড়াই চালিয়েছে। শেষ পর্যন্ত পেরে ওঠেনি।

Advertisement

আজিমপুরের আস্তানায় নারী-জঙ্গীদের সঙ্গে ছিল পুরুষ জঙ্গি জামশেদ। পুলিশি অভিযানে পর্যুদস্ত হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। নারী জঙ্গিদের সংগঠিত করার দায়িত্ব ছিল তার ওপর। নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবি, হরকাতুল জিহাদ, এবিটি, হিযবত তাহরিরের মহিলা সদস্যদের জঙ্গিপনায় অভ্যস্ত করার তালিম দেওয়াটাই কাজ ছিল জামশেদের। তাদের অর্থের যোগান দিত ফাঁসি হওয়া যুদ্ধাপরাধী মির কাসেম আলি। কাসেমের ফাঁসির পর সংগঠনে চিড় ধরেছে। কাসেমের ফাঁসি রদ করতে সারা দেশে আগুন জ্বালাতে চেয়েছিল তারা। এখন কাসেমের মৃত্যুর ছায়া গ্রাস করছে জঙ্গি সংগঠনগুলোকে। অজানা অন্ধকারে ডুবছে জঙ্গি মায়ের সন্তানরা।

আরও পড়ুন: ভবিষ্যতের ভিত গড়ছে খুলনা, নরসিংদী, সিরাজগঞ্জের পাওয়ার হাব

বাঙালি দুর্গা পূজা নতুন রূপে নতুন সাজে

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন