ঝুপঝাপ লোডশেডিং যখন তখন। রাতে অন্ধকারের শাসন। পাখা, এসি নিশ্চল। ফ্রিজে শাক সব্জি মাছ মাংস গরম হয়ে গলে নরম। ঘর গেরস্থালি অচল। সবই চলে বিদ্যুতের জোরে। না থাকলে চলবে কীসে। দুঃসময়টা কাটছে। কারেন্ট ছুটি নিচ্ছে না। সুইচ টিপলেই আসছে। দরকার আরও। কোনও চাহিদাই কমে না। দিনে দিনে বাড়ে। গড়ে উঠছে নতুন জনপদ। মাথা তুলছে আকাশ ছোঁয়া বাড়ি। বাসস্থান বা কর্মস্থানে প্রয়োজন বিদ্যুতের। না হলে হাহাকার। গ্রামে সর্বত্র বিদ্যুৎ সংযোগ সময়ের অপেক্ষা। ৭৮ শতাংশ পল্লীতে বিজলি, বাকি ২২ শতাংশ। সময় লাগবে না। হাঁড়িতে চাল ফুটছে ভাত হতে কতক্ষণ। একের পর এক বিদ্যুৎ প্রকল্প সময় ধরে বিদ্যুৎ উৎপাদনে তৈরি।
শিল্পায়নের স্বপ্ন সফল করতেও অপরিমিত বিদ্যুতের দরকার। কারেন্ট নেই তো শিল্প নেই। শিল্প নেই তো অর্থনীতি অচল, বিনা বিদ্যুতে উন্নয়নের পালে হাওয়া লাগে না। সে কথা মাথায় রেখেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সব চেয়ে জোর বিদ্যুৎ উৎপাদনে। তাঁর ইচ্ছে, বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো এত বেশি জেনারেট করুক যাতে চাহিদা লজ্জা পায়। সেটা তো সম্ভব নয়। সামর্থের বাইরে যেতে পারে না কোনও কেন্দ্রই। অনেক কেন্দ্র বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছে। ভেঙেচুরে নতুন করে নির্মাণ জরুরি। পুরোনগুলোকে নতুন করার সঙ্গে আরও নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ার পরিকল্পনা।
স্বল্প মেয়াদীর সঙ্গে সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী মেগা বিদ্যুৎ প্রোজেক্ট। পাওয়ার হাব বা বিদ্যুৎ অঞ্চল, নরসিংদীর ঘোড়াশাল, খুলনার গোয়ালপাড়া, সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়িতে। পাওয়া যাবে ৬ হাজার ৫৩৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। না এখনই নয়। একটু ধৈর্যের দরকার। হাব পুরোপুরি উৎপাদন শুরু করবে ২০৩০-এ। তিন ধাপে কাজ। খরচ ৪৩ হাজার কোটি। এত টাকা আসবে কোত্থেকে। ভাল কাজে টাকার যে অভাব হয় না, হাসিনার চেয়ে ভাল কে জানেন। বিদেশি বিনিয়োগের সঙ্গে সরকারি সংস্থান মিলে অর্থের সমস্যা অদৃশ্য।
উৎপাদন সব থেকে বেশি হবে ঘোড়াশালে। পাওয়া যাবে ৩ হাজার ৮৭০ মেগাওয়াট। গোয়ালপাড়া দেবে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। বাঘাবাড়ি থেকে আসবে ১ হাজার ৪৫৫ মেগাওয়াট। কেন্দ্রগুলো চলবে কয়লায় নয়, তেল আর গ্যাসে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, কয়লাতে হলেই ভাল হত। উৎপাদন খরচ কমত। তেল আর গ্যাসের যোগান নিয়ে চিন্তা থাকত না। তেলের দাম যখন তখন বাড়ে। গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক রাখাও সমস্যা।
তারও ব্যবস্থা হয়েছে। জ্বালানির জন্য চিন্তা করতে হবে না। পুরোন কেন্দ্র বন্ধ হলে সেখানে যে গ্যাস ব্যবহার হয় তা দিয়ে নতুন কেন্দ্রের প্রয়োজন অনেকটাই মিটবে। বাকিটা লিক্যুফায়েড ন্যাচারাল গ্যাস বা এলএনজি আমদানি করে পুষিয়ে নেওয়া হবে। ৪০০ কোটি ঘনফুট এলএনজি আমদানির ব্যবস্থা হয়েছে। দু’বছরেই ৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাবে। গ্যাসের বিকল্প হিসেবে জ্বালানি তেলও থাকছে। উৎপাদন আটকাবে না। মেগা প্রোজেক্টের বাস্তবায়নে বিদ্যুৎ বিড়ম্বনার অবসান। শিল্পোন্নয়নে আরও গতি। অর্থনীতিতে জোয়ার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy