International

বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট: মায়ানমারের উপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ুক

এ তো মরে বেঁচে থাকা। ফেলে দেওয়া স্তুপাকৃত আবর্জনার মতো। কেউ পাশে দাঁড়ায় না। সবাই দূর ছাই করে। ভাবে, আপদগুলো বিদায় হলে বাঁচি। সহানুভূতি না পেলে বিপদ কাটে কী ভাবে। দুঃখের কথা বলতে গিয়ে চোখের জল বাঁধ মানে না আলি আহমেদের।

Advertisement

অমিত বসু

শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ১৩:৫২
Share:

ত্রাণের অপেক্ষায়।

এ তো মরে বেঁচে থাকা। ফেলে দেওয়া স্তুপাকৃত আবর্জনার মতো। কেউ পাশে দাঁড়ায় না। সবাই দূর ছাই করে। ভাবে, আপদগুলো বিদায় হলে বাঁচি। সহানুভূতি না পেলে বিপদ কাটে কী ভাবে। দুঃখের কথা বলতে গিয়ে চোখের জল বাঁধ মানে না আলি আহমেদের। তাঁর অপরাধ তিনি রোহিঙ্গা। মায়ানমারের নাগরিক হয়েও তাই সেখানে ঠাঁই নেই। বুক ফুলিয়ে ভোট দিয়ে সামরিক শাসন হটিয়ে গণতন্ত্র খাড়া করেছেন, সুদিনের আশায় দিন গুনেছেন। দেশের সর্বময়ী নেত্রী আউং সাং সুচি-র মুখের দিকে তাকিয়ে থেকেছেন। যদি অবস্থা ফেরে। সামরিক বাহিনীর অত্যাচার-নিপীড়ন শেষ হয়। সংসারে সুখ ছুঁয়ে যায়। কিন্তু সে আর হল কই। বয়স ৬০ পেরিয়েছে। সহ্যের সীমা কমেছে। দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেও ভুলতে পারছেন না নিজের ঘরটা। মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের কিয়ারিপাড়ার বাড়িটা এখন কী অবস্থায় আছে, কে জানে। ৯ অক্টোবর বাড়িটায় আগুন লাগিয়েছিল ফৌজিরা। প্রাণ ভয়ে সপরিবার কোনওক্রমে পালানো। লুঠপাট, গণহত্যা, গ্রেফতারের শঙ্কাতেও মাটি কামড়ে পড়েছিল। ঘর জ্বালিয়ে দেওয়ার পর আর পারল না। দেশান্তরী হল। তাঁর কথা শুনতে শুনতে বাংলাদেশে তিন দেশের রাষ্ট্রদূত- নরওয়ের মেরেট লুনডেমো, ডেনমার্কের হ্যান ফুগন এস্কেয়ার, সুইডেনের জোহাম ফ্রিসেল- বেদনা বিহ্বল। কক্সবাজারের উখিয়া, টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্প দেখে তাঁদের মনেও প্রশ্ন জেগেছে, একটা দেশ এতটা নির্মম হতে পারে কী করে। সেই সঙ্গে যে দরদী মন নিয়ে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা শরনার্থীদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছে সেটা নিঃসন্দেহে মানবতার উজ্জ্বল উদাহরণ।

Advertisement

দুই বিপরীতধর্মী কাজের সমন্বয়। শত্রুর নৃশংসতায় মায়ানমারের সেনাবাহিনী তাড়াচ্ছে রোহিঙ্গাদের। আপনজনের ভালবাসায় তাদের আশ্রয় দিচ্ছে বাংলাদেশ। সেটাই বা কত দিন। সাগর তরঙ্গের মতো শরণার্থী ঢেউ আছড়ে পড়বে দিনের পর দিন, তাদের বুকে টেনে বাঁচাবে বাংলাদেশ। অত জায়গা কোথায়। অন্নবস্ত্রের সংস্থান হবে কী করে।


রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য তৈরি হয়েছে অস্থায়ী স্কুল।

Advertisement

রোহিঙ্গা শিবিরে জনবিস্ফোরণ। অনিশ্চয়তায় বেপরোয়া শরণার্থীরা বনভূমি দখল করছে। বেদখলের বিশৃঙ্খলা মানা যায় না। উখিয়ার কুতুপালংয়ে জোর করে বনভূতিতে বসত। সরাতে গিয়ে বিপত্তি। ইট-পাটকেল ছুঁড়ে, দা-ছুরি লাটিসোটা নিয়ে বনকর্মীদের আক্রমণ। জখম ৯। তাঁদের এক জায়গায় আটকে রাখা যাচ্ছে না। সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। মূল জনস্রোতে মেশার চেষ্টা করছে। এতে রোহিঙ্গাদের আলাদা করে চিহ্নিত করা কঠিন হয়ে পড়ছে। রোহিঙ্গা শুমারি করতে হিমসিম খাচ্ছে পরিসংখ্যান ব্যুরো। উখিয়ার কুতুপালং আর টেকনফের লেদা ক্যাম্পে দু'লাখ রোহিঙ্গা রয়েছেন। বাকিরা কোথায় ছড়িয়ে পড়েছে তার হদিশ পাওয়া কঠিন।

আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে মালয়েশীয় জাহাজ

ঘোলা জলে মাছ ধরার লোকের অভাব হয় না। অবস্থার সুযোগে এমন চক্র গড়ে উঠেছে যারা টাকা নিয়ে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করছে। বনভূমির গাছ কেটে খুঁটি করে, বাঁশ-পলিথিন দিয়ে গড়া হচ্ছে ঝুপড়ি। পরিবার পিছু তিন হাজার টাকা নিচ্ছে তারা। মাসিক ভাড়া ৩০০ টাকা। কাজটা বন্ধ করতে তৎপর প্রশাসন। অন্যায় ভাবে সুযোগ নেওয়ার কোনও রাস্তাই খোলা থাকবে না। মায়ানমারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিঁড়ে ফেলার দাবিও উঠেছে। সমস্যা বাংলাদেশের নয়, তাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার থেকে মুক্তি দিতে পারে মায়ানমার। দরকার মায়ানমারের ওপর কূটনৈতিক চাপ তৈরি করা। সেটা ইউরোপ, আমেরিকাই পারে। নরওয়ে, ডেনমার্ক, সুইডেন সেটাই করছে। বাকিরাও তাই করুক।

ছবি: রয়টার্স।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন