একুশের ঢাকায় কোনও আবরণ নেই হিজাবের

মন্ত্রী, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, মুক্তিযুদ্ধের কম্যান্ডার ফোরামের পর শহিদ মিনারের নীচে ফুলের স্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা জানালেন ভারত থেকে যাওয়া সাংবাদিকেরা।

Advertisement

অনমিত্র চট্টোপাধ্যায়

ঢাকা শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:৩৯
Share:

শ্রদ্ধা: বুধবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। তার সূচনায় ঢাকার কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিজস্ব চিত্র।

প্রাণের একুশে-কে বরণ করতে মেতেছে বাংলাদেশ। মাতৃভাষার স্বীকৃতির দাবিতে পথে নেমে বাহান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি প্রাণ দিয়েছিলেন যে রফিক, সালাম, বরকত, সফিউর, জব্বরেরা— আজ সেই শহিদদের স্মরণের দিন। শুধু তা-ই নয়, বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলছিলেন, ‘‘বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রদীপটি প্রথম জ্বলে উঠেছিল ভাষা আন্দোলনের চেতনার আগুনে । ব্রিটিশ শাসকদের বিভাজনের বিষ— ধর্মের প্রভাবকেও নস্যাৎ করে দিয়েছিল বাঙালির মুক্তির সেই আকাঙ্ক্ষা। যার অর্জন আজকের এই স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ।’’

Advertisement

মঙ্গলবার রাতে অন্য মন্ত্রীদের সঙ্গে ইনু সাহেবও দাঁড়িয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে একুশের শহিদ মিনারের পাশটিতে। ঘড়ির দুই কাঁটা মিলেমিশে ঠিক মধ্যরাত জানান দেওয়া মাত্র মিনারের পায়ের কাছে ফুলের দু’টি স্তবক রেখে রাষ্ট্রের পক্ষে প্রথম শ্রদ্ধা জানালেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কয়েক মুহূর্তের জন্য তখন নৈঃশব্দ শহিদ মিনার জুড়ে। ক্ষণিক থমকে গিয়েছে ঘোষণা। এক মিনিট পরেই বেজে উঠল সেই গান, আব্দুল গফফার চৌধুরীর বাণী, আলতাফ মামুদের সুরে— ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো...’

মন্ত্রী, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, মুক্তিযুদ্ধের কম্যান্ডার ফোরামের পর শহিদ মিনারের নীচে ফুলের স্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা জানালেন ভারত থেকে যাওয়া সাংবাদিকেরা। এর পরে একে একে নানা রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্ব। তার পরেই বাঁধন গেল ঘুচে। লক্ষ লক্ষ মানুষ খালি পায়ে এগিয়ে চললেন শহিদ মিনারের দিকে। হাতে ফুল, পরনে কালো পাঞ্জাবি বা শাড়ি। কণ্ঠে একুশের উচ্চারণ। বোরখা বা হিজাবধারী এক জন মেয়েও চোখে পড়েনি। অথচ দিনে ঢাকার রাস্তা যেন বোরখা আর হিজাবময়। অধ্যাপক মহম্মদ আরাফতের কথায়, ‘‘এই জন্যই তো একুশে কপালে ভাঁজ ফেলে মৌলবাদীদের।’’

Advertisement

সারা রাত ফুলে ফুলে ঢেকে গেল শহিদ মিনারের সামনের চত্বর। সকাল পর্যন্ত চলেছে মানুষের ঢল। দিনভরও বহু মানুষ যাচ্ছেন। অনেকেই সপরিবার। খুদের দল গম্ভীর মুখে ফুল দিচ্ছে শহিদ মিনারে। বাবা-মায়ের কাছে তারাও যে জেনেছে, কী এই একুশে, কেন একুশে। শুধু ঢাকা নয়, বাংলাদেশের সব শহরেই রয়েছে শহিদ মিনার। সর্বত্র ছবিটা একই।

ফেব্রুয়ারি ভর বইমেলা আজ বিশেষ আয়োজনে একুশে উদযাপন করেছে। সারা দিনে কত যে অনুষ্ঠান। নাট্য অ্যাকাডেমি, মাতৃভাষা অ্যাকাডেমি, চারুকলা পরিষদ— আবেগে উৎসাহে ফুটছেন তরুণেরা। আওয়ামি লিগের তরুণ নেতা সুজিত রায় নন্দী হেসে বললেন, ‘‘ভাষার এই অহঙ্কারটুকুই যে বাংলাদেশের আশার পারানি। মৌলবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের রসদ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন