Bangladesh News

দিন কয়েকের ব্যবধানেই একের পর এক হামলার ঘটনা বাংলাদেশে

মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে ঢাকার বিমানবন্দরের পাশে দু’দফায় আত্মঘাতী হামলা হল। দু’টি ঘটনায় নিহত হল দু’জন। নিহতরা জঙ্গি দলের সদস্য হতে পারে বলে পুলিশের ধারণা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঢাকা শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৭ ০৫:২৬
Share:

ঢাকার বিমানবন্দরে আত্মঘাতী হামলার পর কড়া প্রহরা। ছবি: সংগৃহীত।

মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে ঢাকার বিমানবন্দরের পাশে দু’দফায় আত্মঘাতী হামলা হল। দু’টি ঘটনায় নিহত হল দু’জন। নিহতরা জঙ্গি দলের সদস্য হতে পারে বলে পুলিশের ধারণা।

Advertisement

শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রবেশমুখে পুলিশের চেকপোস্টের পাশে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণে এক জন নিহত হয়। তাৎক্ষণিক ভাবে নিহতের পরিচয় জানা না গেলেও পুলিশ হামলার কথা স্বীকার করে বলেছে, “এ ঘটনার পর বিমানবন্দর-সহ আশপাশের গোটা এলাকা ঘিরে রাখা হয়েছে। হামলাকারী নিহত হয়েছে। তবে এখনও তার পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। হামলাকারী চেকপোস্টের ইন্সপেক্টরের কক্ষে ঢুকতে গেলে, তাকে বাধা দিয়ে বাইরে বের করে দেওয়ার পরেই সে নিজের শরীরে বাঁধা বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়।”

ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার শেখ নাজমুল আলম বলেন, “বিমানবন্দরের সামনে গোলচত্বরে থাকা পুলিশ বক্সের সামনে বোমা বিস্ফোরণে এক জন নিহত হওয়ার খবর পেয়েছি, তার বাইরে আর কেউ হতাহত হননি।”

Advertisement

গত ১৭ মার্চ বিমানবন্দরের অদূরে আশকোনায় র‌্যাবের অস্থায়ী ব্যারাকে আত্মঘাতী বিস্ফোরণে এক জন নিহত হওয়ার পর দেশের সব বিমানবন্দর, নৌ-বন্দর ও কারাগারের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। কিন্তু, এক সপ্তাহের মাথায় গত শুক্রবারের ঘটনাস্থল থেকে মাত্র কয়েকশো মিটার দূরে বিমানবন্দর এলাকায় ফের একই ঘটনা ঘটাল দুস্কৃতীরা।

ঢাকা পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান জানান, বিমানবন্দরের পাশে প্রধান সড়কে এক ব্যক্তি বোমা বিস্ফোরণে নিহত হয়েছে। তার সঙ্গে একটি ট্র্যাভেল ব্যাগ ছিল বলেও তিনি জানান। পুলিশের ধারণা, ওই ব্যক্তি নিজেই বোমা বয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। বিস্ফোরণের সময় ওই এলাকার কাছেই থাকা এক ব্যক্তি জানান, তিনি বিস্ফোরণের শব্দ শুনে দৌড়ে কিছুটা দূরে সরে যান। এবং পরে দেখতে পান, পুলিশ ও র‌্যাব ওই গোলত্বর এলাকায় জড়ো হয়ে দ্রুত জায়গাটি ঘিরে তল্লাশি শুরু করেছে। কিছু ক্ষণ পর পুলিশের কয়েক জন সদস্য কাপড় দিয়ে ঘটনাস্থল ঘিরে ফেলেন। অপর এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, নিহত ব্যক্তির বয়স আনুমানিক ২০ থেকে ২৫ বছর। নিহত যুবকের কোমরের কাছে পেটের ডান দিক বিস্ফোরণে উড়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ঢাকার পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া রাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর সাংবাদিকদের বলেন, “পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।” তার দাবি, “এটি কোনও হামলা নয়। ওই ব্যক্তি নিজে বোমা বহন করেছিল। সুতরাং এতে আতঙ্কিত হওয়া কিছু নেই। আমি সবাইকে আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য অনুরোধ করছি। নিহত ব্যক্তি কেন বোমা বহন করছিল, কোথায় নিয়ে যাচ্ছিল, অনুসন্ধানের পর তা জানা যাবে।” বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সহকারী কমিশনার তানজিলা আক্তার বলেন, ‘শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ বিমানবন্দরের গোলচত্বর এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সামনে এক যুবক আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটায়। ঘটনাস্থলেই সে মারা যায়। তিনি আরও জানান, ওই হামলার পর পরই বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বিমানবন্দর এলাকায় এপিবিএনের অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

এ দিন সন্ধ্যায় সিলেটে জঙ্গিদের একটি ডেরায় অভিযান শুরু করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। পুলিশ, র‌্যাবের সঙ্গে সেনা সদস্যরাও এ অভিযানে অংশ নেন। স্থানীয় পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার রাত থেকেই জঙ্গিদের এ ডেরাটি তারা ঘেরাও করে ফেলে। এর পর ভিতরে থাকা জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানালেও তাতে সাড়া মেলেনি। বরং বিকট শব্দে বোমা ফাটিয়ে পুলিশকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয় জঙ্গিরা। পুলিশ জানায়, তিন মাস আগে কাওসার আহমেদ ও মর্জিনা নামে দম্পতি 'আছিয়া ভিলা' নামে বাড়ির দোতলায় একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেয়। এরাই জঙ্গি কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত বলে সন্দেহ করছে পুলিশ। কোন প্রাণহানি না ঘটিয়ে তাদের আটকের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানায় তারা।

রাত পৌনে ৮টা নাগাদ জঙ্গি আস্তানা ‘আতিয়া মহল’-এ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চলমান অভিযানে যোগ দেন মেজর রোকন ও মেজর রাব্বীর নেতৃত্বাধীন সেনাবাহিনীর প্যারা-কমান্ডো ব্যাটালিয়ানের সদস্যরা। এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার গোলাম কিবরিয়া বলেন, “সেনাবাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে। তার পর ভিতরে কী পরিমাণ গোলাবারুদ বা কত জন জঙ্গি আছে সে ব্যাপারে জানাতে পারবেন তাঁরা। তবে বর্তমান পরিস্থিতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনুকূলে বলে দাবি করেন তিনি।

গত বছরের জুলাই মাসে গুলশনের হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁ ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একের পর এক জঙ্গি বিরোধী অভিযানে শীর্ষ জঙ্গি নেতা তামিম চৌধুরি-সহ বেশ কয়েক জন নিহত হন। এর পর বেশ কিছু দিন পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও এ বছর মার্চের শুরু থেকে ফের জঙ্গিরা নতুন করে তাদের তৎপরতার জানান দিতে শুরু করে।

আরও পড়ুন

ঢাকা বিমানবন্দরে সামনে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ, হামলাকারী নিহত

একের পর এক জঙ্গি বিরোধী অভিযান ও জঙ্গিদের আত্মঘাতী হওয়ার ঘটনায় জনমানসে আতঙ্ক দেখা দেয়। গত ৬ মার্চ হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নান ও তার সহযোগীদের আদালত থেকে কাশিমপুর কারাগারে ফিরিয়ে নেওয়ার পথে প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে তাদের ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হয়। পরের দিন ৭ মার্চ কুমিল্লায় একটি বাসে তল্লাশির সময় পুলিশের দিকে বোমা ছোড়ার পর ধরা পড়ে ‘নব্য জেএমবি’-র দুই জঙ্গি। তাদের মধ্যে এক জনকে সঙ্গে নিয়ে ওই রাতে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে অস্ত্র ও বোমা উদ্ধার করে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট।

গত ১৫ মার্চ সীতাকুণ্ড পৌর এলাকার আমিরাবাদের এক বাড়ি থেকে বিস্ফোরক-সহ এক জঙ্গি দম্পতিকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রেমতলা এলাকায় আর এক বাড়িতে অভিযানে যায় পুলিশ। পরের দিন প্রেমতলার ওই বাড়িতে শুরু হয় ‘অপারেশন অ্যাসল্ট সিক্সটিন’। আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ও গুলিতে এক নারী-সহ চার জঙ্গি নিহত হয়। এ ছাড়া, ওই বাড়ির ভিতরে বোমায় ক্ষতবিক্ষত এক শিশুর লাশও পাওয়া যায়। ওই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই পর দিন, ১৭ মার্চ শুক্রবার দুপুরে জুমার নমাজের সময় আশকোনায় র‌্যাবের একটি ব্যারাকে ঢুকে পড়ার পর শরীরে বাঁধা বোমার বিস্ফোরণে নিহত হয় সন্দেহভাজন এক জঙ্গি। পর দিন, ১৮ মার্চ এক মোটরসাইকেল আরোহী ভোর সাড়ে ৪টা নাগাদ খিলগাঁওয়ের ‘শেখের জায়গা’ মোড়ের কাছে চেক পোস্টে ঢুকে পড়ে। সে সময় র‌্যাব সদস্যদের গুলিতে নিহত হয় এক জন। র‌্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, ওই হামলাকারীর দেহে বিস্ফোরক বাঁধা ছিল। ২০ মার্চ চট্টগ্রাম নগরীর আকবর শাহ থানা এলাকায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে দু’টি বাড়িতে তল্লাশি চালায় পুলিশ। তবে সেখানে সন্দেহজনক কিছু পাওয়া যায়নি।

ওই ঘটনার চার দিন পর এ দিন ভোরে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি এলাকায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে একটি বাড়ি ঘিরে ফেলে পুলিশ। ওই জঙ্গি আস্তানায় চূড়ান্ত অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছিল বিশেষ বাহিনী সোয়াট ও পুলিশের বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল। ঠিক সে সময়ই ঢাকায় বিমানবন্দরের গোল চত্বরের কাছে পুলিশ চেকপোষ্টের সামনে এ আত্মঘাতী হামলার ঘটনা ঘটল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন