Bangladesh News

সন্ত্রাসে হাতেখড়ি থেকে কীভাবে দীপন খুন, নিজেই জানাল ঘাতক শামিম

প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপনকে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিল ধৃত মইনুল হাসান শামিম ওরফে সিফাত ওরফে ইমরান। ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে গত সোমবার তার জবানবন্দি নেওয়া হয়। কীভাবে সন্ত্রাসবাদী কাজে জড়িয়ে পড়ল সে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৬ ১০:০৯
Share:

প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপনকে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিল ধৃত মইনুল হাসান শামিম ওরফে সিফাত ওরফে ইমরান। ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে গত সোমবার তার জবানবন্দি নেওয়া হয়। কীভাবে সন্ত্রাসবাদী কাজে জড়িয়ে পড়ল সে। কীভাবে খুন করল দীপনকে। নিজেই দিয়েছে তার রোমহর্ষক বর্ণনা।

Advertisement

জবানবন্দির শুরুতেই শামিম নিজেকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্য বলে স্বীকার করে নেয়। শামিম জানায়, শ্রীহট্ট জেলায় তাঁর জঙ্গিবাদের হাতেখড়ি। ২০১০ সালে এক কোচিং সেন্টারে ইংরেজি শিখতে গিয়ে উগ্রপন্থী সংগঠন হিজবুত তাহরিরের সঙ্গে তার প্রথম যোগাযোগ। শামিম জানায়, রাফি নামে কোচিং সেন্টারের এক ‘বড় ভাইয়ের’ অনুপ্রেরণায় সে ওই বছরই হিজবুত তাহরিরের সদস্য হয়।

এর পর ২০১৪ সালে ওই ‘বড় ভাই’ই শামিমকে ‘জিহাদে’ যেতে আহ্বান জানায়। পরের পর্যায়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত ওই সংগঠনের বিভিন্ন নেতার সঙ্গে পরিচয় হতে থাকে শামিমের। এক পর্যায়ে পৌঁছে প্রশিক্ষণের জন্য তাকে গাজিপুরের আশকোনার একটি মেসে নিয়ে আসা হয়। সেখানে তার মতো আরও অনেকেই ছিল, যাদের জিহাদের বই পড়িয়ে উদ্দীপ্ত করে পিস্তল ও চাপাতির মতো অস্ত্রে প্রশিক্ষণ দেওয়া হত। শেখানো হত পিস্তল ও চাপাতি দিয়ে মানুষ খুনের নানা কৌশল।

Advertisement

জঙ্গি শামিম জানিয়েছে, তার প্রথম শিকার ছিলেন সাভারের ব্লগার রিয়াদ মোর্শেদ বাবু। ২০১৪ সালের শেষ দিকে সাভারে শান্তা মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ব্লগার রিয়াদ মোর্শেদ হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নিয়েছিল সে। গান শেখানোর কথা বলে ওই সংস্কৃতি কর্মীকে ডেকে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

ব্লগার বাবুকে হত্যার পর শামিম বাড়ি ফিরে যায়। সেখানে কিছু দিন কাটানোর পর তাকে শাহবাগে আজিজ সুপার মার্কেটে প্রকাশক দীপন ও লালমাটিয়ার শুদ্ধস্বরের প্রকাশক টুটুলকে হত্যার দায়িত্ব দেওয়া হয়।

এর পর আবার ঢাকায় ফিরে মেস জীবন। সেখানে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি চলত মগজ ধোলাইয়ের কাজও। এখানেই সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা জিয়া তাদের দুই প্রকাশক দীপন-টুটুলের ছবি এবং আজিজ সুপার মার্কেট ও আশপাশ এলাকার ম্যাপ দেখাত। দীপন কোন দিক দিয়ে আসবেন, কোথায় গাড়ি রেখে নামবেন এবং কোন পথে অফিসে যাবেন, এ সব ম্যাপ প্রশিক্ষকরা দেখাত এবং শেখানো হত কীভাবে দীপনকে হত্যা করতে হবে।

শামিম জানায়, দীপনকে হত্যা করার আগের সাত দিনের মধ্যে দু’দিন আজিজ সুপার মার্কেটে গিয়ে ঘটনাস্থল ও আশপাশের এলাকা দেখে আসে সে। এর পর সেলিম নামে এক ‘বড়ভাই’ প্রকাশক দীপনকে হত্যার জন্য তাদের পাঁচটি চাপাতি এবং পিস্তল ও গুলি দেয়।

গত ৩১ অক্টোবর আসাদ, আকাশ, আলম, তৈয়ব ও জনি প্রকাশক দীপনকে হত্যা করার জন্য আজিজ সুপার মার্কেটে যায়। বিকেল ৪টের সময় চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে দীপনকে হত্যা করা হয়। হত্যার পর প্রটেক্টেড টেক্সটে ম্যাসেজের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের খবর জানিয়ে দেয় শামিম।

একই দিনে টঙ্গির বর্ণমালা রোডের একটি মেস থেকে শরিফুল, সুজন, শিহাব, রাফি-সহ কয়েকজন লালমাটিয়ার শুদ্ধস্বরের প্রকাশক টুটুলকে হত্যা করতে যায়। সেখানে তারা খুন করতে ব্যর্থ হলেও টুটুল-সহ আরও দু’জন মারাত্মক জখম হন।

এর পর চলতি বছরের শুরুতে আর এক ‘বড় ভাই’ এর নির্দেশে আরেকটি মেসে বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ নেয় শামিম। ঢাকার উত্তর বাড্ডার সাঁতারকুলের ওই মেসটিতে শামিম এবার প্রশিক্ষণও দিতে শুরু করে। গত ২৩ আগস্ট সন্ধ্যায় টঙ্গির চেরাগ আলি মার্কেটের সামনে থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

শামিম জানান, প্রতিটা হত্যাকাণ্ডের আগে যতগুলো মেসে সে থেকেছে, সব জায়গাতেই এসেছে তাদের নেতা এবং ‘বড়ভাই’। যাকে সাগর বা মেজর জিয়া বলে চিনত অন্যরা। এই মেজর জিয়া সেনাবাহিনীতে চাকরি করত বলে প্রায়ই উল্লেখ করত। শামিম আরও জানায়, মেজর জিয়ার অন্যতম সহযোগী ছিল সেলিম ওরফে হাদি।

গত বছর ৩১ অক্টোবর বিকেলে শাহবাগে আজিজ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলায় জাগৃতি প্রকাশনীর কার্যালয়ে দীপনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ওই প্রকাশনা থেকে জঙ্গি হামলায় নিহত বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায়ের ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ বইটি প্রকাশ করা হয়েছিল। সে দিনই অভিজিতের বইয়ের আরেক প্রকাশনা সংস্থা শুদ্ধস্বরের কার্যালয়ে ঢুকে এর কর্ণধার আহমেদুর রশীদ চৌধুরী টুটুলসহ তিনজনকে কুপিয়ে আহত করে সন্ত্রাসীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন