আওয়ামি লিগের ২০তম সম্মেলন
আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ দেশের তালিকায় নিয়ে যেতেই হবে। দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি সেই লক্ষ্যেই কাজ করার আহ্বান জানালেন আওয়ামি লিগ সভানেত্রী ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে শনিবার আওয়ামি লিগের ২০তম সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন হাসিনা। সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়তে বর্তমান সরকারের উন্নয়ন পদক্ষেপগুলো তুলে ধরে দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে আওয়ামি লিগ নেতা-কর্মীদের ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান তিনি।
একই সঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশের মাটি সন্ত্রাসবাদে, জঙ্গিবাদে ব্যবহার হবে না। এ দেশের ভূখণ্ড সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং প্রতিবেশী দেশের কোনও ক্ষতিতে ব্যবহার করতে দেবো না। সেতুবন্ধনের আর শান্তিপূর্ণ দেশ হবে আমাদের।”
শনিবার দুপুর ১টার কিছু পরে শেখ হাসিনা সম্মেলনে ভাষণ শুরু করেন। শুরুতেই উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানান। দলীয় নেতা-কর্মী ছাড়াও অনুষ্ঠানে আসা অন্য দলগুলোর অতিথি এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দলের প্রতিনিধিদের ধন্যবাদ জানান। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, একাত্তরেরর মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
পচাত্তরের ১৫ আগস্ট ঘাতকের হাতে নিহত পরিবারের সকলের কথা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশ যখন স্বনির্ভরতা অর্জনের দিকে যাচ্ছিল, তখনই সেই ভয়াবহ হামলা হয়। ওই দিন আমার পরিবারের ১৮ সদস্য নিহত হয়েছে। এ ভাবে বেঁচে থাকা যে কী কষ্টের, তা যাদের স্বজন হারিয়েছে, শুধু তারাই বুঝতে পারে।”
শেখ হাসিনা বলেন, “আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশে দারিদ্র বলে কিছু থাকবে না। শূন্যের কোটায় নামাবো। প্রতিটি মানুষ সুশিক্ষায় শিক্ষিত হবে। কারিগরি শিক্ষা পাবে। পুষ্টিহীনতা দূর হবে। এছাড়া মাতৃত্বকালীন ভাতা দিচ্ছি। সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হবে সবাই, ব্যবস্থা করা হবে পানযোগ্য জলের। আওয়ামি লিগ জনগণের দল। জনগণের দায়িত্ব আমাদের।”
দেশের দরিদ্র মানুষের তালিকা তৈরি করতে এলাকার নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “নিজ নিজ এলাকায় কতজন দরিদ্র, গৃহহারা, ঘর হারা, নিঃস্ব, হতদরিদ্র, বয়োবৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী আছেন তার তালিকা তৈরি করুন। আমরা বিনা পয়সায় ঘর তৈরি করে দেব।”
বাংলাদেশে নারীদের অধিকার সমান উল্লেখ করে তিনি বলেন, “কর্মক্ষেত্রে নারীদের সমান অধিকার। উচ্চ পর্যায়ে সব জায়গায় নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়েছে। বিশ্বে একমাত্র দেশ আমরা, যাদের সংসদে নেতৃত্বে চারজন নারী।”
শেখ হাসিনা আরও বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনে নিজেদের অর্থায়নে চার্জ ফান্ড গঠন, আইন সংশোধন হয়েছে। আমাদের গৃহীত পদক্ষেপে বনায়ন ৭ থেকে ১৩ ভাগ হয়েছে।” তিনি বলেছেন, “আমরা জনগণের জন্য রাজনীতি করি। দারিদ্রের হার ইতিমধ্যে ২২.৪ ভাগে নামিয়ে এনেছি। এই হার শূন্যের কোটায় নামাবো। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ দারিদ্রমুক্ত হবে, পুষ্টির অভাব দূর হবে। দারিদ্র বলে এ দেশে কিছু থাকবে না। আমরা শিক্ষার হার বাড়াবো। সুপেয় পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা উন্নতি করবো। তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন জাতি গঠন করবো। কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের কোনও বৈষম্য থাকবে না। ঘরে-ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হবে। প্রতি ঘরে আলো জ্বলবে। কর্মসংস্থানের জন্য সুনির্দিষ্ট অঞ্চলে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হবে।”
শনিবার সকাল ১০টা নাগাদ আওয়ামি লিগের ২০তম সম্মেলন শুরু হয়। জাতীয় সংগীত ও দলীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে শান্তির প্রতীক পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে নেতৃবৃন্দ ও বিদেশি অতিথিরা বক্তব্য দেন।
সম্মেলন উপলক্ষে পুরো নগরীতে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা। রং–বেরঙের ব্যানার ও ফেস্টুনে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে রাজধানী ঢাকা জুড়ে।
আরও পড়ুন- রোজগার্ডেন থেকে সোহরাওয়ার্দি উদ্যান, আওয়ামি লিগের পথ চলার ইতিহাস
আরও পড়ুন- পুজোয় রোদে ঘুরে ট্যান? তুলবেন কী ভাবে জেনে নিন