পানি পেলাম না, আক্ষেপ হাসিনার

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভারতের এক দল সাংবাদিককে নিজের বাড়িতে আপ্যায়নের সময়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বললেন, ‘‘যখন প্রশ্ন তুললাম— তিস্তার পানির কী হল, (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) বললেন, বিদ্যুৎ নিন।

Advertisement

অনমিত্র চট্টোপাধ্যায়

ঢাকা শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:৪৩
Share:

মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতার জন্য তিনি ভারতের কাছে কৃতজ্ঞ। দেশ গঠনেও বন্ধুর মতো পাশে থেকেছে ভারত। তবে নির্বাচনের মুখে তাঁর শুধু একটাই দুঃখ রয়েছে— ভারতের সাংবাদিকদের নিজের বাড়িতে আপ্যায়নের সময়ে নিজেই মুখ ফুটে তা জানালেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

Advertisement

হাসিনা বলেন, ‘‘শুধু একটাই দুঃখ, দিদিমণি পানি (জল) দেন না। যখন প্রশ্ন তুললাম— তিস্তার পানির কী হল, বললেন বিদ্যুৎ নিন। বললাম— আচ্ছা তাই দিন। যা পাওয়া যায় আর কী!’’ বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গে ঢোকা আত্রেয়ী ও চুর্ণীর জল নিয়ে ওঠা অভিযোগ নস্যাৎ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘এ সবই তিস্তার পানি না-দেওয়ার অজুহাত!’’

তবে আশা ছাড়ছেন না ‘বঙ্গবন্ধুর কন্যা’। জনিয়েছেন, ‘‘আবার এটা ঠিক, উনি বলেননি দেবেন না। আমরা আশা করছি দেবেন।’’ আর সেই আশাকে পুঁজি করেই তিস্তার শাখা নদীগুলিকে ড্রেজিং করে তৈরি রাখছে বাংলাদেশ। যাতে জল এলে দেরি না-করে তা ব্যবহার করা যায়।

Advertisement

যদিও ভারতীয় হাই-কমিশন সূত্রে বলা হচ্ছে, তিস্তা চুক্তিই দু’দেশের সম্পর্কের শেষ কথা নয়। তিস্তা নিয়ে জটিলতা একটা বাস্তবতা। কিন্তু অন্য দিকগুলিতে সহযোগিতার সম্পর্ক সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছেছে। ভারতীয় হাই-কমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলার কথায়, পারস্পরিক যোগাযোগ বাড়ানো ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার সরকার দিল্লির সঙ্গে যে সহযোগিতা করেছে, কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শেষ করা যাবে না। হাসিনা নিজেও বলেন, ‘‘ঢাকা-কলকাতা বাস, মৈত্রী আর বন্ধন ট্রেন হয়েছে। ট্রানজিট দিয়েছি। চট্টগ্রাম আর মংলা বন্দর ব্যবহার করতে দিয়েছি। কোনও বিষয়ে আমরা কার্পণ্য করিনি।’’ বলেন, ‘‘বাংলাদেশে চিনের বিনিয়োগ নিয়ে ভারতের উদ্বেগের কোনও কারণ নেই। বাংলাদেশের কাছ ভারত ভারতের জায়গাতেই থাকবে, চিন চিনের জায়গায়। ভারতের বন্ধুত্ব সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। চিন তো নতুন বন্ধু।’’

আওয়ামি লিগের সভানেত্রী হাসিনা আক্ষেপ করে বলেন— ‘‘শুধু এক বার, ২০০১-এর নির্বাচনে আমরা ভারতের সহযোগিতা পাইনি। তারা যাদের সহযোগিতা করেছিল, তারা কিছুই দেয়নি। কত ১০ ট্রাক অস্ত্র তারা পাঠিয়েছে, তারাই জানে!’’ আর তিনি ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বাংলাদেশের মাটিছাড়া করেছেন।

বাংলাদেশের একটি ‘থিঙ্ক ট্যাঙ্ক’-এর আয়োজনে দু’দেশের সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যেতে মত বিনিময়ের একটি অনুষ্ঠানে এক দল ভারতীয় সাংবাদিক এখন ঢাকায়। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাঁদের নিজের বাসভবনে আপ্যায়ন করে হাসিনা বলেন, ‘‘আমি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আপনাদের ডাকিনি। প্রধানমন্ত্রী তো আজ আছি, কাল না-ও থাকতে পারি। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে ভারতের মানুষকে আমি প্রাণের বন্ধু বলে মনে করি।’’ মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সাংবাদিকদের অবদানকেও তিনি স্মরণ করেন।

আরও পড়ুন: একুশের ঢাকায় কোনও আবরণ নেই হিজাবের

রোহিঙ্গা সমস্যা নিরসনে ভারতের ভূমিকায় তাঁর কোনও ক্ষোভ রয়েছে কি না প্রশ্ন করা হলে হাসিনা বলেন, ‘‘আমরা চেয়েছি শরণার্থী ফেরাতে দিল্লি মায়ানমারকে চাপ দিক, তাতে কাজ হবে।’’ মায়ানমারের সীমান্তবর্তী দেশ ভারত, তাইল্যান্ড, চিন ও লাওস যাতে এ ব্যাপারে একসঙ্গে সু চি প্রশাসনকে চাপে রাখে, সে জন্য বিদেশ মন্ত্রককে তৎপর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

বিরোধী বিএনপি নির্বাচনে আসবে কি না, প্রশ্নের জবাবে হাসিনা বলেন— ‘‘দেশে দলের অভাব নেই। তারা না-এলেও ভোট ঠিকই হবে।’’ কে তাঁর উত্তরাধিকারী হবেন, প্রশ্নের জবাবে হাসিনার মন্তব্য— সেটা দল ঠিক করবে, মানুষ ঠিক করবেন। পরিবারতন্ত্র তিনি পছন্দ করেন না।

এ দিন তাঁর হাসিখুশি মেজাজের কারণ কী, সাংবাদিকরা জানতে চাইলে হাসিনা বলেন— ‘‘ভয়ে মুখ শুকিয়ে থাকি না আমি। ১৯ বার আক্রান্ত হয়েছি। সময় যখন আসবে মরতে হবেই।’’ তার পরে হেসে আবৃত্তি করেন, ‘‘জাহান্নমের আগুনে বসিয়া হাসি পুষ্পের হাসি!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন